ত্রাণ তৎপরতায় বাধা প্রদান একদলীয় দৃ:শাসনেরই বর্ধিত প্রকাশ : রিজভী

0
1391

রিপোর্টারঃ নানা, সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বা সংগঠনের ত্রাণ তৎপরতায় বাধা প্রদান করা একদলীয় দৃ:শাসনেরই বর্ধিত প্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সুনামগঞ্জের উপদ্রুত এলাকায় যে দুর্ভিক্ষের ছায়া নেমে এসেছে সেটি আরো দুর্বিষহ মাত্রায় উপনীত হবে শুধুমাত্র সরকারের মৌনতা ও নিষ্ক্রিয়তায়। এরা ক্ষুধার্ত মানুষের উপরেও শাসনযন্ত্রের দমন ক্ষমতা কাজে লাগায়। হাওড় পাড়ের দূর্গত মানুষদের ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রেও দলীয়করণ করা হচ্ছে। প্রায় অর্ধকোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে গেলেও সরকারের প্রধানের ভাবখানা যেন এমন, যে দেশে কিছুই হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রিজভী বলেন, দেশের সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জসহ হাওড় এলাকায় পাহাড়ী পানির ঢলে ব্যাপক বিপর্যয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার উপদ্রুত মানুষ এক ভয়াবহ মানববিপর্যয়ের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। অধিকাংশ উপদ্রুত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারগুলোতে সরকারের তরফ থেকে কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। হাওড় পাড়ের বিপন্ন মানুষগুলোর কাছে পৌঁছায়নি সরকারের কোন সহায়তা। নেত্রকোণায় হাওড় এলাকায় সরকারের এক মন্ত্রী মাত্র গুটিকয়েক দুর্গত মানুষকে ত্রাণ দিয়ে ঢাকায় চলে এসেছেন। এসময় হাজার হাজার নিরন্ন মানুষ ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলেও মন্ত্রী হাত নাড়িয়ে চলে আসেন। ভোর থেকে হাজার হাজার মানুষ খোলা বাজারে চাল ও আটা কেনার জন্য লাইনের দাঁড়ালেও দুইশো জনের বেশী তা কিনতে পারবেন না। ফসলহারা নিরন্ন ক্ষুধার্ত মানুষ নিরাশ হয়ে খালি হাতে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করছেন। সামান্য চাল বা আটার জন্য হাহাকার চলছে।
তিনি বলেন, সরকার হাওড় পাড়ের এই পাহাড়ী ঢলে বিধস্ত জনপদকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকেও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে দিতে বাধা দিচ্ছে। পাহাড়ী ঢলের প্রথম আঘাতেই বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নেত্রকোণা জেলার দুর্গত এলাকার মানুষদের পাশে দাঁড়ান। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান এর নেতৃত্বে বিএনপি’র ত্রাণ প্রতিনিধি দল ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য আগামীকাল শুক্রবার সুনামগঞ্জে দিন ধার্য ছিল। গতকাল আবদুল্লাহ আল নোমান এর নেতৃত্বে বিএনপি’র জাতীয় ত্রাণ কমিটি ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য সুনামগঞ্জে যেতে প্রস্তুতি গ্রহণ করলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের অজুহাত তুলে স্থানীয় প্রশাসন বিএনপি’র ত্রাণ প্রতিনিধি দলের সফর বানচাল করে দেয়। জরুরী পরিস্থিতিতে উপদ্রুত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো এই মূহুর্তে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এখানে কোন অজুহাত তুলে সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বা সংগঠনের ত্রাণ তৎপরতায় বাধা প্রদান করা একদলীয় দৃ:শাসনেরই বর্ধিত প্রকাশ। বিএনপির এই নেতা বলেন, এই মহাদুর্যোগময় পরিস্থিতিতে হাওড় প্রকল্পের মহাপরিচালকসহ ৯ জন কর্মকর্তা বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। সুতরাং মানুষের অসহায় অবস্থাকে নিয়ে সরকার যে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করছে সেটি আজ সকলের কাছে স্পষ্ট। চারিদিকে হাহাকার, ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারী, ক্ষেতের একমাত্র বোরো ফসল ঢলের পানিতে ভেসে যাওয়া খাদ্যহারা-জীবিকাহারা মানুষের জীবন