সাভার মডেল থানা থেকে আসামী উধাও !

0
876

স্টাফ রিপোর্টারঃ
সাভার মডেল থানা থেকে উধাও হয়ে গেছে গত ১৬/ ০৯/ ২০১৬ইং তারিখে চিকিৎসার নামে বর্বর মধ্যযুগীয় পন্থায় যৌন নির্যাতন করা সেই ভন্ড কবিরাজ মোঃ তৌহিদুল ইসলাম। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে প্রথমে নির্যাতিত পরিবার ঘটনাটি চেপে রাখলেও পরবর্তীতে ঐ গৃহবধুর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠলে গত ২০/০৯/২০১৬ইং তারিখে চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। আর তখনি ঘটে বিস্ফোরণ। সবার সামনে দৃশ্যায়িত হয় ভন্ড কবিরাজ মোঃ তৌহিদুল ইসলামের চিকিৎসার নামে মধ্যযুগীয় পন্থায় গৃহবধু নির্যাতনের ঘটনাটি। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে নড়ে চড়ে বসে সাভার মডেল থানা। ঐদিনই গত ২০/০৯/২০১৬ইং তারিখে সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলামের নের্তৃত্বে পুলিশ ব্যাংক কলোনি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঐ ভন্ড কবিরাজ তৌহিদুল ইসলামকে। তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেফতারের পরে অসহায় নির্যাতিত ঐ গৃহবধু ও তার পরিবারের মনে আশার সঞ্চার হয়, আইন সহমর্মিতা নিয়ে নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে, সাহস পায় নির্যাতিতা ও তার পরিবার।
একের পর এক সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে তুলে ধরে তার সাথে ঘটে যাওয়া বিভৎস এই নির্যাতনের কাহিনী। সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে ঐ নির্যাতিতা গৃহবধুর কান্নাজড়িত কন্ঠে শেষ কথাটি ছিল, “আমি ঐ নরপশুর বিচার চাই, যাতে করে আমার মত আর কোন নারীকে এমন নির্যাতনের শিকার না হতে হয়।’’ কিন্তু দুর্ভাগ্য নির্যাতিত ঐ গৃহবধু ও তার পরিবারের আশার প্রদীপ আর জ্বলেনি। সময়ের সাথে ঘটনাটি প্রবাহিত হতে থাকে ভিন্ন পথে। শুরু হয় সাভার মডেল থানা পুলিশের নাটকীয়তা। লিখিত অভিযোগ নিয়ে বারবার থানা হতে নির্যাতিতার পরিবারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। গ্রহন করা হয়নি নির্যাতিতার অভিযোগ। নির্যাতিতা ঐ গৃহবধুর অভিযোগ গ্রহন না করায় সকলের মনে সন্দেহের জাল সৃষ্টি হয়। গ্রেফতারকৃত ঐ চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের  বিরুদ্ধে দাপ্তরিকভাবে কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে বা হবে তা জানার জন্য সাভার মডেল থানার ঐ উপপরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করতে অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক থানায় যায়। কিন্তু থানায় তার সাক্ষাত না মেলায় তার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম অপরাধ বিচিত্রাকে জানায়,’’ আমরা অভিযুক্ত চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছি। রাতে সিনিয়র অফিসার সিদ্ধান্ত দিলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ এরপর ঐ নির্যাতিতার পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্যাতিতার পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেলে সাভার মডেল থানার ঐ উপ-পরিদর্শক আনোয়ারুল ইসলাম নির্যাতিতার স্বামীকে গালাগাল দেন এবং এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি প্রদান করেন। চলতে থাকে নাটকীয়তা, ধীরে ধীরে অজ্ঞাত কারণে নির্যাতিতার কাছ থেকে পাশ কাটিয়ে যায় সবাই। পরদিন ২১/০৯/২০১৬ইং তারিখে খবর আসে থানা হতে মুক্তি পেয়েছে ঐ কবিরাজ। নির্যাতিত  ঐ গৃহবধু ও তার অসহায় পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা ঐ গৃহবধুর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। অর্থাভাবে আর অন্যত্র না গিয়ে নির্যাতিতা ফিরে যায় তার নিজ বাসায়। নির্যাতিতা