চাঞ্চল্যকর ভুয়া তথ্য দিয়ে রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকান্ড !

0
1530

চৌধুরী হারুনুর রশীদ,রাঙ্গামাটি । মধ্য বয়সের তিন সন্তানের জননী তাহেরা বেগমের স্বামীর নাম আক্তার হোসেন মজুমদার। পরিচয় গোপন করে নিজের প্রবাসী প্রেমিক কামাল আহমদকে স্বামী সাজিয়ে ভুয়া পাসপোর্ট করেন তাহেরা বেগম। ওই ভুয়া পাসপোর্টের স্বামী কামাল আহমদ প্রবাসে মারা গেছে কাগজে উল্লেখ করেছে। ‘বিধবা’ তাহেরা বেগম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন কর্মসূত্রে পরিচিত ইউসুফ নামের এক যুবকের সাথে। ডিসেম্বর মাসে ছয়লক্ষ টাকা কাবিন দিয়ে বিয়ে করে নতুন দম্পতি হানিমুন সেরেছেন সিলেটের জাফলং। তাদের সংসার জীবন এভাবেই কেটে যেতে পারত। কিন্তু না, মাত্র চার মাসের স্বপ্নীল রঙিন সংসারে বয়ে যাওয়া হালকা দখিনা হাওয়ায় কিঞ্চিৎ ঝড়ো বাতাসের পূর্বাভাস পাচ্ছিলেন স্বামী ইউসুফ। আর কৌশলে নিজের হাতিয়ে নিয়েছে তথাকথিত স্ত্রীর পাসপোর্টসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র। বৈধ স্বামী মোক্তার হোসেন হলেও কাগজপত্রে এক নারীর তিন স্বামী !
অনুসন্ধানে জানাগেছে পাসপোর্ট নং বিপি-০১৮২০৪৮ নাম তাহেরা বেগম কোব্বাতের ঘোনা ৭নংওয়ার্ড কাপ্তাই । পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৫ইং জন্ম তারিখ ১৫ মার্চ ১৯৯৩ এফ-রাঙ্গামাটি মেয়াদ উক্তীর্ণ হবে ১৪ এপ্রিল ২০২০ সাল । উক্ত পাসপোর্ট গ্রহনকারী তাহেরা বেগম স্বামী-কামাল আহম্মদ দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে বৈধ স্বামী মোক্তার হোসেন। পাসপোর্টে কামাল আহম্মদকে জন্ম নিন্ধনে স্বামী দেখানো হলেও তিনি সৌদিয়া কর্মরত। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সহকর্মী ইউছুফ রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কমকর্তা-কর্মচার্রী যোগসাজশে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে এ পাসপোর্ট প্রদান করেন।
অপর দিকে একের এক বেরিয়ে আসতে থাকে নেপথ্যের সব চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিষয়টি টের পেয়ে যান চতুর তাহেরা বেগম। ফলে নতুন স্বামীর নগদ টাকা-স্বর্ণালংকার নিয়ে খুব দ্রুত সটকে পরেন তাহেরা বেগম।
কাহিনী এখানেই শেষ নয়। এবার তাহেরার সাথে যুক্ত হন নেপথ্যেও হোতা মামুন। দু’জনে মিলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নতুন স্বামী ইউসুফের ছবি বিকৃত করে তার ইনবক্সে দিতে থাকেন। বিভিন্ন হুমকি-ধমকিতে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগী ইউসুফ পুরো বিষয়টি তুলে ধরে আদালতে মামলা (৫২/২০১৭) ঠুকে দেন তাদের বিরুদ্ধে। বিচারক বাদীর আরজি সরাসরি আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। তারা এখন জামিনে আছেন। ভুক্তভোগী ইউসুপের দাবী-তাহেরা বেগম একটি প্রতারক চক্রের সদস্য। গণমাধ্যমে তার মুখোশ উন্মুচন করা প্রয়োজন। যেকারণে তার দাবীর স্বপক্ষে সকল কাগজপত্র তুলে দিলেন এই প্রতিবেদকের হাতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আনোয়ারা থানার চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কারখানার কর্মচারী আক্তার হোসেন মজুমদারের স্ত্রী তাহেরা বেগম। একই এলাকায় বসবাস করেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। পারিবারিক সূত্র জানায়, তাহেরা বেগম সংসার জীবনের প্রথম থেকেই একটু বেপরোয়া চলাফেরা। অনেকটা পরিবারের অবাধ্য। বিষয়টি স্বীকার করে তাহেরা বেগমের ভাসুর দেলোয়ার হোসেন বলেন-‘আমরা প্রায় দিনই কোন না কোন অভিযোগ পাচ্ছি। ওই মহিলার বেপরোয়া চলাফেরার কারণে আমরা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হয়।’ তাহেরা বেগম দ্বারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে আইনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন-‘পত্র-পত্রিকায় দেয়ার কি দরকার। বিষয়টি সম্মানের।’ তবে কোন সম্মানবোধের ধার-ধারেনা তাহেরা বেগম। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন-‘বিয়ে তো দূরের কথা, আমি ইউসুফ নামের কাউকে ছিনি না।’ পাসপোর্টে উল্লেখিতস্বামী কামাল আহমেদ সম্পর্কে বলেন-‘কামাল আমার স্বামী না। কামাল আহম্মদ আমার ভাই থাকে সৌদি আরবে । আর পাসপোর্টে যদি আমার ভাইয়ের নাম স্বামীর জায়গায় লিখে থাকে সেটা আমাদের পরিবারের ব্যাপার। আপনাদের এত ঘাঁটাঘাটির দরকার কি ?’
