মিরপুরের ভয়াবহ আতঙ্কের মুর্তিমান সম্রাট আসলামুল হক

0
3810

ASLAM 06ডোবা নালা ফুটপাথ থেকে শুরু করে সরকারী জায়গা কলেজের জমি, মুক্তিযোদ্ধাদের ভিটেমাটি দখল,
মিরপুর মাজারের জায়গা দখল, রাজধানীর
মিরপুরে এমপি আসলামের
সাম্রাজ্যে প্রতিবাদর
সাহস করে না কেউ।
আতঙ্কে তটস্থ এলাকাবাসি।
দুই হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচ বছরে স্বামী-স্ত্রীর জমি বেড়েছে ১৪০ একরের বেশি। আর বাড়তি এই জমির মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার টাকা,
যা অবিশ্বাস্য।
পাঁচ বছরে আসলামুল হকের শুধু সম্পদই বাড়েনি, বেড়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতাও। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণী পাস। আর এখন তিনি বিবিএতে (স্নাতক ব্যবসায় প্রশাসন) অধ্যায়নরত বলে
হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশও উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। উন্নয়নের এ রোল মডেলকে কেউ যেন নস্যাত করতে না পারে সে জন্য দল বা দলের বাইরে বা প্রশাসনের দুর্নীতি প্রতিরোধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা অপরাধের কারনে মন্ত্রী, এমপিকে জেল দিয়েছেন, মন্ত্রীত্ব থেকে, দল থেকে বাদ দিয়েছেন। প্রধান মন্ত্রী সবসময়ই বলেন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ কোন অপকর্ম করলে তাকে ছাড় দেয়া হবেনা। তথাপিও দেশের প্রচারবহুল পত্রপত্রিকাগুলোতে দেখা যায় এক শ্রেনীর নেতা কর্মিরা লোভের বশবর্তি হয়ে হীন স্বীয়স্বার্থ হাসিল করার নিমিত্তে দলের শুনামকে পুজি করে, আওয়ামীলীগের নাম ব্যবহার করে নানান অপকর্ম করে যাচ্ছে। ফলে শেখ হাসিনার ভীষন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে আওয়ামীলীগ ও সরকারের প্রধান হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভীষন ভেস্তে যাবে। তেমনি রাজধানীর মিরপুরের এমপি আসলাম হায়দারের নানান বিতর্কিত কর্মকান্ড ঠাই পেয়েছে দেশের প্রচার বহুল পত্র পত্রিকাগুলোতে। সে সুত্র ধরে অপরাধ বিচিত্রার ঈগল টিমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমপি আসলামুল হক কিভাবে মিরপুরের জনগনের কাছে আতঙ্কের নাম হয়েছেন, কিভাবে এমপি পদে থেকে ভয়ঙ্কর কি কি কর্মকান্ড করেছেন, কিভাবে দলের নেতা কর্মিদের হয়রানী করেছেন নীজের হীন স্বার্থসিদ্ধি অর্জন করেছেন কিভাবে রাতারাতি আঙ্গুল ফলে শুধু কলাগাছ নয় অসামান্য বিত্তভৈববের মালিক হয়েছেন। এলাকার জনগনের প্রতিক্রিয়া, এলাকার জনমানুষের কাছে কেন আতঙ্কের নাম আসলামুল হক। দেখুন ঈগল টিমের অনুসন্ধানী বিস্তারিত প্রতিবেদনে।

ASLAM 01
কে এই এমপি
আসলামুল হক
রাজধানী ঢাকা মিরপুরের ১৪ আসনের (মিরপুর) সরকারদলীয় এমপি আসলামুল হক। এমন কোন অপকর্ম নাকি বাদ নেই তার যা তিনি করেন নাই। অপরাধ বিচিত্রা দেশের প্রচারবহুল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর সুত্র ধরে এলাকায় দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়ে এ প্রতিবেদন প্রনয়ন করেন। এ প্রতিবেদনে এলাকার অনেক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যাক্তি নানা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দেয়া, নিজের একটি বাহিনী সৃষ্টি করে নানা অপকর্ম করার সুযোগ করে নিজের আধিপত্য বজায় রাখা বিভিন্ন ভাবে এলাকায় চাদাবাজি, ভূমি দখলের জন্য আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বস্তি উচ্ছেদ করা সহ নানান অপক র্মে জড়িয়ে পড়েছেন নিজের হীন স্বার্থসিদ্ধির জন্য।

ASLAM 02
এমপি আসলামুল হকের কর্মকান্ডের চিত্র
রাজধানী ঢাকা মিরপুরের-১৪ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক। এমপি হওয়ার আগে থেকেই অনেকটা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত নির্বাচিত হওয়ার পরপরই মেতে ওঠেন সরকারি ও ব্যক্তিমালিকানার জমি দখলে। রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী, মাজার রোড, বেড়িবাঁধ, গাবতলী, দারুসসালামসহ নিজের নির্বাচনী এলাকায় যেখানে সরকারি জমি পড়ে থাকতে দেখেছেন, সেখানেই থাবা বসিয়েছেন এমপি আসলাম; মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে নিজের আয়ত্তে নিয়েছেন সেই জমি। তুরাগ নদের অংশ দখল করে গড়ে তুলেছেন নিজের মালিকানাধীন ‘মায়িশা গ্রুপ’-এর একাধিক প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারিও নিয়ন্ত্রণ করাচ্ছেন শ্যালক মনসুরকে দিয়ে। আর নিজের তৈরি ১৫ সদস্যের বাহিনী দিয়ে চলে তাঁর এলাকা শাসন। আপন বড় ভাই মফিজুল হক বেবুকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেন গাবতলী বাস টার্মিনাল। সরেজমিন অনুসন্ধানে ও এলাকাবাসীর অভিযোগ থেকে এমপি আসলামের অপকর্মের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে তাঁর নিজস্ব বাহিনীর ভয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ প্রকাশ্য মুখ খুলতে সাহস পায় না।

ASLAM 10
সরকারি-বেসরকারি জমিতে থাবাঃ
অনুসন্ধানে জানা যায়, এমপি আসলাম ক্ষমতায় আসার পর প্রথম স্থানীয় বসুপাড়ায় এক বৃদ্ধার প্লট দখল করে আলোচনায় আসেন। এরপর আনসার ক্যাম্প-সংলগ্ন গণপুর্তের পুকুর ভরাট, বুদ্ধিজীবী কবরস্থান-সংলগ্ন তিন একর জলাশয় ভরাট, দারুসসালাম থানার (নতুন জায়গা) পাশে ১৫ কাঠা জমি দখল, মাজার রোডের মাথায় বাতেন নগরের ‘গাবতলী মাঠ’ দখলসহ একাধিক জমি নিজের আয়ত্তে নেন। সম্প্রতি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ তাদের মালিকানাধীন গাবতলী পশুর হাট-সংলগ্ন প্রায় ৫২ একর জমি নিয়ে জরিপ কাজ শুরু করে। সেখানে এমপি আসলামের ঘনিষ্ঠ লোকজন মূল্যবান জমি দখল করে ইট-বালু ও পাথরের দোকান বসিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সেখানে ডিএনসিসি উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে পারছে না এমপির সবুজ সংকেত পায়নি বলে।
২০১২ সালে মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজের তিন বিঘা জমি দখলের অভিযোগ ওঠে এমপি আসলামের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ওই আবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্য আসলামুল হক ঐতিহ্যবাহী সরকারি বাঙলা কলেজের প্রায় চার বিঘা জমি নিজ কম্পানি মায়িশা গ্রুপের নামে দখলে নিয়েছেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু জমির সঙ্গে কলেজের জমি মিশিয়ে ইতিমধ্যে মায়িশা গ্রুপের সাইনবোর্ডও লাগানো হয়েছে। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ৯ মে আসলামুল হককে তলব করেন হাইকোর্ট। ১৬ মে তাঁকে হাজির হয়ে এ অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। একই সঙ্গে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে বাঙলা কলেজের জমির জরিপ করে ১৬ মের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে ঢাকার জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়। আসলামুল হক পরে হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘পারিবারিকভাবে তাঁর পাঁচ-ছয় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।’

