সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদ আয়োজিত সেমিনার, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে মিডিয়ার ভূমিকা

0
1508

আধুনিক বিশ্বসভ্যতায় জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতা এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক। মানবতার জন্য ক্ষতিকর এই অপশক্তি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের চক্রান্তে মসজিদ-মন্দির-উপসনালয়ে ধ্বংসযঞ্জ ভিন্নধর্মাবলম্বীদের হত্যা, নানাধরনের সংঘাত জিইয়ে রেখে ব্যক্তিগত ফায়দা হাসিলের নানা অপচেষ্টা থেমে নেই। দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষন্নেœর মাধ্যমে  দাঙ্গা বাধাতেও কুণ্ঠাবোধ করেনা সুবিধাভোগীরা। আমাদের দেশে হলি আর্টিজেনে মর্মান্তিক হত্যাকান্ড, ষোলাকিয়া কেলেংকারিসহ নানা ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশের সুদীর্ঘ শান্তিময় সহাবস্থানের ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মুক্তচিন্তার লেখক হত্যা, বিদেশীদের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত রয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠি। তারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করে ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নাশকতামুলক কর্মকান্ড চালানোর তৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। এ জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের অপকর্মের রসদ জোগানদিতে সাভারে ব্যাংক ডাকাতির মত ঘটনাও ঘটিয়েছে। দেশ জাতি সমাজ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং ইসলামসহ সকল ধর্মের শান্তিময় মর্মার্থ এই দানব শক্তির কাছে আমরা পরাভুত হতে দিতে পারিনা।

