সচিব আবুল হাসনাত চৌধুরী সহ ৪ জনের বিরুদ্ধে বিসিআইসির টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের ১৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সম্পদ লুপাটের অভিযোগ

0
1296

বিশেষ সংবাদদাতা
বিসিআইসির সুনামগঞ্জের টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের প্রায় ১৬ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সম্পদ লুপাট হয়েছে। মজুদকৃত চুনাপাথরও মুল্যবান যন্ত্রপাতি ভুমি সহ ওই সকল মালামাল সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে ও অবহেলায় নির্ব্রিগ্নে লুপাট করা হয়েছে।  এ নিয়ে স্থানীয় ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে  সম্প্রতি একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট ফ্যক্টরী লি. সাবেক এমডি আবুল হাসনাত চৌধুরী, উপ-ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন, কর্মকর্তা রাসেদুল হাসান, কর্মকর্তা বদরুজ্জামান  এবং তাহিরপুরের টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প তাহিরপুরের টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলামের যোগসাজসে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের যন্ত্রপাতি ও  মজুদকৃত চুনাপাথর লুপাট  করা হয়েছে।  অভিযোগে উল্ল্যেখ করা হয়, টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পে ২২ হাজার মে. টন চুনাপাথর মজুদ ছিল এর মধ্যে ১০ হাজার মে.টন অসৎ কর্মচারীরা বিক্রয় করেছে এবং দায়িত্বে অবহেলা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাটি চাপা এবং চুরি হয়েছে আরো কমপক্ষে ১০ হাজার মে.টন চুনপাথর। সব মিলিয়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার চুনাপাথর লুপাট করা হয়েছে। প্রকল্পের ৮০০ কিলোওয়াটের দুটি জেনারেটর মেশিন ছিল। যার বাজার মূল্য ৩ কোটি টাকা। এই মেশিনগুলোর যন্ত্রাংশ খুলে নেওয়া   হয়েছে। প্রকল্পের ভেতরে ৩৩ কেভিএ ট্রান্সফরমার ও একটি কন্ট্রোলবোর্ড ছিল। নিরাপত্তার অভাবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে যন্ত্রাংশগুলো চুরি হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৪৫ লাখ টাকা।প্রকল্পের অভ্যন্তরে ১২০ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্রেন গাড়ি ছিল। ২০১৬ সালের অক্টোবর নভেম্বর মাসে এই ক্রেনটির অনেক যন্ত্রাংশ চুরি হয়েছে। এই ক্রেনটির মূল্য আনুমানিক দেড় কোটি টাকা। এছাড়া প্রকল্পের ভেতরে থাকা ক্যাবলসসহ প্রা ১৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি লুপাট  করানো হয়েছে।  মুক্তিযোদ্ধাগণ তাদের অভিযোগে উল্ল্যেখ করেন ওই সব রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও সম্পত্তি দেখভালের জন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপক সহ ২০ জন নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে। এসব নিরাপত্তাকর্মীর জন্য মাসে চার লাখ টাকা ব্যয় হয়। প্রকল্পটি  সুকৌশলে অলাভজনক দেখিয়ে ২০০৭ সালে বিসিআইসি কতৃপক্ষ চুনপাথর উৎপ চুনপাথর উৎপাদন প্রক্রিয়া বন্ধ  পর গত ৯ বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিরাপত্তা খাতে ব্যয় দেখানো হয়েছে।  এদিকে,  টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের ১৯৯ একর ভুমি বতর্মানে বেহাত হবার পথে। অনেকেই এই জমি দখল করে পাথর ও কয়লার ডিপের ডিপো হিসাবে ব্যবহার করে। প্রকল্পের বাসা বাড়ি বে আইনি ভাবে জবর দখল ও কেউ কেউ ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু সরকারের রাজস্ব খাতে জমি’র বা বাসা বাড়ির ভাড়া’র টাকা জমা হয়েছে বলে কোন তথ্য দায়িত্বশীলদের কারো নিকট নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি)’র টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের বাসা- বাড়ি শ্রমিক কর্মচারীদের ক্লাব, সিবিএর অফিস , দুটি কোয়ারী ও প্রকল্পের জায়গা স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে আছে গত প্রায় ১৮ বছরের অধিক সময় ধরে। ১৯৯৯ সালে প্রকল্পের কোয়ারী থেকে চুনপাথর উক্তোলন  কার্যক্রম বন্ধ করে জনবল ছাতক সিমেন্ট কোম্পানিে বদলি করার পর থেকেই এ দখল ও লুপাট শুরু হয়। টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পটি ১৯৬৫ সালে ছাতক সিমেন্ট কোম্পাি প্রতিষ্ঠান হিসেবে চালু হয়। এখানকার চুনাপাথর দিয়েই ছাতক সিমেন্ট কোম্পানিতে ক্লিংকার তৈরি করা হতো। ২০০৭ সালে প্রকল্পটি অলাভজন দেখিয়ে কৌশলে তা থেকে চুনপাথর উক্তোলন বন্ধ করে  দেয়া হয়।  প্রকল্প এলাকার এখানে এক কিয়ার (৩০ শতক) জমির ভাড়া হিসেবেই বছরে পাওয়া যায় কমপক্ষে তিন লক্ষাধিক টাকা। অথচ. টেকেরঘাট চুনাপাথর প্রকল্পের ১৯৯ একর জমি থেকে ভাড়া বাবদ কোন আয় কখনোই ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী বা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়নি।’
লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর করেন তাহিরপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক থানা কমান্ডার মো. রৌজ আলী, উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কমান্ডার মো. আলকাস মিয়া সহ  আরো ৯ মুক্তিযোদ্ধা।
প্রায় ১৬ কোটি টাকার সম্পদ লুপাটের অভিযোগ প্রসঙ্গে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী’র সাবেক এমডি, বর্তমানে বিসিআইসি’র সচিব আবুল হাসনাত চৌধুরী শনিবার বলেন,‘মুক্তিযোদ্ধা রৌজ আলী প্রকল্পে কর্মরত ছিলেন, তিনি অবসরে গেছেন কিন্তু তার করা  ১৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সম্পদ লুপাটের অভিযোগ ঠিক নয়। এখানকার চুনাপাথর সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করার সময় মাটির নিচে পড়েছে। যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়েছে। আমি থাকা অবস্থায় (২০১৩-১৫ সালে) কেউ লুট করেনি। আমি টেকেরঘাট চুনাপাথর প্রকল্পের ১ টাকার ক্ষতিও করিনি।’
বর্তমানে বিসিআইসি’র সচিব হিসাবে কর্মরত থাকা আবুল হাসনাত চৌধুরী  আরো বলেন,‘২০১৩-১৫ সালে আমি যখন ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরী’র এমডি ছিলাম তখন বিপুল পরিমাণ জমি আমরা দখলবাজদের কবল থেকে উদ্ধার করেছিলাম। এখন শুনেছি আবার অনেক জমি দখল হয়ে গেছে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 5 =