যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আইন করা হবে

0
1075

যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তের বিষয়ে আইন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক।
অধস্তন আদালতের শৃঙ্খলা ও আচরণ বিধিমালার খসড়া গেজেটে প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন তা বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রের আইনমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতির মতামতের পর এবিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই।
রোববার অধস্তন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা ও আচরণ সংক্রান্ত বিধিমালার খসড়া গেজেট প্রকাশের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (১২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ের নিজ কার্যালয়ে এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সরানো প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল সরানোর জন্য আবারো সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ট্রাইব্যুনাল সরানোর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবারো সুপ্রিম কোর্টে চিঠি পাঠাবো। তার কারণ হচ্ছে জনগণের ইচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ওইখানেই থাক এবং এই ট্রাইব্যুনাল শেষ হওয়ার পর এটা একটা যাদুঘর হোক। জনগণের এই ইচ্ছাকে কি করে বাস্তব রূপ দেয়া যায় সে চেষ্টাই আমি করবো।
উল্লেখ্য গত ১৮ আগস্ট ২০১৬ তারিখে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অনুকূলে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের দখল ৩১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখের মধ্যে হস্তান্তর করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে ৩বি-২৮/১০-৫৭২২জি স্মারকমূলে আইন মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়। সুপ্রিম কোর্টের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে সুপ্রিম কোর্টে চিঠি দেয় হয়। চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে জানানো হয়-
‘‘পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্থাপনা। এ ভবনটি পূর্ব বাংলা ও আসাম প্রদেশের গভর্ণর এর সরকারি বাসভবন হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে এ ভবনটিকে পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে রূপান্তর করা হয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত অপরাধসমূহ যেমন-যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, ধর্ষণ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধসহ অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িতদের বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও নিরাপদ স্থাপনা না পাওয়ার কারণে সরকার শেষ পর্যন্ত উক্ত ভবনটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। উল্লেখ্য, ২০০৯ খ্রি. সালে এ ভবনের একটি অংশে আইন কমিশন ও অপর অংশে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। সে সময় উক্ত ভবনের রক্ষণাবেক্ষন সঠিকভাবে হচ্ছিল না। তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করার জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছিল এবং নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় এনে এ ভবনটি সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় এখানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়। ভবনটিতে ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করার পর প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ করা হয় এবং আইন কমিশন ও বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশন এর অফিস ১৫, কলেজ রোড, ঢাকা ঠিকানায় স্থানান্তর করা হয়। সে সময় থেকে এখানে বিচার কাজ শুরু হয় এবং অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজ সু-সম্পন্ন হয়। সে কারণে এ ভবনটির ঐতিহ্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ চায় যে এ ভবনটি ঐতিহাসিক ভবন বিধায় সে মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে ভবনটিকে সংরক্ষণ করা হোক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখান থেকে সরানো না হোক। এটা সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং দেশের সঠিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে এ স্থানান্তর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
০২।    এমতাবস্থায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম বন্ধ করে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটির দখল বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অনুকূলে হস্তান্তর করা হলে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বজনগ্রাহ্য হবে না বরং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।  ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অনুকূলে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের দখল হস্তান্তর করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। ”
এর জবাবে ৪ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়কে আবারো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরিয়ে নিয়ে ভবনটির দখল হস্তান্তর করার জন্য চিঠি পাঠায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − five =