গার্ড থেকে নেতা দুর্নীতির হোতা মালেক রাজউকের শ্রমিকনেতা মালেকের দুর্নীতির গ্যারাকলে পিষ্ট পিয়ন থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা

0
1152

বিশেষ প্রতিনিধিঃ

রাজউকের এক সময়ের সিকিউরিটি গার্ড থেকে উচ্চমান সহকারী পদে অবতীর্ন হয়ে শত কোটি টাকার মালিক শ্রমিক নেতা আঃ মালেকের দুর্নীতির গ্যাড়াকলে অবিরত পিষ্ট হচ্ছে রাজউকের সামান্য পিয়ন থেকে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর্মচারীরা । পিয়নের নিকট থেকে বেনসন সিগারেটের পেকেট আর অথরাইজড অফিসারদের নিকট থেকে ফাইল পাশ করানোর কমিশন আদায় করে কোটিপতি ‍মালেক এখন রাজউকেরে গডফাদার । কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়োগ প্রদান, বদলি বানিজ্য, ফাইলের অনুমোদন পাশ, পদোন্নতি, ছুটি প্রদান, রাজউকেরে সরঞ্জামাদি ক্রয় বিক্রয় ইত্যাদি সবই হয় তার কালো হাতের ছোয়ায়। আর এসবের মুলে তার পকেটে ঢুকে লাখ লাখ টাকার বান্ডেল । কেউ কোন প্রতিবাদ করলে তার ঠিকানা বান্দারবন । কারন তার আশীর্বাদের বট গাছ রাজউকের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর এ গুনধর নেতা মালেক অফিস সহকারী মাহাবুবসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে অর্থরাইজড অফিসার আশীষ কুমারের রুমে ঢুকে তাকে ইচ্ছেমত অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে পরে দলবল নিয়ে রুমের বাহিরে অবস্থান নেয় । অথরাইজড অফিসার আশীষ কুমার বিষয়টি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনকে জানিয়েছেন । রাজউকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এ দৃশ্য সিনেমার মত অসহায় হয়ে অবলোকন করেছেন । কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস করেনি মালেকের ভয়ে । খোজ নিয়ে জানা গেছে অথরাইজড অফিসার আশীষকে দিয়ে একটি রিজেক্ট ফাইল পাশ করানোর চেষ্টা করেছিলেন দুর্নীতিবাজ মালেক । আশীষ কুমার ফাইলটির কাজ করবেন না বললে মালেক বাহিনী তার উপর চড়াও হয় এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ঘটায় । এ ব্যাপারে অথরাইজড অফিসার আশীষ কুমার জানান, “আমি সরকারী চাকুরী করি কোন অনৈতিক কাজ আমি করতে পারবো না, আমার বিশ্বাস রাজউক প্রশাসন এর ব্যবস্থা নিবেন”।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, কাগজপত্রে সমস্যা থাকার পরেও ফাইলে অনুমোদন দিতে বাধ্য করেছে আঃ মালেক । ফাইলে সই না করিলে চাকুরী থেকে ও এসডি করা হবে । ঘুষ কেলেংকারীর দায়ে ফাসানো হবে । এমন হুমকি দিয়ে কাজ করিয়ে নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

২০১৫ সালে রাজউক কর্মচারী সমিতির (উত্তরা) ভুতের আড্ডা মাকের্টের ৪র্থ তলায় ফ্লোর বিক্রি করেন ৪ কোটি টাকায় । ২০১৬ সালে ভূতের আড্ডা মার্কেটে আরো ২টি ফ্লোর বিক্রি করেন ৮ কোটি টাকায় । এ ১২ কোটি টাকা রাজউকের ১২৩০ জন কর্মচারীর সম্পদ । মালেক এ টাকা দিয়ে নিজ ব্যবসায় ২ বছর খাটিয়ে মাত্র ৫০ হাজার টাকা লভ্যাংশ দেন কর্মচারীদের । এ নিয়ে সমিতির লোকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে । মালেক প্রভাব খাটিয়ে সমিতির কর্মচারীদের দমন করে রেখেছেন । এ সময় এ নিয়ে সমিতির লোকজনদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে মালেক ৬ কোটি ৫ লাখ টাকা প্রদান করেন । বাকী টাকার কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন সমিতির লোকজন । উত্তরা আজমপুর রাজউক কর্মচারী মাকের্টে ১৭টি দোকান তৈরি করে তা বিক্রি করেন ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা । এ টাকা দুর্নীতিবাজ মালেক নিজেই আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে ।