ASLAM 11
২০১০ সালের অক্টোবরে কল্যাণপুর খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে বাধা দিয়ে বেশ সমালোচনার মুখে পড়েন এমপি আসলাম। গণমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়, কল্যাণপুর খালে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে পারেনি ওয়াসা ও জেলা প্রশাসন। সংসদ সদস্যের আপত্তির কারণে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ফিরে যায়। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে এমপি আসলামের দুর্ব্যবহার করার বিষয়টিও সবার মুখে মুখে উঠে আসে।
শুধু সরকারি জমি নয়, ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখলেরও অভিযোগ আছে আসলামুলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, বুদ্ধিজীবী করবস্থান সংলগ্ন ওয়াক্ফ এস্টেটের জমিতে বালু ভরাট করেছেন এমপি আসলাম। কিন্তু এ জমিটি মতিউর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে মতিউর রহমান আর ঢুকতে পারেননি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মতিউর রহমান অভিযোগ নিয়ে গেলে দারুসসালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান তা আমলে নেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ওসি সেলিমুজ্জামান বলেন, ‘আমার জানা মতে এমন কেউ এমপি সাহেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আসেনি।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাজার রোডের একাধিক বাসিন্দা অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, আসলাম ২০০৮ সালে প্রথমবার এমপি হওয়ার পর লালকুঠি এলাকায় আব্দুল লতিফের প্লটটি দখল করেন। লতিফ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সক্রিয় কর্মী হয়েও তাঁর সেই প্লট রক্ষা করতে পারেননি। লতিফ ও তাঁর বাবা দীর্ঘ সময় থানা পুলিশের দুয়ারে ঘুরেও মামলা বা জিডি করতে পারেননি। এই কষ্টে লতিফের বাবা মারা যান।

ASLAM 13
জানা যায়, গত বছর হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) ভেতরে থাকা বস্তির শত শত বাসিন্দাকে উচ্ছেদ করেন আসলামুল হক। সরকারি সংস্থাকে সামনে রেখে এই সংসদ সদস্য তাঁর নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে বস্তির বাসিন্দাদের ঘরছাড়া করেন। একপর্যায়ে হামলা-ভাঙচুর করে এবং আগুন দিয়ে বস্তির সেই জায়গা এমপি নিজেই দখলের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ তোলে স্থানীয়রা। তবে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে পুরোপুরি সফল হননি এমপি আসলাম।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামার তথ্যের বাইরেও আসলামুল হকের জমি থাকার তথ্য মেলে। এমন ৭৬ বিঘা (২৫ একরের অধিক) জমি তিনি গত বছর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিক্রিও করেছেন। এর মধ্যে তাঁর মালিকানাধীন মায়িশা গ্রুপের নামে থাকা সাভারে (মহাসড়কের পাশে) ৫৭ বিঘা, আমিনবাজারে (মহাসড়কের পাশে) ১৪ বিঘা, মিরপুর এশিয়ান হাইওয়ের পাশে ৭১ কাঠা ও দারুসসালাম থানার গৈদারটেক এলাকায় ৩১ কাঠা জমি গত বছর বিক্রি করেন।
২০১০ সালের ২৮ অক্টোবর ড. আমিনুল ইসলাম নামের এক আমেরিকা প্রবাসী এমপি আসলামুল হকের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। তিনি অভিযোগ করেন, দারুসসালামের নন্দারবাগ মৌজায় পৌনে ১ শতাংশ জমি কিনে কেয়ারটেকারের অধীনে রেখে বিদেশে যান তিনি। ১৯৭৯ সালে তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। ওই বছর তিনি তাঁর ভাগ্নি হোসনে আরা বেগম ও তাঁর স্বামী জি এম আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে পাশের ‘বি’ প্লটে ৪৬ শতাংশ জমি কেনেন। আমিনুলের অভিযোগ, তাঁকে না জানিয়ে হোসনে আরা ও তাঁর স্বামী ওই জমি এমপি আসলামুলের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন। আমিনুল নিজে জমি বিক্রি করতে না চাওয়ায় তাঁর সাইনবোর্ড ফেলে সেখানে নিজের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন এমপি আসলাম।
জমি দখলের ব্যাপারে জানতে চাইলে এমপি আসলাম  বলেন, ‘আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সিটি করপোরেশন বা সরকারি সংস্থার জমি বেদখলে থাকলে তা উদ্ধারে সহয়তা করে আসছি। কোনো সংস্থার জমি দখল করিনি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি বা ওয়াকফর জমি দখলের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। আমি কোনো শ্রমিক নেতা বা পরিবহন নেতাকে প্রশ্রয় দিই না। এসব আমার কাজ না।’
এলাকার আতঙ্ক ‘আসলাম বাহিনী’
এলাকায় অনুসন্ধানকালে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এমপি আসলাম তাঁর নির্বাচনী এলাকায় ১৫ সদস্যের একটি বাহিনী গঠন করেছেন। সেখানে সব ধরনের কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে এমপি তাঁদের ব্যবহার করে থাকেন। এখানে স্থানীয় বিতর্কিত শুভ, স্বপন, নাক্কোয়া বাবু, হ্যাপি, জনি, রফু, ইসলাম, রাতুল, জাকির, সাব্বির, ইমরান ও বিন্দু জাকির পুরো এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছে। আনসার ক্যাম্প ও বিএডিসি এলাকায় ভাঙ্গারি বাবুল, ছালু, কাঙ্গালি ফারুক ও তানসেনকে দিয়ে মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এ বাহিনীকে এমপির দখল ও টেন্ডারবাজির কাজে ব্যবহার করা হয়। এমপি আসলামের পিএস দেলোয়ার এ বাহিনীর নেতৃত্ব দেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগে। এই বাহিনীর আতঙ্কে থাকে এলাকার সাধারণ মানুষ। এমপির ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত কাজী ফরিদুল হক হ্যাপির বিরুদ্ধে এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। আনসার ক্যাম্প, টোলারবাগ ও মিরপুর-১ নম্বর এলাকায় একাধিক মাদক মামলার আসামি শেখ মামুনকে সঙ্গে নিয়ে হ্যাপি এ কাজ করে বলে জানায় এলাকাবাসী।
এই বাহিনীর ব্যাপারে জানতে চাইলে এমপি আসলাম ‘আমি রাজনীতি করি; আমার কোনো নিজস্ব বাহিনী নেই।’