ঐ গৃহবধুর বর্তমান পরিস্থিতি জানতে অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক ছুটে যায় ঐ গৃহবধুর বাসায়। সেখানে গিয়ে নির্যাতিতা ঐ গৃহবধুর করুণ আর্তনাদ আর বাঁধভাঙ্গা কান্নায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি স্বয়ং অপরাধ বিচিত্রার সাংবাদিক। কেউ নেই অসহায় ঐ নির্যাতিতা গৃহবধু ও তার পরিবারের পাশে । নির্যাতিতা গৃহবধুর তখন একটাই প্রশ্ন, ’’  কি অপরাধ আমার, কেন পুলিশ আমার অভিযোগ না নিয়ে ঐ ভন্ড চিকিৎসককে ছেড়ে দিল? কেন উল্টো আমার স্বামীকেই পুলিশ গালাগাল ও হুমকি দিল?’’ অসহায় ঐ নারীর কান্না কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না অপরাধ বিচিত্রার ঐ সাংবাদিক। তাই স্ব-উদ্যোগে তিনি সহকারী পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মাহবুবুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি ঐ সাংবাদিককে নির্যাতিতার পরিবারের পক্ষ থেকে পুনরায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় যেতে বলেন। ঐদিন ২২/০৯/২০১৬ইং তারিখ রাতে নির্যাতিতার স্বামী মোঃ শাহাদাত হোসাইন পুনরায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে আবারও অভিযোগের কপি রেখে দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় নির্যাতিতার স্বামীকে। উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে অভিযোগ করা হয় নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের নারী সম্পর্ক অধিদপ্তরের জাতীয় হেলপ লাইন সেন্টারে। সেখানকার কর্মকর্তারা নির্যাতিতার অভিযোগ শুনে সাভার মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মোঃ কামরুজ্জামানের কাছে কেন ঐ নির্যাতিতা গৃহবধুর মামলা নেয়া হচ্ছে না এবং অভিযুক্ত তৌহিদুল ইসলামের  গ্রেফতারের বিষয় জানতে চাইলে ওসি মোঃ কামরুজ্জামান ঐ জাতীয় হেলপ লাইন  সেন্টারের কর্মকর্তার নিকট পুরো ঘটনাটি অস্বীকার করে জানান সাভার মডেল থানা এলাকায় এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং তৌহিদুল ইসলাম নামে কোন ব্যক্তিকে সাভার মডেল থানা পুলিশ গ্রেফতার করেনি। ঐ ভন্ড চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার এবং এই নির্যাতনের ঘটনায় গত ২১/০৯/২০১৬ইং তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার নবম পৃষ্ঠার দ্বিতীয় কলামে সংবাদ প্রকাশ এবং এই ঘটনার যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্বেও সাভার মডেল থানার ওসির এমন একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনাকে সরাসরি অস্বীকার করায় আশ্চর্য হয়ে যান খোদ ঐ জাতীয় হেলাপ লাইন সেন্টারের কর্মকর্তা। তৌহিদুল ইসলাম গ্রেফতার হয়নি। তবে থানা হাজতে তৌহিদুল ইসলামের ভুত ছিল! নাকি এত বড় একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা, ভিক্টিমের হাসপাতালে রিপোর্ট, দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সবই মিথ্যা ? যদি সবই মিথ্যা হয় তবে তৌহিদুল ইসলামও নির্দোষ, আর কেন গ্রেফতার করা হয় নির্দোষ ব্যক্তি তৌহিদুল ইসলামকে? আর যদি ঘটনাটি সত্যি হয় তবে কোথায় গেল গ্রেফতারকৃত তৌহিদুল ইসলাম? পুলিশের কাজ অপরাধীকে বিচারের সম্মুখীন করা ও বিচার প্রার্থীর বিচার পাওয়ার অধিকারকে নিশ্চিত করে সঠিক ও উপযুক্ত বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করা, বিচার করা নয়। তবে কেন মুক্তি দেওয়া হল তৌহিদুল ইসলামের মত জঘন্য অপরাধীকে? কেন নির্যাতিতা ও তার পরিবার পুলিশের কাছ থেকে আইনী সেবা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হল? কিসের বিনিময়ে মুক্তি পেল এই জঘন্য অপরাধী? নাকি সত্যিই উধাও হয়ে গেছে ঐ ঘৃণ্য অপরাধী ভূয়া চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলাম!
