পূবালী ব্যাংকে কেলেঙ্কারি জালিয়াতি করে ঋণ মওকুফ করিয়েছিলেন মনজুরুর রহমান

0
1779

প্রতিবেদকঃ
জালিয়াতি করে ব্যাংকের নামে ভুয়া নোটশিট তৈরি করে আট পরিচালককে ম্যানেজ করে তাদের সম্মতি স্বাক্ষর নিয়ে নিজের ঋণের টাকা মওকুফ করিয়েছিলেন পূবালী ব্যাংকের পরিচালক মনজুরুর রহমান। এ অপরাধে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল। পূবালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশ বাস্তবায়নের আগেই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন। সূত্র জানায়, মনজুরুর রহমান তার মালিকানাধীন মেসার্স ¹েœাবাল এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স শাহবাজপুর টি কো¤পানির নামে পূবালী ব্যাংক থেকে ৭ লাখ ১ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। পরে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রভাব খাটিয়ে ব্যাংক কো¤পানিজ অ্যাক্ট-১৯১৩-এর ৮৬ (এইচ) ধারা লঙ্ঘন করে ৬ লাখ ৪৬ হাজার টাকা ঋণ মওকুফ করিয়েছিলেন। এই জালিয়াতি ঘটনার দালিলিক প্রমাণাদি সমকালের হাতে রয়েছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তদন্তে জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়ে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তাকে অপসারণ ও অবৈধভাবে মওকুফ করা টাকা আদায়ের কথা বলা হয়েছিল। এই খবর পেয়ে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলেও বর্তমানে তিনি ব্যাংকটির পরিচালক পদে বহাল তবিয়তে আছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূবালী ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, একজন পরিচালক হয়ে পরিচালনা পর্ষদকে আড়াল করে জাল নোটশিট তৈরি করে নিজের ঋণের টাকা মওকুফের ঘটনা নজিরবিহীন। জানা গেছে, ওই অপরাধে ১৯৮৯ সালের ২৪ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পূবালী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে একই বছরের ১০ আগস্টের মধ্যে মনজুরুর রহমানকে অপসারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ওই নির্দেশ অবগত হওয়ার পর মনজুরুর রহমান স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র পেশ করেছিলেন ৮ আগস্ট। পরে পূবালী ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ই. এ. চৌধুরীর সভাপতিত্বে ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত পর্ষদের ৯২তম সভায় মনজুরুর রহমানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। ওই আট পরিচালক ১৯৮৫ সালে একটি জাল নোটশিটে নিজেদের সম্মতি স্বাক্ষর দিয়ে বেআইনিভাবে ওই পরিমাণ ঋণ মওকুফ করিয়েছিলেন। ভুয়া নোটশিটটি পরে ব্যাংকের নথিতে যুক্ত করা হয়েছিল। ১৯৮৯ সালের জুলাইতে পূবালী ব্যাংকের কাছে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য এক চিঠিতে মওকুফকৃত ওই টাকা এক মাসের মধ্যে আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পরে নির্দেশনা অনুযায়ী ওই টাকা আদায় করা হয়। ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ব্যাংকিং কো¤পানিজ অর্ডিন্যান্স-১৯৯২-এর ৮৩ (৫) ধারায় ওই আট পরিচালকের প্রতিজনের কাছ থেকে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা আদায়েরও নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনা অনুযায়ী এ টাকাও আদায় করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, মনজুরুর রহমান ব্যাংকের স্বার্থ পরিপন্থী কাজ করেছেন, যা জনস্বার্থবিরোধী। এ পরিস্থিতিতে তিনি পরিচালকের দায়িত্বে থাকতে পারেন না। ব্যাংকিং কো¤পানিজ অর্ডিন্যান্স ১৯৬২-এর ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে দেওয়া ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে পরিচালক পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিল। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, মনজুরুর রহমান বেআইনিভাবে ব্যাংক ও বীমা কো¤পানির পরিচালক পদে বহাল আছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক (বর্তমানে পর্ষদ চেয়ারম্যান) পদে আছেন। একইসঙ্গে তিনি পূবালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও রয়েছেন। বীমা আইন অনুযায়ী তিনি একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানে পরিচালক পদে থাকতে পারেন না। বীমা আইনের ৭৫ ধারায় বলা হয়, ‘অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বীমা কো¤পানির পরিচালক একই শ্রেণির বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধনকৃত অন্য কোন বীমা কো¤পানি, ব্যাংক বা কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হইতে পারিবেন না।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান (চলতি দায়িত্ব) গকুল চাঁদ দাস সমকালকে বলেন, বীমা আইন অনুযায়ী একই ব্যক্তি ব্যাংক ও বীমা কো¤পানির পরিচালক হতে পারবেন না। মনজুরুর রহমানের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ ব্যাপারে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, আইডিআরএ-এর পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদে বর্তমানে দু’জন সদস্য রয়েছেন। এ কারণে অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিগগির সরকার একাধিক সদস্য নিয়োগ দেবে। এর পর এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 − 7 =