আমাদের দেশের হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রীষ্টানসহ বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িক, উদারপন্থী এবং গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে তারা একত্রে অংশগ্রহণ করে আসছে। কোন ধর্ম সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদকে সমর্থন করেনা। মানবতাবিরোধী কাজের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে প্রত্যেক ধর্মে। ইসলাম  ধর্র্মে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের শাস্তি  মৃত্যুদন্ড। জাতিধর্ম নির্বিশেষে এই দানব শক্তিকে রুখে শান্তিময় বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বজ্রকঠিন শপথ নিতে হবে।
এই দেশে ইসলাম ধর্মের প্রবর্তন হয়েছিল সুফিবাদী ধর্ম প্রচারকদের দ্বারা। সুফি মতবাদের মধ্যে ছিল মানবতাবাদ ও উদারনৈতিক মনোভাব। অন্যদিকে ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের আগেই এ দেশে সহজিয়া মতবাদ নামে একটি বেদবিরোধী লোকায়ত দর্শন ও সংস্কৃতির প্রভাব ছিল। এই লোকায়ত মতবাদের শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ শ্রীচৈতন্যদেব , কবি চন্ডীদাস এবং বাউল সাধকেরা, তাঁদের গান ছিল রবীন্দ্রনাথের ভাষায় গ্রামীণ গরিব জনগণের আদরের ধন। ঐতিহাসিক সুজিত আচার্য প্রমাণসহ দেখিয়েছেন যে, মধ্যযুগে বাংলার নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তাঁদের লোকায়ত দর্শন ও সংস্কৃতির সঙ্গে সুফি মতবাদী ইসলাম প্রচারকদের চিন্তাধারার ও জীবনাচরণের সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। উচ্চবর্ণ হিন্দু ও তথাকথিত স্ভ্রান্ত মুসলমানদের  প্রতিক্রিয়াশীল ধারণা সাধারণ গরিব হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কখনোই ছিল না।
হিন্দু-মুসলমানের ধর্মীয় বিভাজনকে কাজে লাগিয়ে ইংরেজ শাসকেরা উচ্চবর্ণ হিন্দু সম্ভান্ত মুসলমানের মধ্যেই পারস্পরিক বিদ্বেষ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল। কখনো কখনো তা গরিব শ্রেণির মধ্যে প্রসারিত হলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ১৯০৬ সালে একই বছর ব্রিটিশ শাসকদের সরাসরি মদদে সৃষ্টি হলো দুটি সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ ও হিন্দু মহাসভা। পাকিস্তান আন্দোলনও ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যবাদের মদদে তৈরি হয়েছিল। ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট বাংলার মুসলিম লীগ সরকারের প্রত্যক্ষ  সহযোগিতায় ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের দাঙ্গাবাজেরা তাতে অংশ নেয়। অথচ সেই বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে সংঘটিত হয়েছিল ঐতিহাসিক নৌবিদ্রোহ, ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান নাবিকদের সশস্ত্র অভ্যুত্থান। আজাদ হিন্দু ফৌজের সৈনিকদের বিচার শুরু হলে রশীদ আলী দিবসকে কেন্দ্র করে কলকাতায় যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, তাতে হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষ ছিল। এর মাত্র কয়েক মাস পর ১৯৪৬ এর নভেম্বর মাস থেকে শুরু হলো গ্রামবাংলা-কাঁপানো তেভাগা আন্দোলন আবার হিন্দু-মুসলমানের মিলিত লড়াই। ১৯৬৪ সালে তদানীন্তন আইয়ুব-মোনায়েম সরকারের সরাসরি উদ্যোগে ঢাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল, যাতে বহু হিন্দু নাগরিক নিহত হন। কিন্তু তখন বাঙালি মধ্যবিত্ত মুসলমান এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং কমিউনিস্ট পার্টির আলী আকসাদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে দাঙ্গা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছিল। তাদের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একধরনের জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠে।
আশার কথা জঙ্গিবাদ মূলোৎপাটনে বাংলাদেশ সরকার যথেষ্ট সফলও হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল প্রতিনিয়ত জঙ্গি বিরোধী বক্তব্য দিয়ে সারা দেশের জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। র‌্যাব, পুলিশ বা অন্যান্য গোয়েন্দা সদস্যদের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিতে দেশের সংবাদপত্রসেবিরা সাম্প্রদায়িকতা এবং জঙ্গি প্রতিরোধে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা পাচ্ছে স্বীকৃতি এবং সুবিধা। তাদের বেতন ও সুযোগ সুবিধা দ্বিগুণ করেছে সরকার। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গি প্রতিরোধ, দেশ গঠন এবং উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারের  অন্যান্য সংস্থার ন্যায় গণমাধ্যম কর্মীদের স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাদের জীবনের ঝুঁকিই বেড়ে চলেছে। কিন্তু  আর্থিক সুযোগ সুবিধা আগের অবস্থায়ই রয়ে গেছে।
‘সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদ’ দেশের সকল সাপ্তাহিক সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রকাশকদের ঐক্যবদ্ধ একটি রেজিস্টার্ড সংগঠন। এই সংগঠনটি দেশের সকল সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক পত্রিকার সমস্যা সমাধানই নয় বরং দেশের সকল গণমাধ্যম এর সকল সাংবাদিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে দেশ ও জাতি গঠনের জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মত কাজ করে চলছে। দেশের নানা ক্রান্তি লগ্নে এই প্রতিষ্ঠান সভা-সেমিনার, র‌্যালিসহ বিভিন্ন দিবস উদ্যাপন করে থাকে। সরকারের ভিষণ বাস্তবায়নে, সমাজ সচেতনতা বৃদ্ধিতে, উন্নয়ন ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে সহযোগিতার মাধ্যমে একযোগে নিরলসভাবে কাজ করে চলছে। পুরো সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, বিনোদন, অর্থনৈতিক প্রতিবেদন প্রকাশ করায় পাঠকপ্রিয়তাও অর্জন করেছে। রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে এ সেক্টরের ভূমিকা অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছেন  সম্পাদক-প্রকাশক, সংবাদকর্মী, বিপণন কর্মী, উৎপাদন কর্মী, সাধারণ শ্রমিকসহ একটি বিশাল নেটওয়ার্কে এক কর্মযজ্ঞ জনশক্তি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো যেসকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে সাপ্তাহিক পত্রিকার ক্ষেত্রে তা পালন করা হচ্ছে না।

