কারখানার ভেতর ড্রামে ভর্তি পচা মৌমাছির স্তূপ। ড্রামের ডাকনা খোলার পর মোবাইল কোর্টের লোকজন তো বটেই কারখানার লোকও দুর্গন্ধে দৌড়ে বেরিয়ে গেল। এ মৌমাছি দিয়েই তৈরি হয় ইউনানি ওষুধ। তাদের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ছাড়পত্রও আছে। রাজধানীর ডেমরায় এরকমই একটি হোমিওপ্যাথি ও ইউনানি ওষুধের কারখানা সিলগালা এবং মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাবের মোবাইল কোর্ট। র্যাব-১০ এর সহযোগিতায় অভিযান পরিচালনা করেছেন এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম। এছাড়া র্যাব পৃথক অভিযানে মুক্তিপণ আদায়ের সময় খিলক্ষেত থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার ও ডেমরা থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে দুজনকে। অপর ঘটনায় উত্তরখানের মাউসাইদ এলাকায় ভেজাল টেস্টি স্যালাইন ও ট্যাংগ কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।র্ াব-১০ এর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, কোনো ধরনের মান নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হয় ৪৯ ধরনের হোমিও ও ইউনানি ওষুধ। এর মধ্যে আশোকা, এফেনা, আমলকি, আলফালফা, এ্যাগনাসকাস্ট, অর্জুন, এভেনা স্যাটাইভা, চেলিডোনিয়াম মেজাস, ব্রাইওনিয়া এ্যালব, ইচিনেসিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ওষুধ তৈরির কারখানার পরিবেশ দেখে সেখানে ওষুধ কারখানা থাকার ধারণা করাও সম্ভব নয়। কারখানায় ময়লাযুক্ত পানির গন্ধে দাঁড়ানোই দুষ্কর। রাজধানীর মাতুয়াইলে শান্তিবাগ এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ঢাকা হোমিও ল্যাবরেটরি নামে ওষুধ প্রস্তুতকারী কো¤পানি। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর থেকে তার লাইসেন্সও আছে। একতলাবিশিষ্ট জরাজীর্ণ ভবনে ওষুধ তৈরির কারখানায় মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। হারবালের বিভিন্ন কাঁচামাল প্লাস্টিকের যেসব ড্রামে রাখা হয়েছে তার ভেতর-বাহির ধুলো আর ছত্রাকের পুরো স্তর। ওষুধ তৈরির কাঁচামাল পচে একাকার। অভিযান পরিচালনার সময়ে একটি ড্রাম খুলে পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেখতে পান, প্রায় ৮ থেকে ১০ কেজি মৃত মৌমাছি রাখা হয়েছে। এর উৎকট গন্ধে উপস্থিত সবাই দৌড়ে বের হয়ে যান। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিক আলী হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। আদালতে উপস্থিত ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের ড্রাগ সুপার অজিউল্লাহ জানান, এ প্রতিষ্ঠানের প্রায় সবগুলো ওষুধের লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু এর কোনো মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়নি। এমনকি কোনো মান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও নেই। লাইসেন্সের অনেক শর্তই লংঘন করেছেন। তিনি হোমিও ওষুধ তৈরির লাইসেন্স পেলেও তৈরি করছেন হোমিও ও ইউনানি ওষুধ। মোবাইল কোর্ট কারখানাটি সিলগালা করে মালিক আলী হোসেনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুই মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। পরে আসামি জরিমানার টাকা পরিশোধ করেন।