সোনারগাঁও প্রতিনিধি : সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ইউনিয়নের কাজী আব্দুল হকের বিরুদ্ধে সাব-কাজী নিয়োগ, তথ্য গোপন ও বিধি লঙ্ঘনপূর্বক বাল্য বিবাহে সহযোগীতা, তালাক এবং বিবাহ রেজিষ্ট্রি না করাসহ মহান স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে সরকার বিরোধী কাজে অর্থের যোগান দেয়ার গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় কাজী আব্দুল হককে অপসারণের জন্য সোনারগাঁয়ের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা দুই দফায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সমীপে ডিও লেটার দিয়েছেন। এছাড়া একই দাবিতে কাঁচপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ইউনিয়নের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ গণস্বাক্ষর প্রদান করেন এবং জনস্বার্থে ইউনিয়নের বেহাকৈর গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের ছেলে আলী নূর রহমান নামে এক ব্যক্তি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর একটি আবেদন করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক স্মারক নং- (০৫.৪১.৬৭০৪.০০২.০২.০১৯.১৫.৬৪৮(সং), তারিখ : ১০.০৮.২০১৫ খ্রিঃ এবং ০৫.৪১.৬৭০৪.০০১.০২.০৩২.১৫.৬১, তারিখ : ১৮.০১.২০১৬ খ্রিঃ) এ উল্লেখ আছে উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়ন কাজী আব্দুল হকের দায়িত্বে থাকা স্বত্বেও হাবিবুর রহমান, পিতা হানিফ মিয়া, বিবাহ নিবন্ধক ব্যাতিত যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া সাব-কাজী হিসেবে বিবাহ পড়ান। যা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ওয়েব সাইট িি.িহধৎধুধহমধহল.মড়া.নফ এ প্রকাশ আছে।
এছাড়া কাজী আব্দুল হক (বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে) তথ্য গোপন ও বিধি লঙ্ঘণপূর্বক কাঁচপুরের কুতুবপুর গ্রামের মহিউদ্দিনের ১৪ বছরের মেয়ে তানজিমা আক্তার মিতুলের সঙ্গে একই গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে কামরুল হাসানের বাল্য বিবাহ নিবন্ধন করেছেন। সোনাপুর গ্রামের তাজুল ইসলাম ড্রাইভারের ১৫ বছরের মেয়ে সিমা আক্তারের সঙ্গে মাধবপুর বড়নগর গ্রামের মৃত আব্দুল বাতেনের ছেলে নাজমুল ইসলামের বাল্য বিবাহ নিবন্ধন করেছেন। এছাড়া কাঁচপুর খানবাড়ি মঞ্জিল খোলা এলাকার ইসমাঈল খানের ১৫ বছরের মেয়ে হানিমা খানমের সঙ্গে কুতুবপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান খাঁনের ছেলে সোলাইমান খাঁনের বাল্য বিবাহ নিবন্ধন করেছেন। এসব বাল্য বিবাহের ক্ষেত্রে কাজী আব্দুল হক সংশ্লিষ্টদেরকে নিকাহনামা প্রদান করলেও নিকাহ রেজিস্ট্রি ভলিয়মে তা রেজিস্ট্রি করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাছাড়া কাজী আব্দুল হক সরকারি রসিদের অবৈধ ব্যবহারেও বেশ পটু। নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, কাঁচপুর এর ফি প্রাপ্তির রসিদ (বই নং-১, পৃষ্ঠা নং- ২৩/১৬, ক্রমিক নং- ২৩/১৬, তারিখ : ১৫.১০.২০১৬) এর আলোকে ফি/ভাতা প্রাপ্তির রসিদ এর মাধ্যমে বর মোঃ রুবেল মিয়া কর্তৃক বাল্য বিবাহের স্বীকার কনে হালিমা খাতুনকে “সি” তালাক প্রদান করা হয়। উক্ত ফি/ভাতা প্রাপ্তির রসিদে টাকার পরিমান উল্লেখ করা হয়নি। অবৈধভাবে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই কাজী আব্দুল হক রসিদে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে কাজী আব্দুল হক স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একজন সক্রিয় সদস্য/রুকন প্রার্থী বলে জানা গেছে। তিনি বহু বছর যাবত নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করতঃ অর্জিত অবৈধ কালো টাকা সরকার বিরোধী রাজনীতি বলিষ্ঠ করণে ব্যয় করে আসছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া কাজী আব্দুল হকের নামে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত মোট ১১ মাসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশনা ‘ব্যক্তিগত রিপোর্ট বই, মাসিক রিপোর্ট পেশ ও মাসিক ইয়ানত তথা চাঁদা পরিশোধের কপি’ কাঁচপুর ইউনিয়নবাসীর হাতে হাতে পৌঁছে যাওয়ায় তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে।
এসব কারণেই নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা গত বছরের ৭ ডিসেম্বর কাঁচপুরের এই বিতর্কিত কাজী আব্দুল হককে অপসারণের জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সমীপে একটি ডিও লেটার দেন। পরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার আবু তাহের মোঃ মোস্তফাকে। সাব-রেজিস্ট্রার মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রদেয় সময় স্বল্পতার কারণে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য না নিয়েই অভিযোগটি অধিকতর তদন্তের দাবি জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট পেশ করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী ইউনিয়নবাসী হতাশ হয়ে পড়েন। এ সময় কাঁচপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্জ মোঃ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মাষ্টারসহ গন্যমান্য ব্যক্তির গণস্বাক্ষর নিয়ে ইউনিয়নের বেহাকৈর গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের ছেলে আলী নূর রহমান নামে এক ব্যক্তি জনস্বার্থে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর কাজী আব্দুল হকের বিরুদ্ধে একটি আবেদন করেন। তাছাড়া সাংসদ লিয়াকত হোসেন খোকা গত ২৬ মে এ বিষয়ে পুনরায় আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় সমীপে ডিও লেটার দেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত কাজী আব্দুল হক জানান, তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ সত্য নয়। তবে এ সময় তার বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী ইউনিয়নবাসীর গণস্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে, বিষয়টি তার জানা নেই বলে তিনি দাবি করেন।