খুলনা প্রতিনিধিঃ
‘রিকশা চালিয়ে এতো কষ্ট করে আয় করে ঠিকমতো বাজার ও মাছ না কিনে ওষুধ কিনি। কিন্তু তা ভেজাল শুনে মনের কষ্ট রাখার জায়গা নেই।’ অত্যন্ত আক্ষেপের সাথে সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে অভিযোগ করলেন খুলনা নগরীর রিকশাওয়ালা ইউনুস আলী (৫৬)। কাঁচা পাকা দাঁড়ির শীর্ণ কায়ার এই খেটে খাওয়া রিকশাওয়ালার মনের প্রশ্ন যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে আয় হয় তা দিয়ে বৃদ্ধা মাতা ও নিজের অসুস্থ স্ত্রীর জন্য কেনা ওষুধগুলো কি ভেজাল না আসল। রোগ নির্মূলের বদলে সে আরো আক্রান্ত হচ্ছে কি না জানেনা। মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ খাচ্ছে কি না বোঝে না। এমনই লোকের সংখ্যা অসংখ্য। সর্বশেষ সম্প্রতি খুলনার রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসার চর রূপসা এলাকায় শাহনেওয়াজ সী ফুড নামক একটি হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারাখানা থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ উদ্ধার করেছে র্যাব। এখানে দীর্ঘদিন ধরে নকল বিভিন্ন প্রকার ওষুধ তৈরি করা হয়ে আসছিলো বলে র্যাবের কাছে তথ্য ছিল। সম্প্রতি থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত র্যাব এ অভিযান চালিয়ে নকল ওষুধ তৈরির এ কারখানার সন্ধান পায়। নকল ওষুধ উদ্ধারের ঘটনায় সাধারণ মানুষ বিস্ময় ও শংকা প্রকাশ করেছেন। দেশের বিভিন্ন নামিদামী কোম্পানির নাম ব্যবহার করে এখানে দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানার আড়ালে নকল ওষুধের অবৈধ কারবার চলে আসছিলো বলে জানায় র্যাব। জীবন রক্ষাকারী এ সকল ওষুধ নিয়ে এ ধরনের প্রতারণায় ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। নকল ওষুধ তৈরি ও সংরক্ষণের অভিযোগে শিল্পপতি কাজী শাহনেওয়াজকে গ্রেফতার করেছে। রাতে তাকে রূপসা থানায় সোপর্দ করে র্যাব। এ ঘটনায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(গ) ধারায় মামলা করেছে র্যাব। ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ ভেজাল শ্যাম্পু ও নকল কসমেটিক্স উদ্ধার করে র্যাব। উদ্ধারকৃত মালামালের মূল্য কোটি টাকার উপরে হবে বলে ধারণা করছে র্যাব। উদ্ধারকৃত নকল ওষুধের মধ্যে রয়েছে, এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস এর নাম ব্যবহার করে তৈরি করা ২ হাজার ৬০০ পিস নকল ক্যাপসুল ফ্লুকক্স্ ৫০০ এমজি, এছাড়াও ক্যাপসুল ফ্লুকক্স ৫০০ এমজি ৫বস্থা, অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালস এর ১ বস্থা রেনিটিড ১৫০ এমজি, আড়াই লাখ পিস ক্যাপসুল শেল উইথ ফিলড পাউডার, ট্যাবলেট কনপ্রিরেড ৪ হাজার পিচ, এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস এর ৫০০ এমজি ফ্লুকক্স ক্যাপসুল তৈরির ফয়েল কেজি, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালস এর ৫০০ এমজি ফ্লুকক্স্ তৈরির ফয়েল আড়াই কেজি, প্রিন্স ফার্মাসিউটিক্যালস এন্ড হার্বাল ইন্ডাস্ট্রিজের টেস্টি স্যালাইন ২০০ বস্তা, ক্যাপসুলের খালি খোসা ৩ লাখ ৫০ হাজার পিস, প্রিন্স গুরু মুভ ক্রিম ৫ হাজার ৭৬০ পিস, এছাড়াও নকল ওষুধ তৈরির বিভিন্ন যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয়। র্যাব-৬ খুলনার পরিচালক অতিরিক্ত ডিআইজি খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, সম্প্রতি ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল মার্কেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু নকল ওষুধ উদ্ধার করে।
অনুসন্ধানে তারা জানতে পারে ঐ নকল ওষুধ খুলনা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে খুলনার র্যাব সদস্যরা বেশ কিছু দিন গোয়েন্দা নজরদারি করে চর রূপসা এলাকায়। পরে নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার শাহনেওয়াজ সি ফুডে অভিযান চালায় র্যাব। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ উদ্ধার ও শিল্পপতি কাজী শাহনেওয়াজকে গ্রেফতার করা হয়।