ডিএনসিসিতে
টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদ সদস্য আসলামুল হক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অঞ্চল-৪-এ ঠিকাদারির পুরোটা তাঁর কবজায় নিয়ে নেন। সেখানে নিজ নামে ঠিকাদারি করার আইনি বিধিনিষেধ থাকায় শ্যালক মনসুরকে এ দায়িত্ব দেন এমপি আসলাম। সেখানে স্বপন, ডন, পিয়ারও তাঁর হয়ে কাজ করে। তারা মিরপুর অঞ্চলের রাস্তাঘাটসহ সব ধরনের উন্নয়নকাজের দরপত্র ভাগিয়ে নিচ্ছে প্রভাব খাটিয়ে। তাদের ভয়ে সাধারণ ঠিকাদাররা দরপত্র দাখিলেরও সাহস পান না। এ ছাড়া ডিএনসিসির মিনিওয়েস্ট ট্রান্সফার স্টেশন নির্মাণ কাজও করেছে আসলামের লোকজন। শুরুতে ঠিকাদারি নিয়ে ডিএনসিসির সঙ্গে কিছুটা বিরোধ থাকলেও পরে তিনি তা মিটমাট করে নেন বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ঠিকাদার অপরাধ বিচিত্রাকে বলেন, ‘ডিএনসিসির জোন ৪-এ আসলামের কথা ছাড়া একটি কাজও কেউ পায় না। এসব কাজ থেকে তাঁকে পার্সেন্টেজও দিতে হয় বলে শুনেছি।’
এ ব্যাপারে এমপি আসলাম বলেন, ‘আমি বা আমার আত্মীয়-স্বজন কোনো ধরনের টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত না। আমার এলাকায় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হলে আমি তা তদারক করে থাকি। সিটি করপোরেশনের টেন্ডার স্থানীয় কাউন্সিলররা দেখেন।’

ASLAM 15
সঙ্গে নেই স্থানীয়
আওয়ামী লীগ
ঢাকা মিরপুর-১৪ আসনের সংসদ সদস্য আসলামুল হকের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের কারণে তাঁর সঙ্গে বেশির ভাগ দলীয় নেতারা নেই। তিনটি থানার মধ্যে মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম হানিফ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজাদুল কবির, শাহ আলী থানার আওয়ামী লীগের সভাপতি আগা খান মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মোল্লা ও দারুসসালাম থানার সভাপতি মাজহার আনামের সঙ্গে এমপির মতবিরোধ এখন আলোচনায় রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, এমপি আসলাম দলের ত্যাগী নেতাদের কোণঠাসা করে হাইব্রিড নেতাদের নিয়ে নিজের ব্লক তৈরি করেছেন। তাই বেশির ভাগ নেতারই আসলামের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে।’
গত বছরের ৯ মে মিরপুরে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতালের বিরুদ্ধে কর্মসূচির সময় সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তারের সমর্থকদের ওপর হামলা ও গুলি চালায় আসলামুল হকের ক্যাডাররা। সংঘর্ষে সাবিনা আক্তারসহ অন্তত ১৮ জন আহত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছে, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি হওয়ার আগে সাবিনার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল আসলামুল হকের। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তাঁরা প্রতিটি সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মকান্ডে একযোগে অংশ নিয়েছেন। এমপি হওয়ার পর এলাকায় রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু করেন সাবিনা আক্তার। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজও পান সাবিনার সমর্থকরা। এসব দেখে ভবিষ্যতে এলাকার দখল হারাতে পারেন এই আশঙ্কায় ক্ষুব্ধ হন আসলাম ও তাঁর সমর্থকরা। এরপর থেকেই ঢাকা-১৪ আসন কেন্দ্রিক রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ, গাবতলী বাস টার্মিনাল নিয়ন্ত্রণ, কমিটি গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আসলাম-সাবিনার বিরোধ শুরু হয়। মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হানিফসহ সিনিয়র নেতারা সাবিনা গ্রুপের পক্ষ নেন। আর যুবলীগের ক্যাডার গ্রুপটির নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি আসলাম। ফলে রাজপথ তাঁর দখলেই থাকছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, এমপি আসলামের হস্তক্ষেপের কারণেই এমপি সাবিনার ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিতে পারেনি পুলিশ। এ ছাড়া দীর্ঘদিনের রাজনৈকিত সহকর্মী মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হানিফের সঙ্গে এখন দা-কুমড়া সম্পর্ক এমপি আসলামের।
জানতে চাইলে এমপি আসলামুল হক বলেন, ‘আমার সঙ্গে দলের কোনো নেতাকর্মীর দূরত্ব তৈরি হয়নি। আমি সবার সঙ্গে দল গুছিয়ে কাজ করে যাচ্ছি।’
বিতর্কে এমপির
বিদ্যুৎকেন্দ্র ঃ
এমপি আসলামের মালিকানাধীন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে সাধারণ মানুষের জমি দখলের বিস্তর অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় অর্ধশত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা মিলে বছিলা এলাকায় কিছু জমি কিনেছিলেন। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র তাও দখলে নিয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। এ অপরাধে এমপির এ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে পরিবেশ অধিদপ্তর জরিমানা করে মামলা করেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্লান্ট করার জন্য সরকার যে পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করে দিয়েছে, এর চেয়ে বেশি জমি তিনি দখল করে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আরো জানা গেছে, আসলাম নিজের মালিকাধীন মায়িশা গ্রুপের নামে তুরাগ নদের বছিলা অংশ দখল করে একাধিক স্থাপনা করেছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে এমপি আসলাম  বলেন, ‘আমি জাতীয় স্বার্থে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছি। এখানে কারো জমি দখল করিনি। যারা বাজারদরের চেয়ে বেশি দাম চেয়েছে, তাদের কথা ভিন্ন। এখানে একটি সমিতির জমি ছিল, তাদের টাকা দেওয়া হয়েছে।’
এমপির ভাই বেবুর
নিয়ন্ত্রণে বাস টার্মিনালঃ
এমপি আসলামের ভাই মফিজুল হক বেবুর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে গাবতলী বাস টার্মিনাল। প্রায় ১০ বছর আগে জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নামে এ টার্মিনাল ইজারা এনে তা পুরোটাই নিজের কবজায় রেখেছেন বেবু। বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচিত ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাসকে নিয়ে বেবুর এই আধিপত্য। সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর তাহেরও এমপির হয়ে বেবুকে শক্তি জোগান বলে জানা যায়। এ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ অর্থ বেবু ও আব্বাসের লোকজন আদায় করে।
