নোমান মাহমুদ:
সাভারের আশুলিয়ায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে হালিমা বেগম (২২) নামে গৃহবধুকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে পাষন্ড স্বামী শামীম ইসলাম । গত ২৪/১১/১৬ইং আশুলিয়া খেজুরবাগানের আমতলায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতের গ্রামের বাড়ি নড়াইল জেলার উঃ সিঙ্গিয়া গ্রামে। নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ১ বছর পূর্বে মাগুরা জেলার শালিখা থানা, সীমাখালী গ্রামের জনৈক মশিউর রহমানের ছেলে শামীম ইসলামের (২৬) সাথে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় নিহত হালিমা বেগমের। বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে গৃহবধুর স্বামী ও শশুরবাড়ির লোকজন। প্রথম অবস্থায় যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধুকে মারধর করা হলে এক পর্যায়ে অন্যায় জেনেও মেয়ের সুখের জন্য নিহতের পরিবার কয়েক দফায় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা নিহতের স্বামীকে প্রদান করে। কিন্তু তাতে ক্ষান্ত হয়নি ওই পাষন্ড শামীম ইসলাম। পরবর্তীতে আবার ও
৫লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করলে নিহতের অসহায় বাবা তা প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। এরই সূত্র ধরে গত ২৪/১১/২০১৬ইং তারিখে আশুলিয়ার আমতলায় ভাড়া বাসায় গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাস রোধে হত্যা করা হয় ঐ নিরপরাধ গ্রহবধু হালিমা বেগমকে। গৃহবধুকে হত্যার পর ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে গৃহবধুর পাষন্ড স্বামী শামীম গৃহবধুর মৃতদেহ সাভার উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স এ নিয়ে গিয়ে গৃহবধু গলায় ফাস লাগিয়ে আত্বহত্যা করেছে বলেছে দাবি করলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পারবর্তীতে সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ কবির হোসেন খবর পেয়ে সাভার উপজেলা স্বা¯্য’ কমপ্লেক্সে গিয়ে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। প্রাথমিক অবস্থায় নিহতের স্বামী শামীম ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ি গৃহবধু আত্বহত্যা করেছে বলে লাশের সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। এ ঘটনায় ঐ গৃহবধুর স্বামীকে সাভার মডেল থানা পুলিশ আটক করে ঐ দিনই আশুলিয়া থানায় তাকে হস্তান্তর করলে আশুলিয়া থানা পুলিশ পাষন্ড শামীম ইসলামকে জেল হাজতে প্রেরন করে। সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরির্দশন ও এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ২৪/১১/২০১৬ ইং তারিখে ঘটনা ঘটলেও এ পযর্ন্ত ঘটনা তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেনি আশুলিয়া থানা পুলিশ। এমনকি ঘটনাস্থল ঐ ভাড়াকৃত বাসার ঘরটি সংরক্ষন না করায় অরক্ষিত হয়ে নষ্ট হয়ে গেছে ঘটনা সংশ্লিষ্ট সকল আলামত। ইতিমধ্যে ঐ বাড়ির মালিক এনায়েতুল্লাহ গত ০১/১২/১৬ ইং তারিখ হতে নতুন করে অন্য পরিবারের কাছে ঘরটি ভাড়া দিয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঐ বাড়ির অন্য বাসিন্দারা জানান ঘটনার দিন সকালে গৃহবধুর স্বামী পাশের বাসার এক প্রতিবেশিকে গৃহবধুর অসুস্থতার কথা জানালে ঐ প্রতিবেশি গৃহবধুকে জ্ঞানহীন অবস্থায় বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে। ঐ প্রতিবেশি গৃহবধ কিভাবে অসুস্থ হয়েছে জানতে চাইলে গৃহবধুর স্বামী শামীম ইসলাম তাকে গৃহবধুর শরীর খারাপ ও মাথা ঘোরানোর কথা বললে ঐ প্রতিবেশি গৃহবধুকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঘটনাটি পর্যবেক্ষন ও এই বিষয়ে ঐ বাড়ির ম্যানেজারের মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন “নিহতের স্বামী প্রায়ই ঐ গৃহবধুকে মারধর করতো, তাছাড়া ঐ গ্রহবধু গলায় ফাস লাগিয়ে আত্বহত্যার প্রশ্নই ওঠেনা কেননা আমাদের সামনে তাকে শরীর খারাপের কথা বলে তার স্বামী হাসপাতালে নিয়ে যায়। “তাছাড়া ৭৫ ইঞ্চি উচ্চতার ঐ টিনসেড ঘরে ৬৪ ইঞ্চি উচ্চতার ঐ গৃহবধুর পক্ষে গলায় ফাস দিয়ে আত্বহত্যার কোন সুযোগ নেই।” ঐ ঘরটি সংরক্ষণ না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ঐ গৃহবধু যে মারা গিয়েছে এই বিষয়টিই তো আমরা জানিনা, ঐ দিনের পর কেউই এখানে আসেনি, এমনকি নিয়মানুযায়ি পুলিশও না, সুতরাং কোন খোজ খবর না পেয়ে আমরা ঘরটি নতুন ভাড়াটিয়া নিকট হস্তান্তর করেছি।” এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ওসি মোঃ মহসিনুল হকের সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমরা অভিযুক্ত শামীম ইসলামকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছি, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।”