উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে মঙ্গলবারও ধরা খেলেন একজন সিনিয়র সচিব ও পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি। টানা তৃতীয় দিনের মতো পুলিশ রাজধানীর সড়কে অভিযান চালায়। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আবদুর রব হাওলাদার, পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি, এশিয়ান এজ পত্রিকা, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এবং সেনাসদস্যের গাড়িসহ অর্ধশতাধিক গাড়ি-মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টিই মোটরসাইকেল। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মসলেহ উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে মঙ্গলবার বিকাল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত রাজধানীর বিজয় সরণি এলাকায় অভিযান চালানো হয়। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের ডিসি (পশ্চিম) লিটন কুমার সাহা এবং অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সাইফুল হক, সিনিয়র সহকারী পুুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উল্টো পথে গাড়ি না চালানোর অনুরোধ করে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সবাই আইন মেনে গাড়ি চালাবেন।’ এদিকে উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে ধরা খাওয়া সমবায় সচিব মাফরুহা সুলতানার গাড়িচালককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে তাকে শোকজ করা হয়েছে। চালকের এ কর্মকাণ্ডে সচিব চরম বিব্রত বলে জানা গেছে। আর ওই সময় তিনি গাড়িতে ফেসবুকে ব্যস্ত ছিলেন।
অতিরিক্ত কমিশনার মসলেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সিনিয়র সচিব আবদুর রব হাওলাদারের গাড়িটি জাতীয় সংসদ ভবন এলাকা থেকে বেরিয়ে উল্টো পথে ফার্মগেটের দিকে যাচ্ছিল। তার গাড়ি নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১১-৫৮৩০। এ ছাড়া পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজির গাড়ি লাভরোড থেকে উল্টো পথে বিজয় সরণি মোড়ে এলে ট্রাফিক সার্জেন্ট শাহ আলম গতিরোধ করেন। গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। গাড়িতে অতিরিক্ত ডিআইজির স্ত্রী, ব্যক্তিগত সহকারী ও গাড়িচালক ছিলেন। গাড়ি চালকের নাম আবু বকর।
ট্রাফিক পুলিশ জানায়, আর যেসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে আছে এসআই তানজীর আহমেদ, সৈনিক মানব শেখ ও মামুন এবং এক এসএসএফ সদস্যের মোটরসাইকেল। এসআই তানজীর আহমেদের মোটরসাইকেলের নম্বর ঢাকা মেট্রো-হ-৪১-৯৭-৮২। এসআই এবং দুই সেনাসদস্যের গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেন সার্জেন্ট আরিফুল হাসান।
মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেব : এদিকে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমারে নির্যাতিত রোহিঙ্গা নাগরিকরা যতদিন বাংলাদেশে আসবে মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়ে যাব। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেবে না। আমরা বিশ্বাস করি রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক। দেশটি তার নাগরিকদের ফিরিয়ে নেবে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যারা উল্টো পথে গাড়ি চালান তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এতে ট্রাফিক জটের সৃষ্টি হয়। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স জরুরি কাজ করে, জরুরি সার্ভিস দেয়। তাই তাদের বিষয়টি একটু আলাদা করে দেখতে হবে। উল্টো পথে গাড়ি চালানো রোধ করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
ফেসবুকে ব্যস্ত ছিলেন সমবায় সচিব : পরপর দু’দিন রাজপথে উল্টো দিকে গাড়ি চালিয়ে ধরা খেয়ে দফতর হারিয়েছেন সমবায় অধিদফতরের গাড়িচালক বাবুল মোল্লা। সোমবার রাতেই তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় এবং তার বদলে নিয়োগ পান চালক সুমন মিয়া। মঙ্গলবার তিনিই গাড়ি চালিয়ে সমবায় সচিব মাফরুহা সুলতানাকে সচিবালয়ে নেন। তবে এ ঘটনায় বিব্রত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানা। ঘটনার সময় তিনি ‘ফেসবুকে’ ব্যস্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে যুগান্তরের পক্ষ থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
জানা গেছে, সমবায় অধিদফতরের গাড়িচালক বাবুল মোল্লা গত এক বছর ধরে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মাফরুহা সুলতানার গাড়িচালক হিসেবে সংযুক্ত আছেন।
রোববার রাজধানীর হেয়ার রোডে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর অপরাধে মামলা হয় ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহার গাড়ির বিরুদ্ধে। সোমবার বিকালে আবারও উল্টো পথে গাড়ি চালিয়ে বাংলামোটর এলাকায় ধরা পড়েন সেই বাবুল মোল্লা।
মাফরুহার ব্যক্তিগত গানম্যান আশরাফুল আলম জানান, আগের দিন ধরা পড়ার পর সচিব ম্যাডাম তাকে ‘বকা’ দিয়েছেন। সোমবার গাড়ি উল্টো পথে নেয়ার সময় ম্যাডাম মোবাইল ফোনে ব্যস্ত ছিলেন। আমি বাবুল মোল্লাকে বলেছিলাম- ‘এদিক দিয়ে কোথায় যান?’ বাবুল আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, ‘আপনি চুপ থাকেন, আমি দেখছি।’
মামলার পরও কেন উল্টো পথে গেলেন জানতে চাইলে বাবুল মোল্লা মঙ্গলবার মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘ভাইরে! বিপদ যখন আসে তার কোনো ব্যাখ্যা নাই। সব কপালের দোষ।’ সচিব কি আপনাকে উল্টো পথে যেতে বাধ্য করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বাবুল বলেন, ‘না ম্যাডাম খুব ভালো মানুষ। উনি এসব বিষয় নিয়ে কখনও কিছু বলেননি।’ শোকজ পেয়েছেন বলেও যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন ফরিদপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা বাবুল মোল্লা।