সম্পদ ও শিক্ষা দুটোই বেড়েছে আসলামের
ক্ষমতার পাঁচ বছরে সাংসদ মোঃ আসলামুল হকের ঘোষিত সম্পত্তিই (জমি) বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি। একই সঙ্গে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা বেড়েছে চার ধাপ।
নির্বাচন কমিশনে ঢাকা-১৪ আসনের সরকারদলীয় এই সাংসদের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য মিলেছে। তিনি ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের আগে দেওয়া হলফনামায় বলেছেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রী মাকসুদা হক ৪ একর ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ জমির মালিক। এসব জমির দাম দেখিয়েছেন ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৫০০ টাকা।
আর দশম সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ১ ডিসেম্বর জমা দেওয়া হলফনামায় বলেছেন, আসলামুল হক ও তাঁর স্ত্রী এখন ১৪৫ দশমিক ৬৭ একর (১৪ হাজার ৫৬৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ) জমির মালিক। জমির দাম উল্লেখ করা হয়েছে এক কোটি ৯২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা।
দুই হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচ বছরে স্বামী-স্ত্রীর জমি বেড়েছে ১৪০ একরের বেশি। আর বাড়তি এই জমির মূল্য দেখিয়েছেন এক কোটি ৭২ লাখ ৩০ হাজার টাকা, যা অবিশ্বাস্য।
পাঁচ বছরে আসলামুল হকের শুধু সম্পদই বাড়েনি, বেড়েছে শিক্ষাগত যোগ্যতাও। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ছিলেন অষ্টম শ্রেণী পাস। আর এখন তিনি বিবিএতে (স্নাতক ব্যবসায় প্রশাসন) অধ্যয়নরত বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
অনুসন্ধানে হলফনামার বাইরেও আসলামুল হকের জমি থাকার তথ্য মিলেছে। এমন ৭৬ বিঘা (২৫ একরের অধিক) জমি তিনি গত বছর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিক্রিও করেছেন। এর মধ্যে তাঁর মালিকানাধীন মায়িশা গ্রুপের নামে থাকা সাভারে (মহাসড়কের পাশে) ৫৭ বিঘা, আমিনবাজারে (মহাসড়কের পাশে) ১৪ বিঘা, মিরপুর এশিয়ান হাইওয়ের পাশে ৭১ কাঠা ও দারুস সালাম থানার গৈদারটেক এলাকায় ৩১ কাঠা জমি গত বছর বিক্রি করেন। জানতে চাইলে মায়িশা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক মোঃ আনোয়ার হোসেন  এসব জমি বিক্রির কথা স্বীকার করেন। কত টাকায় এসব জমি বিক্রি করা হয়েছে, তা তিনি বলতে রাজি হননি। এ টাকা কী কাজে লাগানো হয়েছে, তা মায়িশা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলামুল হক জানেন বলে আনোয়ার হোসেন জানান।
আসলামুল হক গত বছর মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজ এলাকায় জমি দখল সংক্রান্ত এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টে হাজির হয়েছিলেন। তখন আদালতে তিনি নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘পারিবারিকভাবে তার পাঁচ-ছয় হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।’
(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ১৭ মে, ২০১২)।
শুধু তা-ই নয়, মায়িশা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে আসলামুল হক রাজধানীর গাবতলী থেকে আজিমপুরে উড়াল সড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করে গত বছরের জুনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে কাজ দেওয়া হলে এতে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ এবং এই সরকারের আমলেই কাজ সম্পন্ন করবেন বলে উল্লেখ করেন।
জীবনে প্রথম সাংসদ হয়েই এত সম্পদের মালিক হলেন? জানতে চাইলে আসলামুল হক  বলেন, ‘আমি ফকিরনির বাচ্চা নই, আমার বাবা ও নানা জমিদার। তাঁদের সম্পদ আছে। ধীরে ধীরে ব্যবসা করে এ অবস্থায় আসছি।’
তাহলে হলফনামায় কেন সব সম্পদ উল্লেখ করেন নি প্রশ্নের জবাবে আসলামুল হক বলেন, ‘হলফনামায় কী উল্লেখ করেছি, কী করিনি, তা আপনার দেখার দায়িত্ব নয়। তা দেখবে নির্বাচন কমিশন ও এনবিআর।’
ঘোষিত-অঘোষিত এসব সম্পদের বাইরেও আসলামুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। তিনি এবার দশম সংসদ নির্বাচনে একই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় বেসরকারিভাবে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে গেছেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের
জমি দখলঃ
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের সীমানা দেয়ালের দক্ষিণ ও কমিউনিটি সেন্টারের পশ্চিম পাশে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থার ২৩ একর ২৩ শতাংশ জমি দখল করেছেন আসলামুল হক।
নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই জমি ২০০০ সালের ২৩ মার্চ সরকারের কাছ থেকে ৯৯ বছরের জন্য ইজারা (লিজ) নেয় মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থা।
মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, ২০১১ সালের ৫ মে সাংসদ আসলাম দলবল নিয়ে জমিটি দখল করে নেন। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যালয়টি ভেঙে দেন। বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন সংস্থার মহাসচিব হাবিবুর রহমান, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য মশিউর রহমান ও স্থানীয় বাসিন্দা আবুল হোসেনকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
মশিউর রহমান বলেন, দখলের সময় তাঁদের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা বলে অশ্লীল গালাগাল দেন সাংসদ আসলাম। একপর্যায়ে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘সাংসদ আমাকে কলার ধরে টেনে-হিঁচড়ে দারুস সালাম থানায় নিয়ে যান। আমাদের মহাসচিবকেও দাগি আসামির মতো পুলিশে তুলে দেন।’
সংস্থার মহাসচিব হাবিবুর রহমান বলেন, সাংসদ ওই দিন মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেও ক্ষান্ত হননি, তাঁদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়েছেন। মামলার বাদী হন সাংসদের ব্যক্তিগত সহকারী ইসলাম হোসেন।
কাছে সাংসদ আসলামুল হক ওই জমি দখলের কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করেন। তাঁর দাবি, ওই জমি কবরস্থানের। তিনি তা উদ্ধার করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিন দিয়ে ঘেরা দেওয়া জমিটির সামনে দুটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। একটিতে লেখা ‘সরকারি মডেল স্কুল ও কলেজ’, অপরটিতে লেখা ‘দারুস সালাম থানা কমপ্লেক্স’।
