সংশোধন হচ্ছে বিধি পুলিশি ক্ষমতায় দুদক

0
952
৫৪ ধারায় গ্রেফতার তল্লাশি ও আলামত জব্দ * ১২০ দিনে অনুসন্ধান * হাজতখানা ও ব্যারাক নির্মাণ হবে
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কিছু কাজ পুলিশের আদলে পরিচালিত হচ্ছে। পুলিশের মতো পরোয়ানা ছাড়াই ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করছে দুদক। মামলার অনুসন্ধান পর্যায়েও সংস্থাটি সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজদের গ্রেফতারের সুযোগ পেয়েছে। ১৫৩ ধারায় তল্লাশি ও আলামত জব্দ করার ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে। ৬০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিনের মধ্যে অনুসন্ধানের সময়সীমা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুদক কার্যালয়েই নির্মাণ করা হবে ব্যারাক ও হাজতখানা। এজন্য অবকাঠামোগত সংস্কারের পাশাপাশি সংশোধন করা হবে কিছু বিধিবিধানও।

সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪-এর ২০ (৩) ধারা অনুযায়ী তদন্তের বিষয়ে দুদক কর্মকর্তা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) মতো ক্ষমতাশালী। অথচ দুর্নীতির অনুসন্ধান, মামলার তদন্ত এবং অন্যান্য কার্যক্রমে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো সুবিধাদি পাচ্ছেন না। এ কারণে পুলিশের কার্যপদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ঢেলে সাজানো হবে দুদককে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ যুগান্তরকে বলেন, দুদকের নিজস্ব কোনো হাজতখানা নেই। নেই নিজস্ব আর্মড ইউনিট। পুলিশের সমান ক্ষমতা থাকলেও কার্যক্রম পরিচালনায় দুদক কর্মকর্তাদের লজিস্টিক সাপোর্টের ঘাটতি রয়েছে। এসব দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একটি নিজস্ব হাজতখানা ও অস্ত্রাগার স্থাপনের জন্য আমরা অর্থ চেয়েছি। তিনি বলেন, দুদককে আরও গতিশীল করতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আরও কিছু পরিবর্তন আমরা আনব, সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।
জানা গেছে, চলতি বছর ২১ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হয়। এ সংশোধনীতে ২০(৩) ধারায় ‘তদন্ত’ শব্দটির সঙ্গে ‘অনুসন্ধান ও’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। ফলে এখন দাঁড়িয়েছে ‘অনুসন্ধান ও তদন্ত’। এতে অনুসন্ধান পর্যায়েও সন্দেহভাজন দুর্নীতিবাজ আসামি গ্রেফতারের সুযোগ পেয়েছে দুদক। অর্থাৎ পুলিশ তদন্তকালে যে ক্ষমতা প্রয়োগ করে, দুদক অনুসন্ধানকালেই সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করছে। ফৌজদারি কার্যবিধিতে তদন্তকালে পুলিশকে তিনটি ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আসামি গ্রেফতার, বাসাবাড়ি ও অফিস তল্লাশি এবং আলামত জব্দ। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওসির মতোই দুদকও অনুসন্ধান পর্যায়ে গ্রেফতার, তল্লাশি ও জব্দ করার ক্ষমতা পেয়েছে। পুলিশকে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৯ ধারায় আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। একই কারণে দুদকও ৫৪ ধারায় সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা পেয়েছে। দুদক সেই ক্ষমতা প্রয়োগও করছে। এ আইনের ১৫৩ ধারা অনুযায়ী তল্লাশিও চালাতে পারে দুদক। বিনষ্ট হওয়ার আশংকা থাকলে আলামত জব্দও করতে পারবে সংস্থাটি। ‘দুর্নীতি দমন কমিশন বিধি-২০০৭’-এ সংশোধনী আনা হচ্ছে। এ বিধিতে অভিযোগ অনুসন্ধানের সময়সীমা ৩০ কার্যদিবস বেঁধে দেয়া আছে। তদন্তের ক্ষেত্রে এ সময়সীমা সর্বোচ্চ ১৮০ দিন। অথচ ফৌজদারি কার্যবিধিতে পুলিশের তদন্তের সময়সীমা অনির্দিষ্ট। দুদক এ সময়সীমা ১২০ দিন নির্দিষ্ট করার উদ্যোগ নিয়েছে।