কোথায় আছে তৌহিদুল ইসলাম ঃ
গত ২১/০৯/২০১৬ইং তারিখে নাটকীয় ভাবে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে সমাজে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঐ জঘন্য অপরাধী তৌহিদুল ইসলাম। পুনরায় পরিচালনা করছে তার অবৈধ চিকিৎসা কেন্দ্র। অনেকটা  কিছুই ঘটেনি ভাব নিয়ে সমাজ, পুরো জাতি আর দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে নির্বিঘেœ জীবন যাপন করছে এই গৃহবধু নির্যাতনের মূল হোতা তৌহিদুল ইসলাম। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই ভূয়া চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের কাছের একজন জানান, পুরো ঘটনাটি প্রকাশ পেলে এই অপরাধীকে গ্রেফতারে পুলিশের উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ থেকে চাপ আসতে পারে আশঙ্কায় এই অপরাধীকে অন্যত্র চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সাভার মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে। কারণ উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে এই জঘন্য অপরাধীকে সাভার মডেল থানার পুলিশ পুনরায় গ্রেফতারে বাধ্য হলে এবং সাভার মডেল থানার পুলিশের বিরুদ্ধে উর্দ্ধত্বন কর্তৃপক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা গ্রহন করলে ফাঁস হয়ে যাবে এই ঘৃণ্য অপরাধীকে মুক্তি দেওয়ার এবং চাঞ্চল্যকর গৃহবধু নির্যাতনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার রহস্য।
কেমন আছে ঐ নির্যাতিতা গৃহবধূ ঃ
অন্যায়ভাবে চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নির্যাতিতা গৃহবধূ ও তার অভিযোগ গ্রহন না করা এবং নাটকীয় ভাবে গ্রেফতার হওয়া অপরাধীকে মুক্তি দেওয়া, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে পরিচালিত জাতীয় হেলপ লাইন সেন্টারের কর্মকর্তাদের কাছে সাভার মডেল থানার ওসির সম্পূর্ণ ঘটনা ও আসামি গ্রেফতারের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করার পর দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি সম্পূর্ন আস্থা হারিয়ে ঘটনাটি ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বলে মেনে নিয়েছেন নির্যাতিতা ও তার পরিবার। রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা ঐ নির্যাতিতা গৃহবধুর স্বামী জানে না কোথায় গেলে তারা এই জঘন্য ঘটনার বিচার পাবে। তার উপর এই অসহায় পরিবারে উপরে পুলিশ কর্মকর্তার হুমকি! কেননা পুলিশের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস নেই এই অসহায় পরিবারের। অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করতে না পেরে নিজ বাসায় শয্যাসায়ী হয়ে রয়েছে এই অসহায় গৃহবধু। তার উপরে এই নির্যাতিতার চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ও চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে এই অসহায় পরিবার। বর্তমানে অত্যন্ত মানবেতর জীবন যাপন করছে ঐ নির্যাতিতা গৃহবধু ও তার পরিবার পরিজন।
সমাজের সকল বিবেকবান মানুষের কাছে প্রশ্ন, কে নেবে এই জঘন্য ঘটনার দায় ???

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − one =