শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিনের বুজরুকি কারবারের ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে সরকারি আদেশ। বিভাগীয় শাস্তিপ্রাপ্ত এই কর্মকর্তা প্রাপ্যতার অতিরিক্ত বেতনা ও অন্যান্য সুবিধা নিচ্ছেন জালিয়াতি করে ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আওতাধীন স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর প্রাক্তন সহকারী প্রধান মো. নাছির উদ্দিনকে দুর্নীতি ও অসদাচরণের দায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বেতন স্কেল দুই ধাপ অবনমনের শাস্তি দেয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরো থেকে তাকে ঢাকা সিভিল সার্জন অফিসে বদলি করা হয়। ধুরন্ধর এ কর্মকর্তা শাস্তিমূলক আদেশ অমান্য করে পূর্বের স্কেলে বেতন উত্তোলন করে দুর্নীতির রেকর্ড গড়েছেন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে এ কর্মকর্তা দলীয় কানেকশনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাস্থ্য বিভাগে “দুষ্টু নাসির” হিসেবে পরিচিতি পনি। সরকার পরিবর্তন হবার পরপরই তিনি খোলস পাল্টে আওয়ামীলীগার হিসেবে নিজেকে জাহির করতে শুরু করেছেন।
সূত্র জানায়, পিলে চমকানো এই অনিয়মের তথ্য জানার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের টনক নড়ে। কেন তার বেতন অবনমিত করা হয়নি এবং পূর্বের স্কেলে বেতন দেয়া হচ্ছে জানতে চেয়ে ঢাকা সিভিল সার্জন এবং প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয় থেকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। বিষয়টি অবহিত নন বলে সংষিøষ্ট বিভাগ জানিয়ে দিয়েছে। এর পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে থলের বিড়াল। মো. নাছির উদ্দিন সরকারি আদেশ লুকিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে পূর্বের স্কেলে বেতন উত্তোলন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের পত্র পাবার পর নাসির উদ্দিনের বেতন বন্ধ রেখেছেন প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা ।
জানা গেছে , মো. নাছির স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর অর্গানোগ্রামভুক্ত কর্মকর্তা নন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এডিবি সাহায্যপুষ্ট ২য় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেবা প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ে ঢাকা অফিসে একজন অফিস সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। পরবর্তীতে তদ্বির করে ফেনী সদর হাসপাতালের প্রকল্পে সৃষ্ট পদে স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পুনঃনিয়োগ পেয়ে যোগদান করেন তিনি। প্রকল্প শেষ হলে বেশকিছু কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে সম্পৃক্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে সময়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর অর্গানোগ্রামে ৮টি শূন্য পদ বিলুপ্ত করা হয়। বিভিন্ন হাসপাতালে ৮টি স্বাস্থ্য শিক্ষা পদ সৃষ্টি করে প্রকল্পের ৮ জনকে করা হয় পদায়ন । এদের মধ্যে মো. নাছিরকে ফেনী সদর হাসপাতালে স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হয়।হাসপাতালের অর্গানোগ্রামেই তার পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পদ থেকে বদলী হতে হলে পদসৃষ্ট হাসপাতালেই তার পদায়ন হবে; অন্য কোথাও নয়। পরবর্তীতে বিধি-বহির্ভূতভাবে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর গবেষণা কর্মকর্তার শূন্য পদে নিজ বেতনে বদলী করা হয় তাকে।এ বদলী সম্পূর্ণ অবৈধ এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর নিয়োগ বিধিমালা পরিপন্থী বলে জানা গেছে। ওই সময়ে অবৈধ কাগজপত্র এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি গবেষণা কর্মকর্তা পদে মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ীকরণের আদেশ বাগিয়ে নিয়েছেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর নিয়োগ বিধিতে এ পদে সরাসরি নিয়োগের বিধান থাকা সত্ত্বেও বিধি-বহির্ভূতভাবে গবেষণা কর্মকর্তা পদে আসেন।
নাছিরের অনিয়ম এখানেই শেষ নয়; স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোর নিয়োগ বিধিতে গবেষণা কর্মকর্তার পদ পিএসসির মাধ্যমে সরাসরি পূরণযোগ্য। এ পদে পদোন্নতির সুযোগ নেই। সরকারি বিধানের অপব্যাখ্যা দিয়ে গ্রেডেশন তালিকায় নাছির উদ্দিনের পদ গবেষণা কর্মকর্তার পরিবর্তে জুনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা দেখানো হয়েছে।আলোচ্য গ্রেডেশন তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে পুনরায় সহকারী প্রধান হিসেবে অবৈধভাবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাকে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাসুদেব গাঙ্গুলী বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি হিসেবে পদায়নকৃত স্কেলে বেতনসহ অন্যান্য সুবিধাদি ভোগ করতে হবে তাকে। আগের পদের বেতন নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অবৈধভাবে উত্ত্বোলিত অর্থ সরকারি কোষাগারে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।