কোটি টাকার গ্যাস চুরি! নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে সংবাদ সম্মেলনের নাটক করেন রেজাউল ইসলাম খান

6
1135

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের অধিভূক্ত সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো থেকে মাসে অন্তত ৪ কোটি টাকার গ্যাস চুরি হচ্ছে। বাখরাবাদের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও কর্মচারীর যোগসাজশে এই চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এঘটনায় নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে কুমিল্লা শহরতলির চাঁপাপুরে বাখরাবাদের প্রধান কার্যালয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোঃ রেজাউল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনের নাটক করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্যাস চুরির কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারায় বনিবনা না হওয়ায় রেজাউল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন করে নিজের দোষ অন্যের কাধে চাপানোর চেষ্টা করছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্যাস চুরির কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। গ্যাস কোম্পানিও ক্ষতিগস্থ হচ্ছে।

তার ওপর সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোর কাছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বকেয়া বিল পড়ে আছে। এই বিল আদায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেননি। অথচ এই টাকা আদায়ের কোন আগ্রহ রেজাউল ইসলাম খানের নেই বলে সুত্র জানায়। রেজাউল ইসলাম খানের অধিনস্ত কর্মকর্তারা চাকুরী হারানোর ভয়ে কোন প্রতিবাদ করেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে চাচ্ছেন। তাহলে তিনি প্রধান ব্যবস্থাপক হয়ে ব্যবস্থা নেন না কেন। আমরা ব্যবস্থা নিতে গেলে তিনি ইশারা ইঙ্গিতে নিষেধ করেন কেন। কর্তব্যে অবহেলার জন্য ২ অক্টোবর বাখরাবাদের বিপণন শাখার মহাব্যবস্থাপক এহসানুল হক পাটোয়ারীকে খুলনার সুন্দরবন গ্যাস ফিল্ডে বদলি করা হয়েছে। একই দিন উপমহাব্যবস্থাপক আবুল বাশারকে বদলি করা হয় বাখরাবাদের আইটি শাখায়। মুলত এহসানুল হক পাটোয়ারী ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কথা মতো কাজ করেননি। রেজাউল ইসলামের মাসোয়ারায় হস্তক্ষেপ করেছিলেন এহসানুল হক পাটোয়ারী এটাই ছিল তার দোষ। একই কাজ করেছিলেন উপব্যবস্থাপক আবুল বাশার। গত ১৮ জুলাই বাখরাবাদে যোগদানের পর রেজাউল ইসলাম জানতে পারেন, এখানকার ১৬ টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ১০টি সিএনজি ফিলিং স্টেশনে অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারের প্রমাণ পান। এরপর ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় দিন অভিযান চালিয়ে ওই স্টেশনগুলোর গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন সহ স্টেশনগুলোকে জরিমানা করেন। কিন্তু সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকদের অনেকেই দাবী করে বলেন, তাদের কাছে রেজাউল ইসলাম যে পরিমান টাকা মাসিক দাবী করে ছিল তা দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই রেজাউল ইসলাম খান তার নিজের ক্ষোভ মিটাতে আমাদের জরিমানা সহ লাইন কেটে দিয়েছে। এক টাকা চুরি হলে পঞ্চাশ পয়সা ঘুষ দেওয়া যায়। কিন্তু দেড় টাকা কিভাবে দেওয়া যায়। সুত্র জানায় বাখরাবাদের ৮৮টি সিএনজি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ ভাগ ফিলিং স্টেশনই চুরির সাথে জড়িত। উর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত ম্যানেজ করেই গ্যাস চুরি করা হয়। দুর্নীতির মহানায়ক বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ডের এমডি রেজাউল ইসলাম খানের সীমাহীন দুর্নীতির যাতাকলে নিঃস্ব তার অধিনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সিএনজি পাম্পের মালিকরা। পান থেকে চুন খসলে অথবা চুন না খসলেও তাকে দিতে হয় টাকা আর টাকা। ঘুষের স্বগরাজ্যে তিনি এখন দুর্নীতির অধিপতি। এমডি হওয়ার সুবাদে রেজাউল ইসলাম খান তার কলমের ডগায় বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ড অফিসের পিয়ন থেকে শুরু করে তার নিয়ন্ত্রনাধীন বাহিরের সিএনজি গ্যাস পাম্পগুলোর মালিকদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রেজাউল ইসলাম খান