মহিউদ্দিনের আলটিমেটাম নাছিরের সংবাদ সম্মেলন

0
572

গৃহকর অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে এক মাসের আলটিমেটাম দেয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম নগর ভবনের কে বি আবদুচ ছাত্তার মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। সম্মেলনে সিটি করপোরেশনের অধিক্ষেত্রে ইমারত ও জমির পঞ্চবার্ষিক মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মেয়র নাছির। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ২৭ শতাংশের জায়গায় ১৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স রেইট ধার্য করেছি আমরা। আইন মেনেই তা করা হয়েছে। এতে কারো আপত্তি থাকলেও আইন সংশোধনের ক্ষমতা আমার নেই।  মেয়র বলেন, আগের মেয়ররা আইন না মেনে গৃহকর নির্ধারণ ও আদায় করেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি, প্রেক্ষাপট, দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যক্তিগত রুচির পরিবর্তন হয়েছে। দেশে ক্রমে আইনের প্রয়োগ ও প্রতিফলন হচ্ছে। আইন কথা বলা শুরু করেছে। আমরা কেউ আইন ও জবাবদিহির ঊর্ধ্বে নই। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত গৃহকর সময়োপযোগী দাবি। গৃহকর সিটি করপোরেশন এলাকা উন্নয়নের প্রাণের স্পন্দন। এক্ষেত্রে সমন্বয় অতীব জরুরি। বিগত সময় যারা মেয়র ছিলেন তারাও বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। মেয়রের চেয়ারে যারাই বসেছেন সবাই সমন্বয়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, গৃহকর নিয়ে মাঠ গরম করে লাভ নেই। আইনের প্রতি সবার অনুগত থাকা উচিত। তাছাড়া গৃহকর নির্ধারণের বিষয়টি চসিকের একান্ত ব্যাপার নয়। এটি মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। সরকার যখনই যে আইন করবেন তখনই সে আইন মানতে বাধ্য চসিক। গৃহকর পুনঃমূল্যায়ন বাতিল এবং পূর্বের নির্ধারিত হারে গৃহকর আদায়ের জন্য সাবেক চসিক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বিকালে এক মাসের আলটিমেটাম দেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে। এর আগে গৃহকর অ্যাসেসমেন্ট নিয়ে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন ও মনজুর আলম এবং ২৩ কাউন্সিলর চিঠি দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন এবং ভবন মালিকরাও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। সর্বশেষ এক মাসের আলটিমেটাম দিয়ে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দেখি কি করেন তিনি। এতেও যদি কোনো কাজ না হয়, তাহলে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।  মঙ্গলবার বিকালে নগরীর ষোলশহর এলাকার চশমা হিলে নিজ বাসভবনে পারিবারিক মেজবান অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রতি এক মাসের আলটিমেটাম ঘোষণা করেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এরই প্রেক্ষিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, গৃহকর নিয়ে সাবেক দুই মেয়র ও সাবেক কাউন্সিলররা প্রাতিষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছেন। তাদের একেক জনের চিঠির বিষয় একেক রকম। লিখিত এসব চিঠির জবাব লিখতভাবেই দেয়া হবে। তিন-চার দিনের মধ্যে চিঠির জবাব পাঠানো হবে। সংবাদ সম্মেলনে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ইসমাইল বালি, শৈবাল দাশ সুমন, আবিদা আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, নতুন কর মূল্যায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ১৭ শতাংশ গৃহকর নির্ধারণ করে। এর মধ্যে ৭ শতাংশ হোল্ডিং বাবদ, ৩ শতাংশ বিদ্যুতায়ন এবং আবর্জনা অপসারণ বাবদ ৭ শতাংশ। নতুন নিয়ম অনুসারে যে কোনো বহুতল স্থাপনার সব ফ্ল্যাটের মোট বার্ষিক ভাড়া থেকে দুই মাসের ভাড়া বাদ যাবে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ হিসেবে। ভবন মালিক যদি ঘর ভাড়া না দিয়ে শুধুমাত্র নিজেই বসবাস করেন সেক্ষেত্রে এ থেকে আরো ৪০ শতাংশ ছাড় দেয়া হবে। এরপর বার্ষিক ভাড়ার যে মোট অঙ্ক বাকি থাকবে তার উপর ১৭ শতাংশ কর দিতে হবে। এর আগে স্থাপনার আয়তনের (বর্গফুট) ভিত্তিতে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে হতো।
হোল্ডিং মালিকরা জানান, নতুন মূল্যায়নে গৃহকর বেড়েছে প্রায় ১০ গুণেরও বেশি। তাই নতুন গৃহকর বাতিল করে পুরনো নিয়মে আদায়ের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এমনকি গৃহকর নিয়ে আপিলও করা হয়েছে। তবুও গৃহকর নিয়ে আপত্তি উপেক্ষিত।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে গৃহকর নির্ধারণ করা হয়েছে। সিটি করপোরেশন করবিধি অনুযায়ী পাঁচ বছর পর পর কর পুনর্মূল্যায়ন করতে হয়। ২০শে আগস্ট সিটি করপোরেশনের ২৫তম সাধারণ সভায় কর পুনর্মূল্যায়ন অনুমোদন দেয়া হয়। কর পুনর্মূল্যায়ন শেষে করপোরেশন এলাকায় হোল্ডিং সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৮টি। এর মধ্যে নতুন হোল্ডিং ২৮ হাজার ৭০২ ও পুরনো ১ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৫টি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − 2 =