মাননীয় মন্ত্রী, আপনি আমাদের অভিভাবক। আজকে এই সেক্টরের আবেদনে সাড়া দিয়ে আমাদের সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদের সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় কাউন্সিল করে আমাদের সমস্যাগুলো সমাধানে গুরুত্ব সহকারে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হবেন বলে আমাদের বিশ্বাস।  বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকারের কাছে এই সেক্টরের সমস্যাগুলো নিয়ে দাবী দাওয়া জানালেও কোন সরকারই সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি। কার্যত সারাদেশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো দেশ গঠনে টিকে থাকা এবং যথাযথ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোতে নিয়োজিত সংবাদকর্মীগন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, রাজস্ব ফাঁকিবাজ, চোরাচালানি, মজুদদার, সরকারি ভূমি দখলবাজ তথা ভূমিদস্যু, খাদ্যে ভেজালকারী, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মুখোশ উন্মেচন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সকল গোয়েন্দা সংস্থা, রাজস্ব বিভাগসহ, দুদক’কে সহযোগিতা তথা দেশের স্বার্থে সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। ফলে সকল অপরাধীদের জিঘাংসার নজরে জীবন বিসর্জন পর্যন্ত দিয়েছেন। প্রকারান্তরে সে সকল সাংবাদিকের হত্যার বিচার আজও হয়নি।
অনেক সময় অপরাধীদের প্রভাবে সম্পাদক বা সাংবাদিকের নামে হয় মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা বা হয়রানীমূলক নানা ধরনের ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় অনেকেই আজো হয়রানী হচ্ছেন। সরকার এ খাতটিকে যথাযথ সহযোগিতা না করায় এ শিল্পটি আশানুরুপ বিকশিত হতে পারছে না। ফলে দেশের প্রায় সকল সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকাগুলো ভর্তুকি দিয়ে এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে। এক সময় কাগজ দিয়ে, সুষ্ঠু বিজ্ঞাপন বন্টনের মাধ্যমে, ক্রোড়পত্র দিয়ে এ শিল্পকে সহযোগিতা করা হতো। কাগজ না দিয়ে, সুষ্ঠু বিজ্ঞাপন বন্টন না করে, স্বজনপ্রীতি, হয়রানীর মাত্রা বৃদ্ধি হয়েছে। এ শিল্পের মত এত হ-য-ব-র-ল অবস্থা আর কোথাও পরিলক্ষিত হচ্ছেনা।
তাই প্রেস বান্ধব সরকার হিসাবে পরিচিত মাননীয় মন্ত্রী’র কাছে এসব সমস্যা সমাধানে আকুল আবেদন জানাই।
সংবাদপত্র শুধু রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভই নয়। এটি এখন বর্তমান সরকার কর্তৃক ঘোষিত একটি শিল্প। তাই এ শিল্পের উন্নয়নে সরকারের যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখা আবশ্যক। জাতির বিবেক হিসাবে খ্যাত এই শিল্প খাতকে বাদ দিয়ে বা এড়িয়ে গিয়ে মধ্যম আয়ের দেশ নয়, বরং এর সঠিক প্রণোদনা ও পরিচর্যার মাধ্যমেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আর এ জন্য প্রথমেই প্রেস কাউন্সিলকে যুগোপযোগী শক্তিশালী করতে হবে। সারা দেশে রাজধানী থেকে শুরু করে প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের সংগঠন বিরাজ করছে। ঠিক কতগুলো সংগঠন দেশে রয়েছে, কতগুলো সংবাদপত্র বের হচ্ছে, কতজন সাংবাদিক দেশে রয়েছেন, এসব সাংবাদিক এর অধিকার রক্ষা হচ্ছে কিনা, এদের কর্মের পুরস্কার বা অপরাধের তিরস্কার; এর মানসম্মত কার্যত কোন পদক্ষেপ নেই। জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত এসকল সাংবাদিকগণকে মানহানীর মত মামলায়ও চোর, ডাকাত, খুনি অপরাধীদের সাথে আদালতে দাঁড়াতে হয়। এ সেক্টরে সারা দেশে কত সাংবাদিক কাজ করছে, কত সংগঠন রয়েছে এর প্রকৃত কোন তথ্যচিত্র তথ্য মন্ত্রণালয় বা তথ্য অধিদফতর বা কোন দায়িত্বশীল সংস্থার কাছে নেই। এ মুহুর্তে যার যার কাছে যে ধারণা রয়েছে বা যে রেকর্ড রয়েছে তার চিত্রই তিনি দিতে পারবেন। এটি প্রকৃত চিত্র নয়। দেশে কয়টি পত্রিকা বের হচ্ছে, কোথা থেকে বের হচ্ছে, এর সঠিক চিত্র ডিএফপিতেও নেই। আমরা মনে করি, সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সংগঠনগুলোরও একটি শৃংখলা থাকা আবশ্যক। সে জন্য উক্ত সংগঠনগুলোরও নিবন্ধন পদ্ধতি, বিধিমালা প্রণয়ন সহ জাতীয় নীতিমালা আবশ্যক। এ নীতিমালা না থাকায় অনেক অপেশাদার ব্যক্তি যেমন-পান দোকানদার, মাদক ব্যবসায়ী, ডিম বিক্রেতা, ভূমিদস্যুগণ, কালোবাজারী, নারী শিশু পাচারকারী সহ নানা পেশার নানা অনৈতিক লোকজন এখন সাংবাদিকতার কার্ড বহন করে সাংবাদিক সেজেছেন। এতে করে প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। ফলে এ পেশায় এক প্রকার নৈরাজ্য চলছে। বিভিন্ন পেশায় যেমন রেজিস্ট্রেশন থাকা বাধ্যতামূলক, তেমনি সাংবাদিকদের পেশাগত মর্যাদা, নৈতিকতা, বাধ্যবাধকতা, দায়বদ্ধতা থাকা আবশ্যক। তা না হলে ভবিষ্যতে এ পেশায় চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। যা জাতির বিবেক হিসাবে পরিচিত রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকেই নয় এ শিল্পেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে। যা সংঙ্গত কারণে রাষ্ট্রেরও ক্ষতির সমূহ আশংকা থাকে।

