নতুন বেতন কাঠামোতে কারো সুযোগ কমবে না: অর্থমন্ত্রী

0
1140
টাফ রিপোর্টার :   নতুন বেতন কাঠামোতে কারো সুযোগ কমবে না জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘যদি আরো ভাল কিছু করা যায় সেটা করাই আমাদের উদ্দেশ্যে।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ে রবিবার বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী এ কমিটির আহ্বায়ক।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ক্যাডারের লোকজন যারা দীর্ঘদিন একটি স্কেল পেয়ে আসছেন তাদের সুযোগ কমানোর কোনো উদ্দেশ্য নেই। কমিশনের রিপোর্ট কিংবা মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তেও সে উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা যে নির্দেশনামা (নতুন বেতন কাঠামোর গেজেট) করছি তার মধ্যেও এটা (সুবিধা কমানোর উদ্দেশ্য) নেই।’

কিছু কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে নতুন বেতন কাঠামোর গেজেটের খসড়া চূড়ান্ত করতে আরো দু-তিন দিন লেগে যাবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি এ সপ্তাহে নতুন বেতন কাঠামোর নির্দেশনা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের পর এটা প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রিসভার অনুমোদন লাগবে। আমি প্র্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা সব সময় চালিয়ে যাচ্ছি।’

‘সেখান থেকেও নির্দেশনা এসেছে কারো সুযোগ কমানো যাবে না। যা যা ছিল সেটা প্রটেক্ট (রক্ষা) করে যদি আরো কিছু ভাল করা যায়, সেটা করাই আমাদের উদ্দেশ্য’ বলেন তিনি।

‘আমাদের সকলের অভিমত, যে সব বিষয় উঠেছে আমরা সেগুলোর পজিটিভ সমাধান চাই। পজিটিভের বাংলা ইতিবাচক। এ জন্য পজিটিভ শব্দটা ব্যবহার করলাম।’

খানিকটা রসিকতা করে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কালকে যে পেয়ে যাবেন সেটা আশা করবেন না। আরো দু-তিন দিন লাগবে। আজ যে সব হজম করলাম; ঠিক হজম না খেলাম, এটা হজম করতে হবে। হজম করে যে রিফর্মসের কথা বলেছি, সেগুলোকে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে।’

আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘এখানে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস শিক্ষকরা অনেক অভিযোগ করেছেন। তাদের একটা ধারণা হয়েছে, তাদের অপারচুনিটি বোধ হয় রেস্ট্রিকটেড হয়ে গেল। যদি এটা ঠিক নয়। যেহেতু টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নেই। তারা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড ফলো করেই উপরে উঠেন।’

‘আমরা টাইম স্কেল বাদ দিয়ে দিয়েছি। আমরা যেটা পছন্দ করব, ঠিক টাইম স্কেল আনব না। সেখানে দিয়ে দেব এই গ্রেডে যখন এত বছর চাকরি হবে তখন যাতে আপনি পরবর্তী গ্রেডে অটোমেটিক্যালি উঠতে পারেন। সেই ব্যবস্থা আমরা যে রিফর্ম (নতুন বেতন কাঠামো) করছি সেখানে এটা আছে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে দুটি প্রভিশন আছে, ১০ বছর কেউ যদি কোনো গ্রেডে থাকে, সে ১১তম বছরে পরবর্তী গ্রেডে যাবেন। সেখানে যদি আরো ছয় বছর থাকেন সে পরবর্তী গ্রেডে যাবেন। এটা অটোমেটিক করে দেওয়া হয়েছে। এটাই হচ্ছে সকলের জন্য সুযোগ বৃদ্ধির শ্রেষ্ঠ উপায়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ আমরা পাচ্ছি। তার মধ্যে বিশেষ করে রয়েছে প্রকৃচি (প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকদের সংগঠন), বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, ২৬ ক্যাডার সমিতি, বিসিএস শিক্ষক সমিতি। তারা বেতন-ভাতা সম্পর্কে অনেক আপত্তি-টাপত্তি তুলেছেন, অনেক দাবি-দাওয়া পেশ করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন।’