প্রবাসীর জমি দখল ঃ
আসলামুল হক মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী আমিনুল ইসলামের ৩৭ শতাংশ জমি দখল করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই জমির প্রবেশমুখে একটি সাইনবোর্ড লাগানো রয়েছে। তাতে লেখা, ‘এই জমির মালিক মোঃ আসলামুল হক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মায়িশা গ্রুপ’।
সাংসদ আসলামুলের দাবি, তিনি সেখানে ২৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ জমি প্রবাসী আমিনুল ইসলামের ভাগ্নির কাছ থেকে কিনেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আমিনুল ইসলাম টেলিফোনে বলেন, তাঁর জমির পাশে ভাগ্নির জমি। ভাগ্নির জমি কিনে পাশে তাঁর ৩৭ শতাংশ জমিও দখল করে নিয়েছেন সাংসদ। এ নিয়ে আসলামের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে চারটি মামলা করা হয়েছে।
দখল করা জমিতে
বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ
মোহাম্মদপুরের বছিলা সেতু পার হয়ে নদীর তীর ঘেঁষে ওয়াসপুর ও সাভার থানার বিশাল এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছেন সাংসদ আসলাম। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য জমির মালিকদের না জানিয়ে হঠাৎ নিচু জমি ভরাট এবং সীমানাপ্রচীর নির্মাণ করেন সাংসদ। ওয়াসপুর জামে মসজিদ কমিটির সদস্য মোঃ সেলিম অভিযোগ করেন, একই স্থানে ওয়াসপুরের মসজিদের প্রায় দেড় একর জমি ছিল। চার কোটি টাকা দাম ঠিক করে ওই জমি কিনে নেন আসলামুল হক। কিন্তু পরে ৮০ লাখ টাকা দিয়ে আর কোনো টাকা দেননি।
ওয়াসপুরের নুরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তিনি জমি বিক্রি করতে চাননি। সাংসদ ছয় কোটি টাকা মূল্যের ২০৮ শতাংশ জমি জোর করে দখল করে নিয়েছেন। কোনো টাকা দেননি।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসলামুল হক দাবি করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য তিনি এসব জমি কিনে নিয়েছেন।
ঈদগাহ মাঠ
দখল, বিক্ষোভ ঃ
২০১২ সালের জানুয়ারিতে সাংসদ আসলামের লোকজন মিরপুরে চিড়িয়াখানা সড়কের পাশে মসজিদুল আকবর ঈদগাহ ময়দান দখল করে নেন। অবশ্য পরে এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের বিক্ষোভের মুখে সাংসদ ঈদগাহ মাঠ ছেড়ে দেন। আসলামুল হক দাবি করেন, দখল নয়, স্থানীয় যুবকদের দাবির মুখে তিনি সেখানে ক্রিকেট একাডেমি করতে চেয়েছিলেন।
দাপট ঃ
২০১০ সালের ৩১ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসা ও জেলা প্রশাসন কল্যাণপুরে খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে সাংসদ আসলামুল হক গিয়ে বাধা দেন। তাঁর বাধার মুখে উচ্ছেদ না করেই ফিরে আসেন দুজন ম্যাজিস্ট্রেট। এ নিয়ে পরদিন বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। পরে ২ ডিসেম্বর সাংসদ নিজেই কল্যাণপুর খালের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।
মামলা ও জিডিঃ
সংশ্লিষ্ট থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও প্রতারণার অভিযোগে ১৯৯৬ সালে আসলামুল হকের বিরুদ্ধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, সাভার, পল্টন ও মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে পৃথক পাঁচটি মামলা হয়। একই বছর মিরপুর থানায় তিনটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয় তাঁর বিরুদ্ধে।
অবশ্য আসলামুল হক ২০০৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা ছিল, তিনটিতেই আদালত থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। অবশ্য ওই হলফনামায় তিনি দুটি মামলার কথা গোপন করেছিলেন। তবে, ২০১৩ সালের হলফনামায় পাঁচটি মামলার কথাই উল্লেখ করেন। এবং সবগুলোতে খালাস পান বলে লিখেছেন।
কেরানীগঞ্জ
থেকে গাবতলী ঃ
আসলামের বাড়ি ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া গ্রামে। গত নভেম্বরে সেখানে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আসলামুল হকের বাবা এনামুল হক মুন্সি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে ছিলেন। স্বাধীনতার পর তাঁদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এরপর তাঁরা সপরিবারে রাজধানীর গাবতলীতে তাঁর নানার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। এখানেই বড় হন আসলামুল হক।
স্থানীয় লোকজন জানান, আসলামুল হক বিগত শতাব্দীর আশির দশকের শুরুর দিকে শাহ আলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
আসলামুল হক আশির দশকে কর্মজীবনের শুরুতে যাত্রীবাসের কাঠামো (বডি) তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি এলাকায় জমি-বেচাকেনায় মধ্যস্থতার কারবারে জড়িত হন। পরে তিনি মায়িশা প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট নামে আবাসন কোম্পানি করেন। এখন তা হয়েছে মায়িশা গ্রুপ। কোম্পানির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, মায়িশা গ্রুপের এখন মোট প্রতিষ্ঠান ১১টি। আসলামুল হক এই গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং তাঁর স্ত্রী মাকসুদা হক ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
হলফনামায় হোঁচট ঃ
সাংসদ হিসেবে আসলামুল হকের ব্যক্তিগত ও মায়িশা গ্রুপের ওয়েবসাইটে তাঁর যে ব্যবসায়িক বৃত্তান্ত (প্রোফাইল) উল্লেখ করা হয়েছে, সেটার সঙ্গে হলফনামায় উল্লেখ করা আয়-ব্যয় ও ব্যাংক হিসাবের স্থিতি মেলাতে গেলে হোঁচট খেতে হয়।
হলফনামা অনুযায়ী, ২০০৮ সালে স্বামী-স্ত্রীর ব্যবসা থেকে বার্ষিক মোট আয় চার লাখ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে আসলামের দুই লাখ ৮৩ হাজার ৫০০ ও তাঁর স্ত্রীর দুই লাখ ১৫ হাজার ৭০০ টাকা।
আর, ২০১৩ সালে এসে ব্যবসা থেকে দুজনের মোট বার্ষিক আয় দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০৭ টাকা (স্বামীর নয় লাখ ৫২ হাজার ৩০০ এবং স্ত্রীর ছয় লাখ ১৫ হাজার ৭০০ টাকা)।
২০০৮ সালে আসলামুল হকের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৭০০ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর নামে ২০ হাজার ৫০০ টাকা। দুজনের নামে ৬৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের শেয়ার ও ১২০ ভরি সোনা ছিল।
আর এখন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আসলামের নামে ২৪ হাজার ৪৩ টাকা, আর স্ত্রীর নামে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫০৬ টাকা জমা আছে। দুজনের নামে এখন শেয়ার আছে ৯৪ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকার। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে দুজনের মোট বিনিয়োগ আছে ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এখন দুজনের নামে সোনা আছে ৮৩ ভরি।