অপরদিকে রাঙ্গামাটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বৈধভাবে করতে গেলে হয়রানীর স্বীকার হতে হয়। “ডিএসবির মাথায় লবন রেখে’বরই খাচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা”। একজন ভুক্তভোগী মাহাবুর রহমান মিলন বলেন গ্রাহকদের হয়রানী সীমা নেই ।তার মেয়ের পাসপোর্ট করতে গিয়ে আমাকে সাতঘাটের পানি দেখাইছে, টাকা গেছে অতিরিক্ত। ককসবাজার ও তিনপার্বত্য জেলার পাসপোর্ট প্রদান করেন একমাত্র রাঙ্গামাটির আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস । রাঙ্গামাটি পাসপোর্ট অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক বলেন,দেশের সব পাসপোর্ট অফিসে অনলাইনে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করা হয় । তিনপার্বত্য জেলা ককসবাজার এলাকার লোকজনের পাসপোর্ট করতে পুলিশের তদন্ত রিপোর্টের জন্য আমরা মতামত দিয়েছি । এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে“দালালের ভুমিকায় তদন্ত রিপোর্টসহ চুক্তিভিক্তিক(কন্ট্রাকে) পাসপোর্ট প্রদানের অভিযোগ আসছে। এছাড়া ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে স্থায়ী বাসিন্দার জন্ম নিবন্ধন তথা সার্টিফিকেট নিয়ে অনেক রোহিঙ্গা পাসপোর্ট করেছে । এই সুযোগে কাজে লাগিয়ে মো: আব্দুল মোক্তালেব সরকার শাস্তিমুলক বদলী হিসাবে সুনামগঞ্জ থেকে রাঙ্গামাটি আসেন।তার আগেও  আলেয়া বেগম -আলী বাড়ী বার্মা পাসপোর্ট করতে গিয়ে রাঙ্গামাটি পাসপোর্ট অফিসে ধরা পড়েছে । ঔ  রোহিঙ্গা আটক ও মামলা হয়েছে ।
২১ মার্চ ২০১৭ইং পার্বত্য এলাকার স্থায়ী নাগরিক হিসাবে তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ৮(১) ধারার ভিক্তিতে ‘ফরম’ক  উল্লেখিত পাসপোর্টের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য আবেদন দাখিল করা হয়।  প্রতিবেদক আবেদন নিয়ে আঞ্চলিক কার্য্যলয়ে গেলে কিছুক্ষণ পর আইডি কার্ড দেখতে চেয়ে বসে। আঞ্চলিক পরিচালক নিজের অপরাধকে আড়াল করতে নানা ধরণের কৌশল অবলম্বন শুরু করে। এক পর্যায়ে আব্দুল মোক্তালেব বলেন দেখাইতে পারবো তবে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া যাবে না। তিনি বলেন আমি কোন তথ্য দিতে বাধ্য নই ,গোপনীয় তথ্য ফাস করতে পারবো না। তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন ডিএসবি পরে তিনি আবেদন লিখে দেন ডিএসবিতে যোগাযোগ করুন ।প্রতিবেদক ডিএসবির কাছে পর পর দুইবার সরেজমিন যোগাযোগ করা দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত কর্মকর্তা জানান,আমরা তদন্ত  প্রতিবেদন ফাইলসহ পাসপোর্ট অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হয় ।
রাঙ্গামাটি জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিষয়টি জানালে তিনি বলেন রাঙ্গামাটি পাসপোর্ট অফিসের ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ অনেক পেয়েছি । রাঙ্গামাটি দুর্নীতি দমন কমিশনের সম্মলিত কার্য্যলয়ে উপ-পরিচালক হাজী শফিকুর রহমান ভুইয়াকে জানানো হবে ।
উল্লেখ্য বন্যা দেওয়ান পিতা-মিন্টু দেওয়ান বর্তমান বসাবস করে চট্রগ্রামে। এসআই শাহলাল তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য চার হাজার টাকা নিয়েও নেগেটিভ রিপোর্ট দিয়েছেন । বন্যা দেওয়ান রাঙ্গামাটি স্থায়ী বাসিন্দা হয়েও চাকমা সার্কেল চীফের সার্টিফিকেট দিয়ে এখনো তদন্ত প্রতিবেদন দেয়নি পুলিশ। রাঙ্গামাটির শহরে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী জানে আলম  অভিযোগ করেন ,তদন্তের নাম  দীর্ঘদিন ধরে হয়রানী করা হয়।  তদন্তেরকালীন সময়ে যত তাড়াতাড়ি নগদ নারায়ণ দেয়া যায় ততই মঙ্গল । কারণ তদন্তের আগে তাহেরা বেগমের মত চুক্তি করতে হয় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে । আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীর অবৈধ পথে যোগাযোগ করায় বন্যা দেওয়ান বৈধভাবে পাসপোর্ট করতে ব্যর্থ হয়েছে ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one + 7 =