বাখরাবাদ গ্যাসফিল্ডে এমডি হিসাবে জয়েন করার পর থেকেই অফিসের ভিতরে শুরু করেছে দুর্নীতির মহোৎসব। কারনে অকারনে তার জুনিয়ির অফিসারদের কাজের সামান্য ত্রুটি পেলেই তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া যেন তার নেশা ও পেশা। অফিসিয়াল বিধি অনুযায়ী সঠিক ভাবে কাজ করতে দিচ্ছেন না জুনিয়র কর্মকর্তাদের। জুনিয়রদের কাজে অযথা হস্তক্ষেপ করে চাকুরী যাওয়ার ভয় দেখিয়ে অথবা প্রোফাইলের কাজ পাশ হবে না এমন ইস্যু তৈরি করে ঘুষ আদায় করেন তিনি। তিনি দপ্তরের প্রধান দাপ্তরিক কার্যাবলী পরিচালনা করতে নিম্নের যোগ্যতা ও দুরদর্শিতা হলেই দপ্তর পরিচালনা করা যায়, কিন্তু এমডি রেজাউল ইসলাম খান তা না করে পুলিশ ও র‌্যাব দিয়ে অফিস পরিচালনা করছেন। সিবিএ, জিএম মার্কেটিং এমনকি অফিসারদের প্রতি রুলার চালানো শুরু করেন। যার প্রেক্ষিতে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডের মতো প্রতিষ্ঠানে নেমে আসে এক দুর্যোগ মুহুর্ত। বাখড়াবাদ গ্যাস ফিল্ডের ঠিকাদারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, যে সমস্ত ঠিকাদার শুরু থেকে বাখরাবাদে ঠিকাদারী করে আসছে তাদেরকে এখন রাস্তায় বসতে হবে। যে ঠিকাদার তার দাবী অনুযায়ী ঘুষ দিতে পারবে সেই শুধু তার নিকট থেকে সুবিধা পাবে। প্রতিষ্ঠানের লাভ লোকসান কি ঠিকাদার নির্ধারন করেন নাকি দপ্তরের কর্মকর্তা দেখার মালিক এ ব্যাপারে ঠিকাদাররা বলেন, নতুন এমডি রেজাউল ইসলাম খান জয়েন করার পর থেকেই মনে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে রুপ নিতে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুনিয়র কর্মকর্তা জানান, রেজাউল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহন করার কিছু দিন পর সিএনজি পাম্মের মিটার তুলে এনে ৩/৪ কোটি টাকা জরিমানা করে দেন। যার ফলে কতিপয় পাম্পের মালিকরা আতংকিত হয়ে পড়ে এত বড় ধরনের জরিমানা দিয়ে পাম্প চালানো সম্ভব নয়। ফলে অন্য মালিকরা তার সাথে লিয়াজো করেন। জনগন ও রাষ্ট্রের চোখ ওয়াশ করতে পাম্পের মিটার খুলে এনে কিছু দিন আটক রেখে আবার পুনরায় ফেরত দিয়ে দেন কোন রকম জরিমানা না করে। তাতে সাধারন জনমনে প্রশ্ন কিসের বিনিময়ে সকালে মিটার খুলে এনে জরিমানা না করে বিকালে ফেরত দিয়ে দেন। যে সকল মিটার চেকাররা প্রতিদিন মিটারের রিডিং লিখে আনে, দেখা যায় ২ ঘন্টা আগে তারা মিটারের রিডিং লিখে এনেছেন আবার ২ ঘন্টা পরে মিটার খুলে আনা হলো এবং অলিখিত গোপন জরিমানা করে তাদের ছেড়ে দেয়া হলো। তাতে সচেতন নাগরিকের প্রশ্ন এমডি রেজাউল ইসলাম খান উপঢোকনের মাধ্যমে এই গুলি করেছেন নাকি বাখরাবাদের স্বার্থেই এই গুলি করছেন এমডি নিজেই তা বলতে পারবেন। জানা গেছে, এনার্জি রেগুলেটার কোর্টে জরিমানাকৃত একটি সিএনজি পাম্পের মালিক আপিল করেন এবং মামলাটির মেরিড দেখা যায়, সেই পাম্পের মিটার খুলে আনার ২ ঘন্টা পূূর্বে মিটারের রিডিং লিখে আনেন এবং বড় অংকের জরিমানা করা হয়। আদালত বিষয়টি নিয়ে বিব্রতবোধ করেন। এতে এমডি রেজাউল খানের দুর্নীতি ও দায়িত্বের প্রশ্ন উঠে আসে। পরবর্তী শুনানিতে দেখা যাবে ক্ষতিগ্রস্থ পাম্পের মালিক ন্যায় বিচার পায় কি না। অপরাধ বিচিত্রার অনুসন্ধানী টিম যে ব্যাপারটি অনুসন্ধান করে জানতে পারেন, বর্তমান এমডি রেজাউল ইসলাম খান পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস ফিল্ডের অফিসার হিসাবে চাকুরী করতেন। তখন তিনি সীমাহীন দুর্নীতির দায়ে সাময়িক বরখাস্ত হন। পরবর্তীতে ঢাকাতে বড় ধরনের এক আমলার সাথে লিয়াজোর মাধ্যমে অনেক টাকা খরচ করে বরখাস্ত থেকে অব্যাহতি পান। এখন প্রশ্ন যেই ব্যক্তি দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন, সেই অফিসার এমডি হয়ে বাখরাবাদের মতো সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানের এমডি হওয়াটা তার ছিল কাল্পনিক। তিনি আসার আগে বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ড ছিল লাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু রেজাউল ইসলাম খান এমডি হয়ে আসার পর প্রতিষ্ঠানটি যেন রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে। কুমিল্লা ঘুরে আমাদের প্রতিনিধি ঠিকাদার, সিএনজি পাম্প মালিক ও সচেতন নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানান, খুব দ্রুত ভুক্ত ভোগীরা এই এমডি অপসারন চায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eight + 7 =