’থার্টি ফাস্ট নাইট’ উদযাপন দেশ ও ধর্মের উতসব-সংস্কৃতির দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করে, বাংলাদেশের নাগরিক ও মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য বড়ই লজ্জার বিষয়

0
1871

মেহেদী হাসানঃ- প্রতি বছর ইংরেজী ৩১সে ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ০১ মিনিট থেকে ঘৃণ্য বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে বিশ্ব একটি নতুন বর্ষে পদার্পণ করে। বেশ ধুমধামের সাথে অন্য ধর্মের প্রথা বা বিদেশি সংস্কৃতি উদযাপন নিজ ধর্ম ও দেশজ সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞতা ও উদাসীনতা প্রকাশ করে। এটা কিছুতেই কাম্য নয়।’থার্টি ফাস্ট নাইট’ উদযাপন দেশ ও ধর্মের উতসব-সংস্কৃতির দেউলিয়াত্ব ঘোষণা করে। যা বাংলাদেশের নাগরিক ও মুসলিম হিসেবে আমাদের জন্য বড়ই লজ্জার বিষয়। থার্টি ফাস্ট নাইট’ উদযাপনের নামে তরুণ-তরুণীর অবাধ মেলামেশা, লিভটুগেদার, মদ-মাস্তি, গান-বাদ্য চলে রাতভর।এ উতসব অতীতে নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

 

থার্টি ফাস্ট নাইট’ উদযাপন ইসলামে বৈধ নয়। ইসলামি আইনবিদগণ একে হারাম বলে আখ্যায়িত করেন। অন্য ধর্মের সংস্কৃতি-উতসব মুসলমানের জন্য উদযাপন করা জায়েয নেই। নিজ ধর্ম ও অন্যের ধর্মের কালচারকে ঘুলিয়ে একাকার করতে বারণ করা হয়েছে হাদিসে। নবী সা. বলেছেন,‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখে সে সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত।’মিশকাত শরীফ:৪৩৪৭ অন্য ধর্মের সভ্যতা-সংস্কৃতি গ্রহণ না করার জন্য এ হাদিস মুসলমানদের অনুপ্রাণিত করেছে। আর গ্রহণ করলে মুসলমানিত্ব হারানোর হুশিয়ারিও প্রকাশ পেয়েছে উপর্যুক্ত হাদিসটিতে।

থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করা ইসলামে নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গত কারণও রয়েছে অনেক। সাধারণ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষও বলবে থার্টি ফাস্ট নাইট কোন কল্যাণ বয়ে আনে না। এতে কেবল অশ্লীলতা ও বেহায়াপনাই সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে, ধর্ম পালন ও দেশজ সংস্কৃতি রক্ষার দাবিতেও থার্টি ফাস্ট নাইট পরিহারযোগ্য।

থার্টি ফার্ট নাইট পালনের নামে গোটা দেশ অশ্লীলতার চাদরে ঢেকে যায় । মফস্বলের শহরের তুলনায় বড় শহরগুলোতে অশ্লীলতার মহড়া বেশি চলে । তবে যে গতিতে অপসংস্কৃতির আগ্রাসন চলছে তাতে সারা দেশ দখল করতে খুব বেশি সময় লাগবে বলে মনে হয়না । বিভাগীয় শহরগুলোর অভিজাত ক্লাবগুলোসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট, আবাসিক হোটেল এবং কিছু বাসায় রাতভর বসে অসামাজিক কর্মকান্ডের পসরা । কি থাকে না তাতে ? তরুন-তরুনীদের ধ্বংস করা জন্য যা চাই তার সবটার রসদ এ সকল অনুষ্ঠানে মওজুদ থাকে । এ রাত উদযাপন করতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের নিজস্ব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালন করে ।  গায়ে পানি ছিটানো থাইল্যান্ডের উতসব, আঙুর খাওয়া স্পেনের উতসব, এ রাতে না ঘুমানো কোরীয়দের উতসব, ১২টি ঘন্টা বাজানো মেক্সিকোর উতসব, শিক্ষকদের কাছে দীর্ঘায়ু কামানা করা ভিয়েতনামের উতসব, পরিবারের সকল সদস্যরা একসাথে আহার করা আর্জেন্টিনার উতসব এবং সাদা পোশাক পরিধান করা ব্রাজীলীয়দের উতসব । অর্ধ-সভ্য দেশগুলোতে এরকম সভ্য আয়োজন হলেও বাংলাদেশের মত একটি সভ্যদেশে এ রাতে অসভ্যতার সীমা থাকে না । কোন ব্যাঙ যখন লাফ দেয় সেটা স্বাভাবিক মনে করে আমরা উপভোগ করতে থাকি কিন্তু যখন কোন মানুষ ব্যাঙের মত লাফালাফি করে তখন সেটাকে পাগলের কর্মকান্ড ছাড়া আর কিইবা বলা চলে ? আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করার নামে আয়োজন করা হয় গান-বাজনা, নাচ-গান, ডিস্কো বা ডিজে (উলঙ্গ নৃত্য), পটকাবাজি, আতশবাজি, বেপরোয়া মটসাইকেল চালনা,  আনন্দ শোভা যাত্রা, তরুন-তরুনীদের রাত ভর উল্লাস, মদ-বিয়ারসহ ননা মাদকদ্রব্য সেবনে প্রলুব্ধ করতে ওপেন এয়ার কনসার্ট, লাইভ ড্যান্স, বিদেশী সংগীতানুষ্ঠান এবং এমন সব অপসংস্কৃতির আয়োজন যা তরুন-তরুনীদেরকে বিভিন্ন অপকর্ম করতে প্রলুব্ধ করে ।

সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে, যেন বিশ্বের এমন সব উতসব পালন শুরু করা না হয় যাতে আমাদের নিজস্ব উতসবের প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং বিশ্বের অন্যান্য জাতির সেসব উতসব আমাদের সমাজে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ না পায় । কাজেই বিশ্বায়নের যুগেও আমাদেরকে আমাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতাকে লালন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে । আমাদের সংস্কৃতির সাথে অন্যান্য দেশের যে সকল উতসব সাংঘর্ষিক সেগুলোকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে এবং আনুষ্ঠানিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীকে এর কূফল সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে । কোন বিবেকবান জাতির জন্য শোভনীয় নয় যে, তারা অন্য দেশের সংস্কৃতিকে অন্ধভাবে অনুসরণ করবে । তাই নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আমাদেরকে সেসব ক্ষতিকর উতসবকে চিহ্নিত করে আশু বর্জন করতে হবে । এমন একটি বর্জনীয় উতসব অথচ আমরা বিগত পনের বছর ধরে আমরা পালন করে আসছি “থার্টি ফার্স্ট নাইট” নামে । এ উতসবটি পালন করলে যেমনি ভাবে আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি বিলীন হওয়ার উপক্রম  হয় তেমনি অনেক অসমাজিক কর্মকান্ডের বীজ সমাজে রোপিত হয় ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 − 4 =