বেগমগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ

0
1262

ইয়াকুব নবী ইমন, নোয়াখালী প্রতিনিধি:
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, কোচিং বাণিজ্য ও টাকার বিনিময়ে গাইড থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানা গেছে, উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বদলী হলেও পূনরায় স্কুলটিতে যোগদান করে নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন। তিনি সরকারী নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ার খুশি মতো চলেন। স্কুলটিকে বানিয়েছেন দূর্নীতির আখড়া।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে এবং শিক্ষার্থীদের ’শুয়ারের বাচ্চা ও কুকুরের বাচ্চা’ বলায় আজ থেকে আড়াই বছর আগে প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানকে উক্ত স্কুল থেকে বদলী করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি পূনরায় উক্ত স্কুলে আসতে সক্ষম হন। পূনরায় এসেই তিনি আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়েন। পুরো স্কুলটিকে তিনি তার নিয়ন্ত্রনে আনতে শুরু করেন ছাত্র-শিক্ষক ও কর্মচারীদের উপর নির্যাতন। তিনি বিগত সেশনে স্কুলের কোটার চাইতে ৩০-৩৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করান। প্রতি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য জনপ্রতি ৫০-৬০ হাজার টাকা ঘুষ বাণিজ্য করেন। যা স্কুলে সরেজমিন তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। স্কুলের নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষার ফরম পূরণ, বার্ষিক পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করেন। সরকার কোচিং পড়ানো নিষিদ্ধ করলেও উক্ত প্রধান শিক্ষকের সেল্টারে স্কুলে কোচিং পড়ানো অভিযোগ রয়েছে। প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান স্কুলের নামে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে আগত দান-অনুদানও আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে দূর্ব্যবহার করে থাকেন।
বিগত রোজার আগে স্কুলে ফ্যান ক্রয়ের কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জন প্রতি ৫০ টাকা করে আদায় করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন ফ্যান স্কুলে ঝুলেনি। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ সরকারী স্কুল হিসেবে তিনি কখনো এই টাকা তুলতে পারেননা। এটি একটি অনিয়ম।
সব চেয়ে ন্যাক্কর ঘটনার জম্ম দেন তিনি গত ১১/০৭/১৭ইং  তারিখে সপ্তম শ্রেণীর ইংরেজি পরীক্ষা চলকালে। সেদিন পরীক্ষা এক ঘন্টা চলার পর হঠাৎ কোন প্রকার নির্দেশনা ছাড়াই প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান একটি গাইডের পাতা ফটোকপি করে দেন এবং এখান থেকে পরীক্ষা দেয়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বাধ্য করেন( প্রশ্নপত্র ও গাইডের পাতা অত্র পত্রিকা অফিসে সংরক্ষিত আছে)। যা সরকারী নিয়মের সম্পূর্ন পরিপন্থি। বিষয়টি নিয়ে অনেকে উদ্বিগ্ন হলেও ভয়ে কেউ প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানের ভয়ে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেনা।
তাছাড়া উক্ত প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান সব সময় উগ্র স্বভাবে থাকেন। কোন ভদ্রলোক, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক স্কুলে গেলে তাঁর কাছে সামান্য সৌজন্যমূলক ব্যবহারটুকুও পাননা। প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নানের এমন কর্মকান্ডে হতবাক স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সরকার যেখানে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে সেখানে আবদুল মান্নানের মতো প্রধান শিক্ষকরা গুরুত্ব দেয় টাকার প্রতি। টাকা পেলে এমন কোন কাজ নেই যে তিনি করেননা। অনেক সময় উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশও তিনি মানেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। যার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষও তার উপর ক্ষুব্দ।
মঙ্গলবার সন্ধায় নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক আবদুল মান্নানের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন টাকা তিনি তুলেননি এবং বলেন আপনি কাল স্কুলে এসে তদন্ত করে যান।
শিক্ষার্থীদের গাইডের পাতা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এটা আমার বিষয় নয়, শ্রেণী শিক্ষক বিষয়টি দেখে থাকেন। আমি কেন গাইড দিতে যাবো।
শিক্ষার্থীদের কুকুরের বাচ্চা বলে গালি দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এটাও ঠিক নয়, আমাকে ১০-১২ বার বদলি করা হয়েছে বলেই তিনি মোবাইলের লাইনটি কেটে দেন।
এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফরিদা খানমের সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, আমি স্কুলের সভাপতি হলেও প্রধান শিক্ষক অনেক কিছুই আমাকে জানান না। উনার অনেক অনিয়মের খবর অভিভাবকরা আমাকে অবহিত করেছেন। কেউ অনিয়মে জড়িত থাকলে আবিশ্যই তা খতিয়ে দেখা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × three =