অপরাধ বিচিত্রায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় প্রতিবেদককে প্রধান আসামী করে আদালতে মামলা করেছে নুরুল আবছার আনসারী

0
1239

স্টাফ রিপোর্টার ঃ
চট্টগ্রামের আলোচিত প্রতারক ও মামলাবাজ নুরুল আবছার আনসারীর বিরুদ্ধে অপরাধ বিচিত্রায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রতিবেদক মাধবী ইয়াসমিন রুমাকে বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে একাধিক মামলার হুমকি-ধামকি দেওয়ার পর অবশেষে প্রধান আসামী করে চট্টগ্রামের বাঁশখালী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। যার সি.আর মামলা নং-৩৩৫, তাং-২০/১১/২০১৬ ইং। ধারা-৫০০/৫০১ দঃবিঃ। সিআর মামলার অপর দুই আসামী হলেন, সিটিজি ক্রাইম নিউজ. কম এর প্রকাশক আজগর আলী মানিক ও দৈনিক সংবাদ মোহনা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজুদ্দিন রানা। সূত্রটি জানায়, উক্ত মামলাবাজ নুরুল আবছার আনসারী দেশের বিভিন্ন জেলার জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আরো একাধিক মামলা করার পরিকল্পনা করছেন। জানা গেছে, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর কেন্দ্রীয় পরিচালক পরিচয়ে আলোচিত প্রতারক ও মামলাবাজ নুরুল আবছার আনসারী যে অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার ধারের কাছেও পৌঁছাতে পারেননি মানবাধিকার সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক। বরং নুরুল আবছার আনসারীর এহেন কর্মকা-ে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক প্রতিবাদ করলে, মামলাবাজ নুরুল আবছার আনসারী তাকেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, তার হাতে রয়েছে কয়েক ডজন নারী। তাদের বাদী করে বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানী বা নারী নির্যাতন মামলা করে। পরে বাদী-বিবাদী গণের সাথে আপোষ-মিমাংসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এ সব নারীদের দিয়ে ব্যবসা করে অলৌকিকভাবে তার ভাগ্যের দ্বার খুলে যায়। সূত্রটি জানায়, সহজ-সরল নিরীহ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে নুরুল আবছার আনসারীর কোনো জুড়ী নেই। তিনি নিজেকে কখনো জজ কোর্টের উকিল, ডাক্তার, সম্পাদক, সাংবাদিক, আইনসহায়তাকারী সংস্থার মহাপরিচালক, কঞ্জুমার রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি, ঢাকা প্রেসক্লাবের সম্পাদক, আবার কখনো বা আইন সহায়তা কেন্দ্র আসক এর কেন্দ্রীয় পরিচালক পরিচয় দিয়ে চলছেন বলে জানা গেছে। এভাবেই সে সহজ-সরল মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোঁকা বানিয়ে তাদের পকেট হাতিয়ে নিজেই কোটিপতি বনে গেছেন। সূত্রটি জানায়, নুরুল আবছার আনসারী নির্দিষ্ট কোন চাকুরী বা ব্যবসা না থাকলেও বিশাল অট্টালিকা, কয়েকটি মাইক্রোবাস, মটরসাইকেল এবং অনেকগুলো ট্যাক্সির মালিকও বনে গেছেন। আর তার মাইক্রোবাসগুলো চট্টগ্রামের বহদ্দর হাট এবং বাঁশখালী-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। একাধিক পরিচয়ের অন্তরালে প্রশাসনের নাকের ডগায় নুরুল আবছার আনসারী এ গাড়িতে অবৈধ মালামাল পাচার করে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব তথ্য উপাত্ত সহ তার বিরুদ্ধে পূর্বেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় একাধিক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে। সূত্রটি জানায়, ১০/১২ বছর পূর্বে শার্ট, লুঙ্গি ও স্যান্ডেল পায়ে নুরুল আবছার আনসারীর আসা-যাওয়া শুরু হয় রাজধানী ঢাকাতে। এমনকি আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশনেও শার্ট, লুঙ্গি ও স্যান্ডেল পায়ে তার আগমন ঘটে। মাত্র ১০/১২ বছরেই তার বেশ-ভূষা পরিবর্তন হয়ে যায়। শুধু তাই নয়, অলৌকিকভাবে অল্প সময়ের ব্যবধানে তার ভাগ্যেরও পরিবর্তন হয়। ফলে শূণ্য থেকে আজ কোটিপতি হয়ে গেছেন নুরুল আবছার আনসারী। জানা গেছে, নুরুল আবছার আনসারী ৯১ সালে জীবন-জীবিকার তাগিদে বাঁশখালী থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ চট্টগ্রাম শহরে আসেন। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা পল্টনিয়ে মসজিদের পিছনে মাসিক ১শ’ টাকায় জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকেন। জীবিকার তাগিদে পুরানো তেঁতুল আর আটার সাথে পিপারমিন মিশিয়ে সমস্ত রোগের দাওয়াই (ঔষধ) বানিয়ে প্রতারণা কাজের সূচনা করেন। পুরাতন জানআলী হাট রেল ষ্টেশনে কলাপাতা বিছিয়ে জঙ্গল থেকে অপরিচিত লতা-পাতা তুলে এনে বিক্রি করে ডাক্তার  ও কবিরাজ খেতাব অর্জন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার নানামূখী প্রতারণা। নুরুল আবছার আনসারীর ব্যাপারে শিক্ষা, শ্রম, বন ও পরিবেশ রক্ষা সোসাইটির চেয়ারম্যান  ও দৈনিক সংবাদ মোহনা পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ উদ্দীন রানা বলেন, নুরুল আবছার আনসারী আসলেই একজন মামলাবাজ ও প্রতারক। প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ায় তার প্রধান নেশা ও পেশা। সে বর্তমানে জামাত-শিবিরের সংগঠক। একইসাথে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীরের সমন্বয়কারী ছিলেন। অন্য জেলা থেকে যদি কোনো কিশোর, তরুন ও যুবক  ”ট্টগ্রাম শহরে নতুন আসে, তাহলে নুরুল আবছার আনসারী তাদের বিভিন্ন ভাবে অর্থ দিয়ে উপকার করে। পরে তাদের জামাত-শিবির ও হিযবুত তাহরীরের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দেয়। যদি কেউ তার প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে তার ওপর নেমে আসে বিভিন্ন মামলা এবং হয়রানি। রিয়াজ উদ্দীন রানা আরো বলেন, ২০০৬ ইং সালে উক্ত নুরুল আবছার আনসারী তাকে জামাত-শিবির করার প্রস্তাব দেয়। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। বিধায় জামাত-শিবির করার প্রশ্নই উঠে না। আমি ওই সময় তার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে, আমাকে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। নিজের নিরাপত্তার জন্য সাধারণ ডায়েরীও করেছি। সেই রেশ আজও চলছে। বর্তমানেও নুরুল আবছার আনসারী আমাকে একাধিক মামলার আসামী করে হয়রানি করে চলছে। শুধু আমি কেনো, যে মানবাধিকার সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে আজ সে গাড়ি, বাড়ি ও ধন-সম্পদের মালিক বনে গেছেন। সেই আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হককেও মামলা দিয়ে হয়রানী করতেও পিছপা হয়নি নুরুল আবছার আনসারী। নুরুল আবছার আনসারীর ব্যাপারে সিটিজি ক্রাইম নিউজ. কম এর প্রকাশক আজগর আলী মানিক বলেন, নুরুল আবছার আনসারী একজন প্রতারক ও মামলাবাজ। সে বিভিন্ন মামলার ফাঁদে ফেলে বিত্তবানদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া তার পেশা। আর এভাবে সে কোটিপতি হয়েছেন। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, নুরুল আবছার আনসারী ৩টি মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হওয়ার পরও প্রশাসনের নাকের ডগায় বহাল তবিয়তে ঘুরছে। এদিকে ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হলেও অজ্ঞাত কারণে নুরুল আবছার আনসারী আটক না হওয়ায় তার প্রতারণা লাগামহীনভাবে চলছে। আর তার প্রতারণার শিকার হচ্ছে নিরীহ জন-সাধারণ। প্রতারিত হওয়ার পর যদি কেউ তার এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে একের পর এক হয়রানী করতে থাকে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × four =