চট্টগ্রামের আলোচিত মামলাবাজ নুরুল আবছার আনসারী ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হওয়ার পরও বহাল তবিয়তে ঘুরছে

0
718

মাধবী ইয়াসমিন রুমা ঃ চট্টগ্রামের আলোচিত প্রতারক ও কূ-খ্যাত মামলাবাজ নুরুল আবছার আনসারী ৩টি মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হওয়ার পরও প্রশাসনের নাকের ডগায় বহাল তবিয়তে ঘুরছে। এদিকে ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হলেও থানা পুলিশ অজ্ঞাত কারণে নুরুল আবছার আনসারীকে আটক না করায় তার প্রতারণা লাগামহীন ভাবে চলছে। আর তার প্রতারণার শিকার হচ্ছে নিরীহ জন-সাধারণ। প্রতারিত হওয়ার পর যদি কেউ তার এহেন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করে তাহলে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে একের পর এক হয়রানী করতে থাকে। জানা গেছে, সহজ-সরল নিরীহ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে নুরুল আবছার আনসারী নিজেকে কখনো জজ কোর্টের উকিল, ডাক্তার, সম্পাদক, সাংবাদিক, আইনসহায়তাকারী সংস্থার মহাপরিচালক, কঞ্জুমার রাইটস সোসাইটির চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি, ঢাকা প্রেসক্লাবের সম্পাদক, আবার কখনো বা আইন সহায়তা কেন্দ্র অশোক এর কেন্দ্রীয় পরিচালক পরিচয় দিয়ে চলছেন বলে জানা গেছে। এভাবেই সে সহজ-সরল মানুষকে ধোঁকা দিয়ে তাদের পকেট হাতিয়ে নিজেই কোটিপতি বনে গেছেন। সূত্রমতে, লায়লা আকতারকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে ১ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। রিয়াজ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মামলার জামিনে জজ সাহেবকে দেয়ার নাম করে ৫ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেছেন। আইন সহায়তা নামক মানবাধিকারের কথা বলে আবুল কালাম চৌধুরীর কাছ থেকে নিয়েছেন ২ লক্ষ টাকা। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত একটি মামলার বিবরণে জানা গেছে, বিগত ৭ মাস পূর্বে চট্টগ্রাম জেলার খুলশী থানার রেশমি আক্তার ওর্নিকে সাপ্তাহিক সিটিজি নিউজ নামক পত্রিকার রিপোর্টার বানাবে এবং আইডি কার্ড দেবে বলে নুরুল আবছার আনসারী মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। এরই প্রেক্ষিতে তার অফিসে ওর্নি যাতায়াত করতে থাকে। সুযোগ বুঝে নুরুল আবছার আনসারী ওর্নিকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে এবং এই ঘটনা কাউকে বললে তার রিপোর্টার বানাবে না বলেও হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ওর্নি কার্ড চাইলে বিভিন্ন টালবাহানা শুরু করেন। পত্রিকার আইডি কার্ড না পাওয়ার কারণে সে নুরুল আবছার আনসারীর কাছে তার প্রদত্ত টাকা ফেরত চায়। টাকা ফেরত চাওয়ায় তিনি ওর্নিকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেয়। পরে নিরুপায় হয়ে অসহায় ওর্নি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার বরাবর নুরুল আবছার আনসারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি গত ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার দায়ের করেন, যার নং-১১১৮/২০১৬ ইং। ধারা-নারী ও শিশু নির্যাতন অপরাধ দমন আইন ২০০০ (২০০৩) এর ৯(১)।
সূত্রটি আরো জানায়, নুরুল আবছার আনসার নির্দিষ্ট কোন চাকুরী বা ব্যবসা না থাকলেও বিশাল অট্টালিকা, কয়েকটি মাইক্রোবাস, মটরসাইকেল এবং অনেকগুলো ট্যাক্সির মালিকও বনে গেছেন। আর তার মাইক্রোবাসগুলো চট্টগ্রামের বহদ্দর হাট এবং বাঁশখালী-কক্সবাজার রুটে চলাচল করে। একাধিক পরিচয়ের অন্তরালে প্রশাসনের নাকের ডগায় নুরুল আবছার আনসারী এ গাড়িতে অবৈধ মালামাল পাচার করে চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব তথ্য উপাত্ত সহ তার বিরুদ্ধে পূর্বেও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় একাধিক সংবাদও প্রকাশিত হয়েছে।
বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, মাদ্রাসায় পড়াকালীন সময়ে নুরুল আবছার আনসারী জড়িয়ে পড়েন দেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীর সাথে। অবস্থা বেগতিক দেখে বাবা মরতুজা আলী প্রাণপণ চেষ্টা করে আনসার-ভিডিপিতে চাকরী নিয়ে দেন। ছাপাছড়ি ইউনিয়নে কিছুদিন চাকুরী করার পর জেলা ও থানা আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তারা জানতে পারেন নুরুল আবছার আনসারীর আচরণ খুবই খারাপ। একইসাথে জানতে পারেন হিজবুত তাহরীর সাথে তার যোগাযোগ আছে। তখন তাকে কর্তৃপক্ষ আনসার-ভিডিপি থেকে বহিস্কার করেন। পরবর্তীতে ৯১ সালে জীবন-জীবিকার তাগিদে বাঁশখালী থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ চট্টগ্রাম শহরে আসে নুরুল আবছার আনসারী। চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানাধীন কাপ্তাই রাস্তার মাথা পল্টনিয়ে মসজিদের পিছনে মাসিক ১শ’ টাকায় জনৈক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকেন। জীবিকার তাগিদে পুরানো তেঁতুল আর আটার সাথে পিপারমিন মিশিয়ে সমস্ত রোগের দাওয়াই (ঔষধ) বানিয়ে প্রতারণা কাজের সূচনা করেন। পুরাতন জানআলী হাট রেল ষ্টেশনে কলাপাতা বিছিয়ে জঙ্গল থেকে অপরিচিত লতা-পাতা তুলে এনে বিক্রি করে ডাক্তার  ও কবিরাজ খেতাব অর্জন করেন। এরপর থেকেই শুরু হয় তার নানামূখী প্রতারণা।
এরই সূত্র ধরে তিনি দক্ষিণ চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলার অসহায় যুবতী মেয়েদের চাকুরী দেওয়ার নাম করে শহরে নিয়ে এসে বিভিন্ন পতিতাদের কাছে রেখে প্রথমে নিজেই ওইসব মেয়েদের সতিত্ব হনন করে পরে তার নির্ধারিত নামকরা রোহিঙ্গা দালাল সারুনি, লেবুর মা, সোহাইগ্যার মা, আনিসসহ আরো কয়েকজন দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। বর্তমানে তার হাতে রয়েছে কয়েক ডজন নারী। আর এ সব নারীদের বাদী করে বিভিন্ন বিত্তশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানহানীকর বা নারী নির্যাতন মামলা করে। পরে বাদী-বিবাদী গণের সাথে আপোষ-মিমাংসার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এ ব্যবসা তার ভাগ্যের দ্বার খুলে দেয়। যার ফলে সে এখন কোটিপতি বনে গেছেন বলে জানা গেছে। অপর একটি মামলার বিবরণে জানা যায়, উক্ত নুরুল আবছার আনসারী জামায়াত শিবিরের সংগঠক। তার ফেইসবুকে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে বিভিন্ন কটুক্তি করায় গত ৩০ অক্টোবর শিক্ষা, শ্রম, বন ও পরিবেশ রক্ষা সোসাইটির চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দীন রানা চান্দগাঁও থানায় তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৩/৪৩২। অপরদিকে প্রতারণা ও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে গত ৫ অক্টোবর তথ্য প্রযুক্তি আইনে চট্টগ্রাম কোতয়ালী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন সিটিজি ক্রাইম নিউজ. কম এর প্রকাশক আজগর আলী মানিক। যার মামলা নং-৫৪/৭১২।
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে নুরুল আবছার আনসারীর ব্যাপারে আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হক এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উক্ত নুরুল আবছার আনসারী কেন্দ্রীয় পরিচালক নয়। তিনি বিভাগীয় পরিচালক। তবে পেশাগত ভাবে নুরুল আবছার আনসারী কি করেন, সেটা আমি অবগত নয়। তবে তিনি কোটিপতি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, উক্ত নুরুল আবছার আনসারী আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক শামসুল হককেও মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে।  এদিকে অপরাধ বিচিত্রায় নুরুল আবছার আনসারীর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্নভাবে এ প্রতিবেদককে একাধীক মামলার করে হয়রানি করার হুমকি দিয়ে চলেছে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

7 − two =