আমাদের প্রস্তাবনা সমুহ
১. ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন কমিটি এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলে সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদের মনোনিত অন্তত দু’জনকে সদস্য অর্ন্তভুক্ত করতে হবে
২. সকল সাপ্তাহিক পত্রিকা সংক্রান্ত যাবতীয় মামলা মোকদ্দমা প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক সমাধান করতে হবে
৩. সকল জাতীয় দিবসে সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোকে ক্রোড়পত্রের বরাদ্দ দিতে হবে
৪. সকল সাপ্তাহিক পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেট যুক্তিসঙ্গতভাবে বৃদ্ধি করে যুগোপযুগি করতে হবে
৫. টেন্ডার বিজ্ঞাপনসহ সকল বিজ্ঞাপনের ৫০ ভাগ সাপ্তাহিক পত্রিকার জন্য বরাদ্দ দিতে হবে। সকল সরকারি বেসরকারি, ব্যাংক বীমা, আর্থিক লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের ডিসপ্লে বিজ্ঞাপন বরাদ্দ দিতে হবে।
৬. বিজ্ঞাপন এর বিল থেকে সার্ভিস চার্জ ব্যতিত সকল ভ্যাট ট্যাক্স কর্তন বন্ধ করতে হবে এবং বিজ্ঞাপন প্রদানের ক্ষেত্রে সকল প্রকার অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও হয়রানী বন্ধ করতে হবে।
৭.সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকার জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা এবং ছাপাখানা আইন যুগোপযোগী ভাবে তৈরি করতে হবে।
৮. প্রতি বছর একটি জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রচার সংখ্যার নিরীখে মূল্যায়ন বা প্রণোদনা প্রদান করতে হবে।
৯. প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে সাংবাদিকদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ন্যুনতম এইচ এস সি পাস হলে সংবাদদাতা এবং ডিগ্রি পাশ হলে সম্পাদক হবার যোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে।
১০. মিডিয়া পল্লী সৃষ্টি করে পত্রিকাগুলোকে অফিস, প্রেস করার জন্য প্লট, ফ্লাট বরাদ্দ প্রদান করতে হবে।
১১.সাপ্তাহিক পত্রিকার সাংবাদিকদের আবাসনের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে প্লট, ফø্যাট বরাদ্দ করতে হবে।
১২.অবসর ভাতা, অস্চ্ছল ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, ঝুঁকি ভাতা প্রদান করা।
১৩. প্রকাশিত প্রতিবেদনের বদৌলতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের থেকে একটি অংশ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক বা পত্রিকার জন্য করতে হবে।
১৪.প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক দেশের সকল সাংবাদিক এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নিবন্ধন করতে হবে, এর নীতিমালা প্রনয়ন করতে হবে এবং ওয়েবসাইটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
১৫. প্রেস কাউন্সিল আইন যুগোপযুগি করা। দেশের সকল সাংবাদিক ও সংগঠনগুলোর যাবতীয় তথ্যাদি প্রেস কাউন্সিলের ওয়েব সাইটে অন্তর্ভুক্ত করা।
১৬. রাষ্ট্র কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক পত্রিকার সম্পাদকদের আমন্ত্রত জানাতে হবে।

আমাদের প্রত্যাশা, অত্র সংগঠনের যৌক্তিক দাবী বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন। সাপ্তাহিক পত্রিকা পরিষদ আপনার ও আপনার সরকারের কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।
( ১৫ নভেম্বর ২০১৬ অনুষ্ঠানে পঠিত নিবন্ধ)

এস এম মোরশেদ
সাধারন সম্পাদক
০১৯১১-৩৮৫৯৭০।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 2 =