দুদকের প্রধান কৌঁসুলি খুরশিদ আলম খান বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আইন ও বিধিতে সবই আছে কিন্তু দক্ষ জনশক্তির অভাবে দুদক তেমন কিছু বাস্তবায়ন করতে পারছে না। পুলিশের আদলে দুদকের কার্যপদ্ধতি পরিচালনা করতে বিধি বা আইন সংশোধনের কোনো প্রয়োজন নেই।
দুদক মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মঈদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আর্মড ইউনিট গঠন ও হাজতখানা স্থাপনের জন্য আইন সংশোধনের প্রয়োজন নেই। বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, আনসার এমনকি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেরও আর্মড ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিট যে আইনের আওতায়, যেভাবে পরিচালিত হয় দুদকও সেভাবে কাজ করবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন পরিচালক বলেন, পুলিশের আদলে দুদক পরিচালনা করতে আইনগত সীমাবদ্ধতা খুব একটা নেই। বিধিতে কিছু সংশোধনী আর অফিস আদেশ জারির মাধ্যমেই এটি সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রথমেই প্রয়োজন জনবল। দ্বিতীয়ত, উপকরণগত সহায়তা (লজিস্টিক সাপোর্ট) এবং অর্থ। মামলার আলামত জব্দ করার পর নিজস্ব কাস্টডিতে রাখার মতো কোনো ব্যবস্থাও দুদকে নেই। নিজস্ব প্রিজন ভ্যান নেই। কর্মকর্তাদের নিরাপত্তাও দুর্বল।
ওই কর্মকর্তা বলেন, আসামি গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ, তল্লাশি ও জব্দের ক্ষেত্রে দুদককে নির্ভর করতে হয় পুলিশের ওপর। এ কারণে অনেককিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে গ্রেফতার অভিযান পুলিশের সহায়তা ছাড়া সম্ভব নয়। অথচ পুলিশকে অভিযানে নিলে প্রায়ই নানা ধরনের অসুবিধা হয়। অভিযানের আগাম তথ্য অনেক সময় আসামিদের কাছে ফাঁস করে দেয়া হয়। সম্প্রতি বেসিক ব্যাংকের আসামি গ্রেফতারে জামালপুরে অভিযান চালানোর তথ্য আগেই ফাঁস হয়ে যায়। আগাম তথ্য পেয়ে নিরাপদে পালিয়ে যায় আসামি। এছাড়া গ্রেফতারের পর অন্তত ২৪ ঘণ্টা আসামিকে রাখতে হয় নিকটবর্তী কোনো থানায়, পুলিশের জিম্মায়। এ সময় পুলিশ আসামিদের সঙ্গে কী আচরণ করে তা দুদকের পক্ষে সার্বক্ষণিক মনিটরিং সম্ভব হয় না। আলোচিত ডেসটিনির অর্থ আত্মসাৎ মামলায় প্রভাবশালী একজন আসামিকে গ্রেফতার করে দুদক। গ্রেফতারের পর তাকে থানায় রাখা হয়। সেখানে সকালে নাস্তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়। পরে বাসার নাস্তা এনে দেয়া হয়। এসব কারণে আসামিকে সার্বক্ষণিক তদন্ত কর্মকর্তার নজরদারি ও দুদকের জিম্মায় রাখার পরিকল্পনা থেকে নিজস্ব হাজতখানা স্থাপন করছে দুদক।
সূত্র জানায়, রিমান্ডের ক্ষেত্রে থানা, আদালত, দুদক কার্যালয়ে আসামি আনা-নেয়া ঝুঁকিপূর্ণ। নিজস্ব কোনো প্রিজন ভ্যান নেই। হাতকড়া নেই। আনুষ্ঠানিকতায়ও নষ্ট হয় সময়। জটিলতা তো আছেই। এসব লাঘবে দুদক নিজস্ব আর্মড ইউনিট গঠন করছে। কিন্তু সার্বক্ষণিক অস্ত্র রাখার নেই কোনো ব্যবস্থা। দুদকে পুলিশের কনস্টেবলদের কিছু পদ রয়েছে। এসব পদে অনেকেই পুলিশ বাহিনী থেকে প্রেষণে এসেছেন। অথচ তাদের দিয়ে পুলিশি কার্যক্রমের পরিবর্তে অফিস সহায়কের কাজ করানো হচ্ছে। এখন থেকে তাদের কাজে লাগানো হবে আসামি গ্রেফতার, রিমান্ড ও তদন্তের অন্যান্য কার্যক্রমে। সেগুন বাগিচাস্থ দুদক কার্যালয় সংলগ্ন মিডিয়া সেন্টারের স্থানটিতে নিজস্ব হাজতখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর্মড ইউনিট গঠিত হলে অস্ত্র রাখার জায়গাও করা হবে হাজতখানার ভবনেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × five =