২০১৪ সালে উত্তরা ১০নং সেক্টরে রাজউক নতুন ৫ বিঘা প্লট কর্মচরীদের বরাদ্দ দেন। এ নিয়ে রাজউকের ১২৩০ জন কর্মচারীদের আশা-আকাঙ্খা ও স্বপ্ন জড়িয়ে ছিল । কিন্তু এ স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিল এ দুর্নীতিবাজ নেতা আঃ মালেক । মালেক এ প্লটটি বিএনএইচ ডেভেলপারকে দিয়েছেন, রাজউক পাবে ৩৮ শতাংশ এবং রাউজক কর্মচারী সমিতির পক্ষে বিএনএইচ ডেভেলপার পাবে ৬২ শতাংশ মর্মে চুক্তি করা হয় । এখানে নেতা আঃ মালেক আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে এ জমি বরাদ্দের সময় সমিতি থেকে তিন কোটি টাকা হাতিয়েছেন । এটা রাজউকের অডিট রিপোর্টেও প্রকাশ রয়েছে ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন বিএনএইচ ডেভেলপার মালিকের কাছ থেকে সাইনিং মানি হিসাবে ৪৫ কোটি টাকা গ্রহণ করেন দুর্নীতিবাজ আঃ মালেক । সূত্র দাবী করছে, এ টাকারও কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। জমির লীজ, দালাল খরচ, জমি রেজিস্ট্রি করতে খরচ হয়েছে (লীজ দলিল নং-৯৩৪৭, তাং-২০-১০-১৬ইং) ২৩ কোটি ৭৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু দুর্নীতিবাজ মালেক সমিতির কর্মচারীদের হিসাব দিয়েছেন ২৭ কোটি টাকা । অভিযোগ রয়েছে বিএনএইচ ডেভেলপারকে ৫০ শতাংশের স্থলে ৬২ শতাংশ চুক্তি করিয়ে দেয়ায় মালেককে একা ৩০ কোটি টাকা প্রদান করেন বিএনএইচ ডেভেলপার মালিক পক্ষ । এভাবে রাজউকে শ্রমিক লীগ নেতার প্রভাব খাটিয়ে নিরীহ অসহায় কর্মচারীদের টাকা লুটপাট করে শত কোটি টাকা কামিয়েছেন উচ্চমান সহকারী আঃ মালেক । রাজউকের পরিদর্শক মোস্তফা জামান এর পোস্টিং এর ব্যাপারে ১০ লাখ টাকা ঘুষ নেয় আঃ মালেক । পোস্টিং এ ব্যর্থ হলে টাকা ফেরত দিতে গড়িমসি করেন এবং বহুবার তার অফিসে ধর্না দিয়েও টাকা ফেরত নিতে পারেননি মোস্তফা জামান।

সূত্র আরো জানায় মালেকের ২য় স্ত্রীর নাম সেলিনা আক্তার । রাজউকে সে অফিস সহকারী পদে কর্মরত ছিল । কর্মক্ষেত্রে মালেক ও সেলিনা আক্তারের অবৈধ সম্পর্কে গড়ে উঠে, এক পর্যায়ে উপায়ন্তর না দেখে মালেক বিয়ে করতে বাধ্য হন সেলিনাকে । অভিযোগ রয়েছে সেলিনা আক্তার বর্তমানে রাজউকে কাজ না করেও নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন  করে চলেছেন ।  এ প্রতিবেদক রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে টেলিফোনে মালেকের বহুমুখী দুর্নীতির ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন “আমি প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি”।

এক সময়ের সিকিউরিটি গার্ড এখন শত কোটি টাকার মালিক । আঃ মালেক শ্রমিকলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে জাল জালিয়াতি, সমিতির সাথে প্রতারণা ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করে নিজে এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন । এ দুর্নীতিবাজ নেতা সব সময় সন্ত্রাসীদের নিয়ে চলাফেরা করেন । তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য রাজউকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভয়ে আতঙ্কে থাকেন।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two + 18 =