বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সফল ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশ পেপারলেস ট্রেড করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। তৈরী পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশে^র মধ্যে দ্বিতীয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ সফল করতে সরকার দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন প্রায় ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করছে। এর প্রায় ৮১ ভাগ আসে তৈরী পোশাক রপ্তানি থেকে। ২০২১ সালে দেশের মোট রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে তৈরী পোশাক রপ্তানি থেকে আসবে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ কারনেই আমাদের তৈরী পোশাক রপ্তানির উপর এতো চাপ। অপ্রত্যাশিত রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর ক্রেতাদের আরোপিত সকল শর্ত পূরণ করা হয়েছে। এরপরও ক্রেতারা অ্যাকর্ড ও এ্যালান্সের দিয়ে তৈরী পোশাক কারখানাগুলোর উপর চাপ সৃষ্টি করেছে। দেশের তৈরী পোশাক কারখানাগুলোকে গ্রীন ফ্যাক্টরিতে রুপান্তর করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিল বিশে^র যে ১০টি তৈরী পোশাক কারখানাকে এনার্জি এন্ড ইনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন(এলইইডি) সার্টিফিকেট প্রদান করেছে, তার মধ্যে প্রথম, দিতীয় ও তৃতীয়সহ ৭টি ফ্যাক্টরিই বাংলাদেশের। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক কারখানাগুলো এখন নিরাপদ ও কর্মবান্ধব। এজন্য ব্যবসাীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছেন, কিন্তু পোশাকের দাম বাড়েনি বরং ইউরোর অবমূল্যায়নের ফলে মূল্য কম পাওয়া যাচ্ছে। অথচ পণ্যের রপ্তানি সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল সোমবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধায় ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসা শিক্ষা অনুষদ আয়োজিত দু’দিনব্যাপী ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ে আন্তর্জাতি সম্মেলনের প্রথমদিনে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য বিনিয়োগে বাংলাদেশের লক্ষ্য নির্ধারনের প্রতিবন্ধকতা ও নীতিমালা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ সব কথা বলেন।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের অগ্রযাত্রা রোধ করার জন্য অনেকবার চেষ্টা চালানো হয়েছিল। বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। ১৯৯০ সালে শিশু শ্রমের অভিযোগ আনা হয়েছিল, ২০০৫ সালে কোটা প্রথা বাতিল করা হয়েছিল। বাংলাদেশ সফল ভাবে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে শতভাগ ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি খাতে ৭ শতাংশ এবং বেসরকারি খাতে ৩৫ শতাংশ কারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই। বিশ^বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উন্নত বিশে^র কাছ থেকে ডিউটি ও কোটা ফ্রি রপ্তানি বাণিজ্য সুবিধা পাবার কথা। ইউরোপিয়ন ইনিয়নসহ অনেক উন্নত দেশ এ সুবিধা প্রদান করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এ সুবিধা দেয় না। ডিউটি দিয়ে বাংলাদেশ সেখানে রপ্তানি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের বড় বাজার।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ এখন লাভজনক স্থান। সরকার ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তুলছে। সরকার আইন প্রনয়ন করে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। তারা শতভাগ বিনিয়োগ করতে পারবে এবং লাভসহ যে কোন সময় মূলধন প্রত্যাহার করে নিতে পারবে। বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ও বাণিজ্য সহযোগিতা দিচ্ছে। বিশে^র অনেক বিনিয়োগকারী এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সকল ক্ষেত্রে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। যারা একসময় বলতো-বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি, বাংলাদেশ বিশে^র মধ্যে দরিদ্র দেশের মডেল, বাংলাদেশের উন্নয়ন হলে বিশে^ আর কোন দরিদ্র দেশ থাকবে না। আজ তারাই বলছেন-বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে হবে উন্নত দেশ। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে বিশেষ অতিথি হিসের বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র সচিব মো. সহীদুল হক। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। বৈঠকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়াসহ ১৩ টি দেশেল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।