মুন্সীগঞ্জে রেড ক্রিসেন্ট কুক্ষিগত করে রেখেছে শাহাজাহান গাজী

0
800

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি আন্তর্জাতিক সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হলেও ক্ষমতার দাপটে সেই সেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুন্সীগঞ্জ জেলা ইউনিট দীর্ঘ দিন ধরে কুক্ষিগত করে রেখেছে মুন্সীগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট এর কথিত সাধারণ সম্পাদক শাজাহান গাজী। মানবসেবার নাম ভাঙ্গিয়ে মানবসেবি এই সংগঠনকে তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিনত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ক্ষমতার দাপটে কেউ মুখ খুলতে পারছেন না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট ও যুব রেড ক্রিসেন্টের সাথে দীর্ঘ দিন ধরে জড়িত অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে-বিগত নির্বাচনের সময় শাজাহান গাজী সাধারণ সম্পাদক থাকায় নির্বাচনের আগেই গোপনে নিজের টাকা ব্যয় করে তার নিজস্ব কিছু লোককে মুন্সীগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের আজীবন সদস্য ও এক বছর মেয়াদকালীন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করেন। নির্বাচন করতে আগ্রহী অন্যান্যদের তিনি নানা টালবাহানা করে আজীবন সদস্য ও এক বছর মেয়াদকালীন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে বিরত রাখেন। যেহেতু আজীবন সদস্য ও এক বছর মেয়াদকালীন সদস্যরাই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারনে সেহেতু তাদের ভোট নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শাজাহান গাজী। দ্বিতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে লংকার রাবন বনে যান শাজাহান গাজী। শুরু হয় তার নানাবিদ স্বেচ্ছাচারিতা। রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রমের মূল চালিকা শক্তি যুব রেড ক্রিসেন্ট।

mg-51

সেই যুব রেড ক্রিসেন্টের কমিটি রাতের আধারে পরিবর্তন করে ফেলেন শাজাহান গাজী। এই বিষয়ে সে সময়ের যুব প্রধান মাহমুদুল হাসান জানান-যুব রেড ক্রিসেন্ট রেড ক্রিসেন্টের মূল চালিকা শক্তি কিন্তু শাজাহান গাজী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর-স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। যুব রেড ক্রিসেন্টের যে কোন কার্যক্রমকে তিনি বাধাগ্রস্থ করতে থাকেন। আমরা প্রকৃত যুব রেড ক্রিসেন্ট কর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে রাতের আধারে যুব রেড ক্রিসেন্টের কমিটি পরিবর্তন করে ফেলেন। যুব রেড ক্রিসেন্ট কিমিটি গঠনের কোন এখতিয়ার সাধারণ সম্পাদকের নেই দাবী করে মাহমুদুল হাসান আরও বলেন- যুব রেড ক্রিসেন্টের প্রথা অনুযায়ী সাবেক যুবপ্রধানগন ও সিনিয়র যুব সদস্যরা সাধারণ সভার মাধ্যমে যুব রেড ক্রিসেন্টের কমিটি গঠন করে থাকেন। পরে সেই কমিটি কেন্দ্রীয়ভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমান যুবপ্রধান এনামুল হাসান অপু অভিযোগ করে বলেন-দীর্ঘ দিন যুব রেড ক্রিসেন্টের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। ২০১৪ সালে আমি জেলা যুব রেড ক্রিসেন্টের যুবপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হই। কিন্তু জেলা রেড ক্রিসেন্টের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান গাজীর অসহযোগিতার কারনে-যুব রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রম পরিচালনায় আমি বাঁধাগ্রস্থ হয়েছি। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রমকে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে বাধ্যতামুলক করেছে। সেই কারণে বিপুল অঙ্কের তহবিল যুব রেড ক্রিসেন্ট ফান্ডে প্রতিনিয়ত জমা হচ্ছে। যুব রেড ক্রিসেন্টের কার্যক্রমকে গতিশীল করার জন্য সেই তহবিল ব্যবহার হওয়ার কথা থাকলেও সাধারণ সম্পাদক নিজ কক্ষে ব্যবহারের জন্য দামী চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য আসবাপপত্র কিনতে সেই তহবিল ব্যবহার করেছেন। কিন্তু যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে বরাদ্ধ দিতেই যেন তার হাজার বাহানা। অপু আরও অভিযোগ করেন-যুব রেড ক্রিসেন্ট ফান্ডে প্রতিনিয়ত জমা হওয়া সহশিক্ষা কার্যক্রমের তহবিল কিভাবে সাধারন সম্পাদক শাজাহান গাজী ব্যয় করছেন এ বিষয়ে তার কোন জবাবদিহিতা নেই। এই বিষয়ে আপত্তি করার কারণে-যুবপ্রধান এনামুল হাসান অপুকে যুব রেড ক্রিসেন্টের কোন কার্যক্রমে অংশ গ্রহন করতে দেন না সাধারণ সম্পাদক শাজাহান গাজী। শাজাহান গাজীর বীরুধে স্বেচ্ছাচারিতা ও তহবিল নিয়ে নানা তালবাহানার অভিযোগ করেছেন খোদ তার কমিটির কয়েকজন সদস্য। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্যরা বলেন-শাজাহান গাজী একাই সকল সিদ্ধান্ত নেন। কারো মতামত নেয়ার প্রয়োজন মনে করেন না। তহবিল নিয়েও তিনি নানা তালবাহানা করেন।   মুন্সীগঞ্জ যুব রেড ক্রিসেন্টের সাবেক যুব প্রধান এড. সুজন হায়দার জনি বলেন-যারা রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা হয়ে বহাল তবিয়তে আছেন তারা আসলে কেউ রেড ক্রিসেন্টের মর্মার্থ জানেন না। রেড ক্রিসেন্ট একটি আন্তর্জাতিক মানবসেবামূলক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। কিন্তু মানবসেবার নামে মুন্সীগঞ্জ জেলা রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত হয়ে আছেন। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে যারা রেড ক্রিসেন্টের সাথে শ্রম, মেধা ও সময় দিয়ে এই কার্যক্রমকে গতিশীল করেছেন তাদের মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবী বলে মনে করেন-যুব রেড ক্রিসেন্টের সাবেক যুব প্রধান এড. সুজন হায়দার জনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × five =