পাঁচ বছর আগে আসলামের হাতে নগদ টাকা ছিল দুই লাখ ১৯ হাজার ৮০০ এবং স্ত্রীর নামে এক লাখ নয় হাজার ৫০০ টাকা। আর এখন দুই কোটি ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৯ টাকা এবং তাঁর স্ত্রীর আছে কাছে ৫৭ লাখ ৮২ হাজার টাকা। এ ছাড়া বর্তমানে আসলামুল হকের স্ত্রীর নামে এক কোটি ৪৩ লাখ টাকার বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট আছে বলে উল্লেখ করেছেন।

দুই এমপির সমর্থকদের সংঘর্ষে মিরপুর রণক্ষেত্র
১৫ গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০ ঃ
এমপি, পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্যরা হাসপাতালে

রাজধানীর মিরপুরে হরতাল বিরোধী মিছিল কেন্দ্র করে সরকারি দলের দুই সংসদ সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের ধাওয়াপাল্টা-ধাওয়ার সময় মুহুর্মুহু গুলি ও বোমায় পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। এতে ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সাবিনা আক্তার তুহিন এমপি, শাহ আলী থানার পরিদর্শকসহ তিন পুলিশসহ আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। আহত এমপিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোববার দুপুরে মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বরে স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক ও সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের সময় বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুট হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই দুই সংসদ সদস্যের সমর্থকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি সরকারি দল আওয়ামী লীগের থানা কমিটি ঘোষণার পর বিরোধ   প্রকাশ্য রূপ নেয়। ঐ সময় রোববার দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাধ্যমে মূলত বিরোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উভয়পক্ষের ক্যাডাররা সকাল থেকেই সশস্ত্র মহড়া দেয়। এদের অনেকেই ঘটনার সময় নিরাপদ আশ্রয় থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে অপরপক্ষের দিকে গুলি ছুড়তে থাকে। দুই পক্ষের মাঝে পড়ে ব্যবসায়ীরা আতংকে তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই প্রাণভয়ে পালিয়ে যান। বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গুলি ও বেধড়ক পিটুনিতে আহত হন মিরপুরের শাহ আলী থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন্সসহ তিন পুলিশ সদস্য। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ থাকায় প্রথমে তারাও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে প্রানরক্ষা করেন। পরে খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কয়েক রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন-৯৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ (৩২), যুবলীগ নেতা মনির হোসেন, ছাত্রলীগ শাহ আলী থানার সভাপতি জাহির হোসেন (২৮), আওয়ামী লীগের কর্মী মনোয়ার হোসেন (৩০), আল-আমিন (২৫), ইমন (২৭), হাবিব (২৫), কোরবান আলী (২৫), আবুল কালাম (২৪), রাফি (২০), সুজন (২০), শুভ (২০), সবুর আলী (২৬), মোঃ ইব্রাহিম (২৭) ও শামীম (২৫)। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা শংকটাপন্ন বলে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এদিন স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হকের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা ১ নম্বর গোলচত্বরে হরতাল বিরোধী সমাবেশ করছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনের নেতৃত্বে হরতাল বিরোধী আরেকটি মিছিল গোলচত্বর অতিক্রম করে। এ সময় পেছন থেকে এমপি আসলামুল হকের সমর্থকরা সাবিনা আক্তার তুহিনের মিছিলে হামলা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আসলামুল হকের সমর্থক শাহ আলী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম মোল্লার নেতৃত্বে ওই হামলা চালানো হয়। মুহুর্মুহু বোমা ও গুলির শব্দে পুরো এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। হামলায় যুবলীগ নেতা আলমগীরসহ শাহআলী থানার আহত এসআই আবদুর রশিদ সরকার গুলিবিদ্ধ হন। সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনসহ মহিলা যুবলীগের কয়েকজনের ওপরও হামলা হয়। ইন্সপেক্টর ফিরোজসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের বনফুল মিষ্টির দোকানে ঢুকে প্রাণে রক্ষা পান সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন। পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে গুলিবর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিরপুর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মাসুদ আহমেদ বলেন, ঘটনাস্থলে দু’জন সংসদ সদস্য ছিলেন। তাদের নিজস্ব লাইসেন্সকৃত অস্ত্র রয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগেরও অনেক নেতাই সেখানে ছিলেন, যাদের লাইসেন্সকৃত অস্ত্র আছে। এসব অস্ত্র সেখানে ব্যবহার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে এখনও পর্যন্ত কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেননি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। পুলিশের গুলিতে কেউ আহত হয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেননি পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ।

ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৯৩ সাধারণ ওয়ার্ডের ১৭টিতে নারী কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এসব প্রার্থী পুরুষ প্রার্থীদের দ্বারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে তারা সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারছেন না। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি কর্মী শরমিলা ইমাম। তিনি বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী।