যেখানে বিপন্ন হতে চলেছে, মাছ-হাঁসসহ সমস্ত জলজ প্রাণী এবং গুরু-মহিষ-ছাগলের যখন মড়ক শুরু হয়েছে তখন সরকারের ত্রাণ সচিব বলছেন-অর্ধেক মানুষ মারা না গেলে সেখানে দুর্গত এলাকা ঘোষনা করা যাবে না। এই বক্তব্য অসহায় মানুষের প্রতি ক্ষমতাসীনদের কঠিন বিদ্রুপ। একমাত্র ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই এধরণের মন্তব্য করার সাহস পায় আমলারা। যাদের সমর্থনে আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে তারা যাতে বিরুপ না হয় সেজন্য পানিতে ইউরেনিয়াম বর্জ্যরে কারনে বিষক্রিয়ার বিষয় নিয়েও ক্ষমতাসীনরা জনগণের সামনে স্পষ্ট কিছুই তুলে ধরছে না। ক্ষমতাসীনদের মহাবিজ্ঞানীরা কেন হাওড় অঞ্চলের ব্যাপক মড়কের কারন ব্যাখা করছেন না তা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। পাহাড়ী ঢলে সংশ্লিষ্ট এলাকা বিপন্ন হওয়ার কারন মনুষ্য সৃষ্ট। ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির কারনেই উক্ত এলাকাগুলোতে মানুষের দুর্ভোগ ব্যাপকতা লাভ করেছে।রিজভী বলেণ, বিএনপি’র পক্ষ থেকে অবিলম্বে পাহাড়ী ঢলে আক্রান্ত হাওড় এলাকাগুলোকে দুর্গত এলাকা ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি দেশের সকল বেসরকারী সংস্থা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ দেশের বিত্তশালীদেরকে দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাচ্ছি। আমরা আরো আহবান জানাচ্ছি এক্ষেত্রে সরকারী প্রশাসন যেন কোন বাধা সৃষ্টি না করে।বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বলে এসেছি যে, বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগ বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ক্ষমতাসীনদের বেলায় এক আইন আর বিরোধী দলের বেলায় আরেক আইন প্রয়োগ হয়। ফলে ন্যায় বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে। গতকাল সরকারের আইনমন্ত্রী বলেছেন-পৃথিবীর কোন দেশের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে এত কথা বলেন না। আমরাও মন্ত্রী মহোদয়কে বলতে চাই-পৃথিবীর কোন দেশে বিচার বিভাগের ওপর শাসন বিভাগের এত হস্তক্ষেপ করে তার নজীর কী কোথাও আছে ? এখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, আর সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক দন্ডিতরা বীরদর্পে মন্ত্রীত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। এমন নজীরও কোন দেশে আছে কী ?
তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এর ভাগিনা রাশিদুর রহমান রশোকে গত ২০ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ বেধড়ক লাঠিপেটা করে গুরুতর আহত করেছে। পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা’কে দেখে গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের বাসায় ফেরার পথে ফতুল্লা মডেল থানার এএসআই তারেক এর নেতৃত্বে পুলিশ এর একটি দল রশোকে গাড়ী থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করে। সে পুলিশের নিকট তার মা এর অসুস্থতার কথা জানিয়ে কাকুতি মিনতি করলেও নাছোড় পুলিশ তাতে কর্ণপাত করেনি। পুলিশ রশোকে ছেড়ে দিতে হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। নির্দয়ভাবে পেটানোর পর রশো গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ভর্ত্তি করা হয়। সবচেয়ে দু:খের বিষয়-রশো হাসপাতালে এতটাই গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিল যে, ২১ এপ্রিল মৃত্যুবরণকারী মা’কে দেখতে যাওয়া কিংবা মায়ের জানাযায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয়নি রশোর। আমি পুলিশের এধরণের ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি করছি।সঙবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনরে উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান সুরুজ, তকদির হোসেন জসিম প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 2 =