যাত্রাবাড়িতে রাজউকের নিয়ম বহির্ভুত বহুতল ভবন নির্মান চলছেই নোটিশ দিয়েই রাজউকের দায় শেষ, বাড়ির মালিকরা বলছে রাজউক ম্যানেজ

0
691

মোঃ আবদুল আলীমঃ ঢাকা মহানগড়ির উত্তর যাত্রাবাড়ি এলাকায় রাজউকের নিয়ম অমান্য করে একের পর এক বহুতল ভবন গড়ে উঠছে। অনিয়মিত এসব ভবনের কারনে নিকটস্ত বসবাসকারীগন পরিবেশগত সমস্যা, অস্বাস্থ্যকর অবস্থা ও ঝুঁকির শিকার। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে রাজউকের নিকট একাধিকবার ধরনা দিয়ে কোন প্রতিকার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম ভেঙে বহুতল ভবন নির্মানকারীরা দাপটের সাথে বলছে তারা রাজউককে ম্যানেজ করে ফেলছে। তাই রাজউক তাদের অনিয়মকে উপেক্ষা করে সুযোগ করে দিচ্ছে। রাজউক শুধু একটি নোটিশ দিয়ে দায় শেষ করছে। ফলে থামছে না নিয়ম বহির্ভুত ভবন গড়ার প্রতিযোগিতা।
রাজউক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি ৭২/৭/সি, উত্তর যাত্রাবাড়ি, থানাঃ যাত্রাবাড়ি, ঢাকা ঠিকানার হোল্ডিংটিতে লে-আউট নকশা অনুযায়ি সন্মুখে ১.৫০ মিটার এবং বামে ১.৫০ মিটার সেটব্যাক প্রদর্শিত আছে। অথচ বাস্তবে ভবনটির সন্মুখে ১.০০ মিটার ও বামে ০.০০ মিটার সেটব্যাক বিদ্যমান আছে। প্রধান সড়কের জমি দখল করেও ভবনটি নির্মিত হয়। এই অনিয়মের বিরুদ্ধে উক্ত ভবনটি যখন এক তলা নির্মিত হচ্ছিল তখনই মোঃ আবদুল হালিম নামে এক ভুক্তভোগী রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়েরের পর প্রায় এক বছর অতিক্রম হয়ে গেল। এই এক বছরে ভবনটির দুই তলা নির্মানের পর তিন তলার নির্মান কাজ চলছে ও রাজউকের নিয়ম পাইকারি হারে ভঙ্গ করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার জন্য বাড়ির সামনে বিউটি পার্লার, ঔষধের দোকান ও মুদির দোকান নির্মান করে তা ভাড়াও দিচ্ছে। অথচ রাজউক থেকে ভবন মালিককে একটি নোটিশ দিয়ে আর কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নাই বলে ভুক্তভোগী মোঃ আবদুল হালিম ও এলাকার অন্যান্যরা এ প্রতিবেদককে জানান। এলাকাবাসিগন আরও জানান যে, যখন ভবনটি এক তলা নির্মান হচ্ছিল তখন রাজউক ব্যবস্থা নিলে এর প্রতিকার করা সম্ভবপর ছিল। এখন তিন তলা নির্মান করার কারনে রাজউকের পক্ষে অনিয়মিত অংশ ভাঙা কঠিন হয়ে পড়ছে। এদিকে বাড়ির মালিক দাপটের সাথে এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে রাজউক তার কাছে ম্যানেজ হয়ে গেছ। অর্থাৎ তিনি নাকি রাজউককে কিনে ফেলছেন। তাই তিনি যত অনিয়মই করুন না কেন রাজউক তার কেশের আগাও ধরতে পারবে না। রাজউকে যোগাযোগ করলে এ ব্যাপারে এ প্রতিবেদককে এক বছর আগ থেকে বলা হচ্ছে অনিয়মিত এই ভবনের ব্যাপারে শিঘ্রই অভিযান পরিচালিত হবে। অথচ এক বছর অতিক্রম হলেও ভুক্তভোগীরা অভিযান বা এর প্রতিকারের মুখ দেখছে না।
একই চিত্র ৭২/৭/সি/১, উত্তর যাত্রাবাড়ি ঠিকানার ভবনটির। রাজউক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি ভবনটির লে-আউট নকশা অনুযায়ি সন্মুখে ১.৫০ মিটার, পশ্চাতে ১.১৬/১.০০ মিটার, ডানে ০.৮১ মিটার, বামে ১.০০/০.৮০ মিটার সেটব্যাক প্রদর্শিত আছে। কিন্তু বস্তবে সন্মুখে ১.০০ মিটার, পশ্চাতে ১.০০ মিটার, ডানে ০.৩০ মিটার, বামে ০.৩০ মিটার সেটব্যাক বিদ্যমান আছে। অর্থাৎ রাজউক অনুমোদিত নকশার ব্যাপক ভঙ্গ করে নির্মিত হচ্ছে বহুতল ভবনটি।
৭২/৮/সি/১ উত্তর যাত্রাবাড়ি হোল্ডিং। রাজউক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি হোল্ডিংটির লে-আউট নকশা অনুযায়ি সন্মুখে ১.৫০ মিটার, পশ্চাতে ২.০১/১.০০ মিটার, ডানে  ২.০১/০.৮০ মিটার, বামে ০.৮০ মিটার সেটব্যাক প্রদর্শিত আছে। কিন্তু বাস্তবে ভবনটির সন্মুখে ০.০০ মিটার, পশ্চাতে ০.৫০ মিটার , ডানে ০.৩০/০.৫০ মিটার, বামে ০.৪০ মিটার সেটব্যাক বিদ্যমান। অর্থাৎ এখানেও রাজউকের নকশার ব্যাপক ভঙ্গ করা হয়েছে। এসব অনিয়মের ব্যাপারে রাজউক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে রাজউক এসব ভবন মালিকদেরকে একটি করে নোটিশ দেয় মাত্র। এর পর থেকে আর কোন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি বলে এলকাবাসিদের অভিযোগ। এভাবে দেখা যায় ভুক্তভোগীরা নিয়ম বহির্ভুত ভবনগুলোর বিরুদ্ধে রাজউক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিচ্ছেন, রাজউক ভবন মালিকদেরকে নোটিশ দিচ্ছে এবং ভবন মালিকরা নিয়ম অমান্য করে নির্মান কাজ চালিয়েই যাচ্ছেন। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায় ভবনগুলোর কোনটি পাঁচ তলা কোনটি ছয় তলার নির্মান কাজ চলছে। এক সময় অনিয়মিত এসব ভবনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা রাজউকের পক্ষে সম্ভবপর হবে না বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা এ প্রতিবেদককে অভিযোগের সাথে জানান, উল্লিখিত তিনটি ভবনের মালিকগন দাপটের সাথে বলছেন যে, তারা রাজউককে ম্যানেজ করে খেয়ালখুশিমতো নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে রাজউকের বক্তব্য একই। অর্থাৎ অনিয়মিত অংশ ভাঙার জন্য শিঘ্রই অভিযান শুরু হবে। তবে এই শিঘ্র কবে তা এলকাবাসি ও ভুক্তভোগীরা দেখতে চান। আগামি সংখ্যায় উত্তর যাত্রাবাড়ি এলাকার আরও অনেক বহুতল ভবনের অনিয়ম সম্পর্কে প্রতিবেদন থাকছে।(চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten − 6 =