‘ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর আমরা যে নির্দেশনামা তৈরি করছি যেটা জারি হবে। এটা জারি হওয়ার পর নতুন যে সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো ইফেকটিভ (কার্যকর) হবে। এর আগ পর্যন্ত যা কিছু হচ্ছে সবই, আগের নিয়মে হচ্ছে। সেখানে আমরা কোনো বিধি-নিষেধ দেইনি। আমরা নিশ্চিত করছি আমাদেরটা (অষ্টম বেতন কাঠামোর গেজেট) যে দিন জারি হবে, সেদিন থেকেই এটা কার্যকর হবে। এর আগে যে সব হয়ে গেছে পুরনো আইন অনুযায়ী, এর কোনো কিছুই আমরা নাকচ করছি না। সাম হাউ এ্যাডজাস্ট ইট, একটা সমন্বয় করে নেব’ মন্ত্রী যোগ করেন।

‘আমরা মনে করি এখন যে স্কেল দিচ্ছি সেটা অত্যন্ত ভাল একটি স্কেল। এ স্কেলের মধ্যে প্রত্যেকে সুখে-শান্তিতে নিজের জীবন নির্বাহ করতে পারবেন।’

বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ বলেন, ‘আমি সবাইকে নিশ্চিত করতে চাই, সকলের জন্য সুযোগ থাকতে হবে। দিস ইজ দ্য বেসিক প্রিন্সিপ্যাল অব দ্য রিফর্ম সেট দ্যাটস উই আন্ডারটেকেন। প্রত্যেক ক্যাডারের কর্মকর্তারা গ্রেড-১ এ যায়। ২০১৩ সালে এটা প্রধানমন্ত্রী করে দিয়েছেন। আগে ৬ বা ৭ ক্যাডারের কর্মকর্তারা গ্রেড-১ যেত। বাকিদের বেশির ভাগই গ্রেড-২ তে গিয়ে শেষ হত।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্তের বেসিসটা হচ্ছে গ্রেড-৩, গ্রেড-২, গ্রেড-১ এ প্রত্যেক ক্যাডারের লোক যাতে যেতে পারে সেই সুযোগ করে দেওয়া।’

মুহিত বলেন, ‘অনেকে আছেন যারা কোনো দিন গ্রেড-১ এ পৌঁছাবে না। প্রাথমিক শিক্ষকদের ধরুন, পৌনে তিন লাখ প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন। তাদের প্রধান শিক্ষক প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। তারা সবাই কিছু তৃতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা। তাদের বেতন বৈষম্যের অনেক কিছু আছে। তাদের আমরা খেয়ালে রেখেছি। এ ধরনের বেতন বৈষম্য আমরা রাখতে চাই না।’

গত ৭ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামোর অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। নতুন বেতন কাঠামোতে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিল করে প্রতি বছর বেতন বৃদ্ধির নতুন পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হয়েছে।

টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের কথা শোনার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলের শিক্ষক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বহাল রাখার দাবিতে আন্দোলনে নামে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের জন্য বেতন কমিশন গঠনের দাবি তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, নতুন বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে এবং বিশেষ গ্রেড সৃষ্টি করে বেতন-ভাতার দিক থেকে শিক্ষকদের চার ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে শিক্ষকদের মর্যাদা নিচে নামবে।

স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ণ না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামো পুনর্নির্ধারণ করে সিনিয়র অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা গ্রেড-১, অধ্যাপকদের গ্রেড-২, সহযোগী অধ্যাপকদের গ্রেড-৩, সহকারী অধ্যাপকদের গ্রেড-৫ ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো সপ্তম গ্রেডে নির্ধারণেরও দাবি জানিয়ে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

অক্টোবর মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। গত শুক্রবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রবিবার পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতি সর্মসূচি স্থগিত করেছে ফেডারেশন।

গত ১৫ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীকে আহ্বায়ক করে বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কমিটিতে শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এবং অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

এ কমিটিকে জাতীয় বেতন স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনিষ্পন্ন কেইসসমূহ পর্যালোচনা ও বেতন স্কেলে অভিযোগের বিষয়ে প্রাপ্ত অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে। অর্থ বিভাগ এই কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে।

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three + 6 =