শরমিলা ইমাম বলেন, এ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বেশিরভাগই সন্ত্রাসী। বিভিন্ন মামলার আসামি তারা। আমাকে প্রচার চালাতে তারা নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করছেন। আমার ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছেন অন্য কাউন্সিলর প্রার্থি। সাবেক এ কাউন্সিলর বলেন, এ ওয়ার্ডে ১৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। এর মধ্যে শুধু আমি নারী। অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা আমি নারী হওয়ার কারণে আমাকে নানাভাবে হয়রানি করছে। আমার লোকদের মাঠে প্রচার চালাতে দিচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সাবেক কাউন্সিলর ও লালবাগ থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহিদা মোর্শেদ। সাবেক কাউন্সিলর হলেও নারী প্রার্থী হওয়ার কারণে এবারও দলীয় সমর্থন পেতে অনেক ফাইট করতে হয়েছে তাকে। তার সঙ্গে দলীয় সমর্থন পেতে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এসএম সায়েম। তবে বিগত দিনের দলীয় পারফরমেন্সের কারণে দল আমাকে সমর্থন দিয়েছে। এখন ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে তার পক্ষে কাজ করছেন। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন না। নারী প্রার্থী হওয়ার কারণেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী সাজেদা আলী হেলেন। তিনি বলেন, নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাতে মারাত্মক বাধার সম্মুখীন হচ্ছি আমরা। আমাদের কর্মীদের মাঠে প্রচার চালাতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকেরা সমস্যা তৈরি করছেন। বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তিনি বলেন, নারী হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছেন অন্য প্রার্থীরা। তিনি এ এলাকায় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মেহেরুন নেছা। তার স্বামী কাজী আবুল বাশার দীর্ঘদিন এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। স্বামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা না করায় এবার তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। মেহেরুন নেছা বলেন, নির্বাচনী প্রতিদ্বন্ধিতা বা প্রচার চালাতে তার কোনো ধরনের অসুবিধা হচ্ছে না। নারী হওয়ার কারণে তাকে মাঠে কেউ হেয়ও করছে না।
ঢাকা উত্তরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন সাবেক সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাবেয়া আলম। তিনি গুলশান থানা মহিলা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বলেন, কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতার যোগ্যতা, দক্ষতা ও জনপ্রিয়তা থাকলেও পুরুষ প্রার্থীদের অপপ্রচারের কারণে দলীয় সমর্থন বঞ্চিত হয়েছেন। রাবেয়া আলম বলেন, এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকার পরও শুধু নারী হওয়ার কারণে আমি বিএনপির দলীয় সমর্থন পাইনি। স্থানীয় পর্যায়ের কিছু পুরুষ নেতা ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে আমার ব্যাপারে নানা রকম ভুল বুঝিয়ে আমাকে সমর্থন বঞ্চিত করেছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিএনপির সমর্থন নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন মহানগর বিএনপি নেতা ফেরদৌসী আহমেদ। দল থেকে সমর্থন পেতে তাকে কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্ধিতা করতে হয়নি। আর এখন প্রচার চালাতে পুরুষ প্রার্থীদের নানারকম হুমকি-ধমকি শুনতে হচ্ছে। আমি প্রচার চালালে নাকি তাদের ভোট নষ্ট হবে, তাই প্রচার বন্ধ করে দিতে হবে। আমার জয় নিশ্চিত, এমনটা ভেবে আমার কর্মী-সমর্থকদের প্রচার করতে দিচ্ছে না। পুশিল ক্ষমতাসীন দলের দলীয় পুরুষ প্রার্থীদেরই পক্ষ নিয়ে আমার কর্মীদের হয়রানি করছে। যত্রতত্র আটক করছে। পুরুষ প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। নোংরা কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। স্থানীয় এমপি আসলামুল হক আসলামের লোকজন তাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শিরিন রুখসানা। তিনি দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। নারী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে কি ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, কাকে কাকের মাংস খায় না কিন্তু নিজের দলীয় লোক হয়ে কিভাবে হিংসা হয়। কিভাবে ভয়ভীতি দেখায়। সেটা ভাবতেই অবাক লাগছে। স্থানীয় এমপিসহ সন্ত্রাসীরা ভয় দেখাচ্ছেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে। এ কাউন্সিলর প্রার্থী আরও বলেন, দল থেকে তাকে সমর্থন দিলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তার সঙ্গে লড়ছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ইকবাল হোসেন টিটু। প্রতিদ্বন্ধিতা করাতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু প্রকাশ্যে আমার কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দিচ্ছে তার লোকজন। স্থানীয় এমপি আসলামুল হক তার বিরোধিতা করছেন জানিয়ে বলেন-সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিকে তিনি ঘৃণা করেন বলেই তার বিরুদ্ধে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ঢাকা মহানগর মহিলা দলের মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা মিসেস স্বপ্না আহমেদ। দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচনী মাঠে জোর প্রচার চালাচ্ছেন তারা। আলাপকালে বলেন, পুলিশ তো মানুষের বন্ধু, এখন তাদের ভয়ে নির্বাচন প্রচারণা করতে পারছেন না। দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি থেকে শুরু করে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে খোদ পুলিশ। তিনি আরও বলেন, তার সঙ্গে তার স্বামী দেলোয়ার হোসেন দিলুও নির্বাচন করছেন। তার স্বামীর নামে ১২০টি মামলা রয়েছে। তাকে পুলিশ কোনো বাধা দিচ্ছে না। তবে আমার নামে কোনো মামলা না থাকলেও পুলিশি ভয় তাকে তাড়া করছে।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন রুনু আক্তার। বিএনপি তথা ২০ দলীয় জোট থেকে তাকে সমর্থন দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তিনি এ ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। ওয়ার্ডের উন্নয়নে যথাযথ চেষ্টা করেছেন। এবারও ভোটাররা তাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। জানালেন, ‘পুলিশ কী করে এমন নির্মম হয়। বর্বর হয়’। আপনার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন? নিজের দলেরই একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আরেক নারী প্রার্থী বাবুল আক্তার নামক একজন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, তিনি সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। তাকে যেন প্রচার করার সুযোগ দেয়া হয়। অযথা হয়রানি করবেন না।