বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন জাতীয় শিশু দিবস

3
1094

লেখক: এস. ই ইসলাম
যথাযথ ভাব গাম্ভীর্য ও শ্রদ্ধাবনতচিত্রে উদযাপিত হল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮ তম জন্মদিন। ১৯২০ সালে ১৭ই মার্চ তিনি বাংলার মাটি, তদানীন্তন ভারতীয় উপমহাদেশের বঙ্গপ্রদেশের অন্তভূক্ত ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা সায়রা খাতুন। তিনি ছিলেন পরিবারের তৃতীয় সন্তান। সাত বছর বয়সে শিশু মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা শুরু করেন। ৯ বছর বয়সে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। তিনি ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেনীতে ভর্তি হন এবং ঐ স্কুল থেকেই তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৩৯ সালে স্কুলে পড়াশোনা করা অবস্থাতাতেই তিনি তার রাজনীতির প্রথম পর্ব শুরু করেন। শুরু হল মহান এ নেতার রাজনীতির পথচলা। সে বছর ঐ স্কুলটি পরিদর্শনে এসেছিলেন তদানীন্তন বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হক এবং পরবর্তীতে বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন সোহরাওয়ার্দী। স্কুলের ছাদ সংস্কার কার্য সংক্রান্ত একটি দাবী নিয়ে ছাত্র মুজিব সেইদিন তাদের কাছে যান একটি ছাত্রদল গড়ে। তার জীবনের প্রথম নেতৃত্ব সেইদিন থেকে শুরু হয়। ১৯৪০ সালে তিনি ভারতীয় মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগদান করেন। ১৯৪২ সালে তিনি এইচ, এস, সি পাস করার পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ‘ল’ পড়ার উদ্দেশ্যে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেন তিনি এ জাতির জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা, জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা, একজন সফল রাজনীতিবিদ, ইতিহাসের কিংবদন্তী মহানায়ক। ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৫৪ এর যুক্তফ্রান্টের নির্বাচন, ৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬ এর ৬ দফা, ৬৯ এর গণঅভ্যুথান ৭০- এর নির্বাচন এবং সর্বশেষ স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি নেতৃত্ব দেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাল্যকাল থেকেই ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু ও পরপকারী। বাংলার মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ছিল মহান এ নেতার একমাত্র লক্ষ্য। বাংলা ভাষাকে তিনি ভালবেসেছেন, তিনি ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাংলা ভাষার বাস্তব দ্রষ্টা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষার মাঝে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন। রবিঠাকুরের স্বপ্নচারী আবেগের একটি চাওয়া ছিল বাংলাভাষাবাসীর প্রতি, যেন তাঁর ভাষাকে বঙ্গজনেরা ভালবাসেন এবং এ ভাষাকে যেন সংরক্ষন করা হয়। এই স্বপ্নের চাওয়াকে বাস্তবরুপ দিয়ে বিকাশিত করলেন, ঘুমন্ত বাংলার মানুষকে জাগালেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাই বলা যায়, বাংলার মূল স্বপ্ন¯্রষ্টা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বাস্তব দ্রষ্টা মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মমতা ছিল অপরিসীম। একটি শিশু জন্মগ্রহন করে ধীরে ধীরে যুবকে পরিনত হয়। শিশু তার নিজের মেধাকে বিকাশিত করে জাতির মাঝে ছড়িয়ে দেয় মনুষত্বের সুষমা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব  শিশুদের সুন্দর ভবিষৎ ও মনুষত্বের বিভায় গড়ে উঠার বিষয়ে যতœবান ছিলেন এবং এর যে কি সুফল তা তিনি জানতেন। তাঁর জন্মদিনকে তাই বর্তমান সরকার “জাতীয় শিশু দিবস ” ঘোষনা করেছেন। ২০০৯ সাল থেকে মহান এ নেতার জন্মদিন দিনটি “ জাতীয় শিশু দিবস” হিসাবে স্বগৌরবে উদযাপিত হচ্ছে। বাংলার গৌরবময় সোনালী ইতিহাসের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। স্বাধীনতার বিজয় আনন্দের, ভাব প্রকাশক আমার আমিত্ব তোমার তুমিত্বের মাঝে যে সুখ ও আনন্দ আছে এর মাঝে রয়েছে মহান এ নেতার অদ্ভূত অধিকার। বাঙালি জাতির জীবনে একজন মুজিব এসেছিলেন যিনি সমগ্র জাতিকে জয় করলেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব একক সত্তা। বাংলাভাষা এবং বাংলাদেশ তার অবিনাসী দেশপ্রেমের কালজয়ী সৃষ্টি, যে সৃষ্টি সুখের উল্লাস তার জীবনে থেকে ঝড়ে গেছে ২৪টি বছর। ১৯৪২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত দীনক্ষন বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের সাধানা¯œাত জীবন। সংগ্রাম ও জেলে খেটে আমিততেজী এ বীর খাটি সোনায় পরিণত হয়েছেন এবং ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলা স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে তিনি সফল হয়েছেন। সফল হয়েছেন বাংলার মানুষ। সবদিক থেকে স্বার্থক হয়েছেন রবি ঠাকুর। ।
আজ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও রবী ঠাকুরের স্বপ্ন¯œাত সোনার বাংলা, বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের বাস্তব বাংলাদেশ একটি অবিরাম গতিতে ছুটে চলা ‘বাংলার শ্রী’ও পুষ্টিবাহী’ ট্রেন। এই বাংলা আজ সারা পৃথিবীতে তার আপন মহিমায় জয় করে নিয়েছে ভিনদেশী ভাষাভাষীদের হৃদয়। বাংলা ভাষা আজ যেন এক বহতানদী, বয়ে চলেছে দেশ হতে দেশান্তরে। এ নদীর যে জলধারা তা শুধু বঙ্গবন্ধুময় এবং তার যে তীবœতা তা বয়ে চলবে যুগ হতে যুগন্তারে। আমাদের আগামী প্রজন্মও বহিবিশ্বের অন্যান্য ভাষাভাষীদের মত নিজেরাও স্বভাষায় বিকাশিত হবে এবং সুনাগরিক হয়ে দেশসেবা করবে, জীবনকে রাঙ্গাবে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আর্দশ উত্তরসূরী হয়ে, শিশু দিবসে এই আমাদের প্রত্যাশা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight − 1 =