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন নীলুফার ইয়াসমিন নীলু। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জাড়িত থাকলেও নীলু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনী প্রচারনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন মাহমুদা বেগম। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করলেও স্থানীয় এমপি ও একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মতিউর রহমান মোল্লা তাকে নানাভাবে হয়রানি করছেন। মাহমুদা বেগম বলেন, দলীয়ভাবে তাকে মনোনীত করলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার ও তার মনোনীত প্রার্থী মতিউর রহমান মোল্লা প্রতিনিয়ত তাকে ও তার কর্মীদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এছাড়া সাবেক যুবলীগ নেতা মোরশেদ আলম বাচ্চু হত্যা মামলার আসামি চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মেসবাউল আলম সাচ্চু তার কার্মীদের মাঠে নামতে ও কাজ করতে দিচ্ছে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরশেনের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী সাবিনা জাহান বলেন, কে বা কারা বারবার তার পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছে। এনডিএফের মনোনীত এ প্রার্থীর নামে কোনো মামলা নেই। পেশায় তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। এসএসসি পাস এ প্রার্থী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-এনডিএফের কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক।
সাবিনা জাহান জানান, মনোনয়ন পেতে তার কোনো সমস্যা না হলেও নির্বাচনী প্রচারণায় তার নান সমস্যা হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডে সরাসরি কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন হাবিবা চৌধুরী। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং দলীয়ভাবেই তাকে মনোনীত করা হয়েছে বলে জানিয়ে হাবিবা বলেন, নির্বাচনে আগ্রহী পুরুষ প্রার্থী থাকলেও দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে তারা সরে দাঁড়ান। দলের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেতে তাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।
তবে নির্বাচনী প্রচারণায় পুলিশ ও সরকার সমর্থিতদের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে জানান তিনি। হাবিবা বলেন, আমার পোস্টার, ব্যানার খুলে ফেলা হচ্ছে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর সংখ্যা কম। তারপরও যেসব নারী প্রার্থী মাঠে রয়েছেন তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে খবর পাচ্ছি। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচনের অনেক ক্ষমতা দেয়া আছে। কমিশনের উচিত দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্ত মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
খোলা আকাশের নিচে কেটেছে রাত
নগর বস্তিবাসী উন্নয়ন সংস্থার দাবি, বৃহস্পতিবারের উচ্ছেদ অভিযানের কারণে বস্তির প্রায় দেড় হাজার পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। তারা রাত কাটিয়েছে কল্যাণপুর গার্লস স্কুলের পাশে শহীদ মিনার মাঠে ও বস্তির আশপাশের রাস্তায়। কনকনে শীতে আশ্রয়হীন হয়ে তারা এখন দিশেহারা। বিশেষ করে শিশুদের নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। জমিলা বেগম নামে ষাটোর্ধ্ব এক নারী জানান, ৩০ বছর ধরে এই বস্তিতে বসবাস করছেন তিনি। তার চার সন্তান। তারা সবাই এই বস্তিতেই থাকতেন। এখন সবাই গৃহহীন হয়ে শহীদ মিনার মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন। তার নাতি-নাতনি সবাই শিশু। কারও কারও বয়স পাঁচ বছরের নিচে। বৃহস্পতিবার রাতে সবাই খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটিয়েছে।
নগর বস্তিবাসী উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, আশ্রয়হীন হওয়া পরিবারগুলোতে শিশুর সংখ্যা অন্তত ৬০০ এবং বৃদ্ধ রয়েছেন অন্তত ২৫০ জন। এই শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানোর কারণে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
দিনমজুর ফারুক স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে পড়েছেন অথৈ সাগরে। বস্তির ঘরটি হারিয়ে তিনি পথে বসেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে আশ্রয় নিয়েছেন কল্যাণপুর গার্লস স্কুলের পাশে শহীদ মিনার মাঠে। কনকনে শীতের মধ্যে খোলা আকাশের নিচে রাত পার করছেন। কোথায় যাবেন তিনি জানেন না। তিনি বলেন, “আশ্রয় খুঁজব, না খাবারের সন্ধান করব কিছুই বুঝতে পারছি না। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। তিন শিশুসন্তানকে নিয়ে কুয়াশার মধ্যেই রাত পার করেছি। অভূক্ত শিশুসন্তানদের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দু-দিনে সামান্য শুকনো খাবার ছাড়া তাদের মুখে কিছুই তুলে দিতে পারিনি। সর্বশেষ ভাত  খেয়েছি বুধবার রাতে।’
তিনি জানান, তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায়। সেখানে তার কোনো আশ্রয় নেই। ঢাকায় আসার পর ১৫ বছর ধরে এই বস্তিতেই তারা বসবাস করছেন। বস্তিতেই তার তিন সন্তান রিয়াদ (১১), আরিফ (৭) ও সোহানের (৪) জন্ম। দিনমজুরি করে সামান্য আয়েই চলছিল সংসার। আশ্রয় হারিয়ে এখন তিনি কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না।
দুদককে সাংসদ আসলাম
হলফনামায় ভুল হয়েছে, দোষ উপদেষ্টার

সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় ভুল হয়েছে দাবি করে সরকারদলীয় সাংসদ আসলামুল হক সব দায় চাপিয়েছেন তাঁর আয়কর উপদেষ্টার ঘাড়ে। আর দুদক  প্রশ্ন করেছে, এত দিন কেন এই ভুল সংশোধন করা হয়নি।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ঢাকা-১৪ আসনের সাংসদ আসলামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘হলফনামায় ভুল এসেছে। আমার আয়কর উপদেষ্টা এ ভুল করেছেন। জমির পরিমাণে তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। অযুতাংশের জায়গায় শতাংশ লিখে ফেলেছেন।’
এদিকে দুদকের কমিশনার শাহাবউদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী যাঁদের তলব করা হয়েছে, তাঁদের অনেকের সম্পদের হিসাবে ‘গরমিল’ পাওয়া গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 2 =