সনদে ভুল নাম দেওয়া হলেও নাম পরিবর্তন করতে হয়

0
519

সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেতে সিনেমার নাম পরিবর্তন করতে শোনা যায়। সনদে ভুল নাম দেওয়া হলেও নাম পরিবর্তন করতে হয়। কিন্তু ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হতে নাম পরিবর্তনের ঘটনা সম্ভবত এই প্রথম। কিন্তু গন্ডগোল বেধেছে অন্য খানে। নানা দেনদরবারের পর এমডি পদে নিয়োগ পেয়েছেন ঠিকই, তবে আগের নামে। এখন তাহলে নতুন নামের কী হবে? এ যেন মানুষ আছে, নাম নেই।

পুরো ব্যাংক খাতে বিষয়টি হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ঘটনাটি বেসরকারি খাতের প্রথম প্রজন্মের ন্যাশনাল ব্যাংকের। আর নাম পরিবর্তন করা এই এমডি হলেন আলোচিত চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। তাঁকে এমডি নিয়োগ নিয়ে বহুদিন ধরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে দেনদরবার করছে ন্যাশনাল ব্যাংক। গত বছরের ৩১ জুলাই ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে তাঁকে পূর্ণাঙ্গ এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে অনুমোদনের জন্য তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। চৌধুরী মোসতাক আহমেদ আগে ছিলেন ফারমার্স ব্যাংকের এমডি। সে সময় তাঁকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্যই তাঁকে এমডি করতে প্রথমে আগ্রহী ছিল না নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এ কারণেই নাম পরিবর্তন করে অনুমোদনের এই চেষ্টা। গত ২৭ ডিসেম্বর ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের ৪০৮ তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে ‘চৌধুরী মোসতাক আহমেদ’ নাম পরিবর্তন করে ‘চৌধুরী রাসেল আহমেদ’ হয়েছেন। নিয়ম মেনে পত্রিকায় নাম পরিবর্তনের বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়। এরপর নতুন নামেই তাঁকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেওয়া হয়। পাশাপাশি ব্যাংকের সব শাখা, বিভাগীয় প্রধান ও সব কর্মকর্তাকে এক চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, দাপ্তরিক সব নথিতে চৌধুরী রাসেল আহমেদ নাম ব্যবহার হবে। এরপর ব্যাংকটির সব নথিপত্র, চিঠি ও ওয়েবসাইটে তাঁর নাম পরিবর্তন করে রাসেল আহমেদ করা হয়। তবে পুরো পরিস্থিতি পালটে যায় গত সোমবার। সেদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চৌধুরী মোসতাক আহমেদকে এমডি পদে অনুমোদন দেয়। ওই দিনই তা ব্যাংককে জানিয়ে দেওয়া হয়। ফলে নাম পরিবর্তন করায় বিপাকে পড়েন রাসেল আহমেদ। তবে শেষ পর্যন্ত আগের নামেই তিনি কাজে যোগদান করেন। অর্থাৎ নিয়োগ পেয়েছেন চৌধুরী মোসতাক আহমেদ। কিন্তু যোগ দিয়েছেন রাসেল আহমেদ। ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম বুলবুল গতকাল বলেন, ‘চৌধুরী মোসতাক নামেই কাজে যোগদান করেছেন এমডি। পরবর্তীতে দেখা হবে, এতে কোনো সমস্যা আছে কি না। উনিই ভালো বলতে পারবেন বিষয়টি।’ রাসেল আহমেদ বা মোসতাক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এমডি হিসেবে কাজে যোগ দেওয়া ছাড়া বেশি কিছু বলতে রাজি হননি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের এমডির এ ধরনের নাম পরিবর্তন জনগণের হাসির উদ্রেক করবে। সূত্র জানায়, চৌধুরী মোসতাক আহমেদ ফারমার্স ব্যাংকের এমডি থাকাকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা অফিস ভাড়া পরিশোধ করেন। তবে তিনি বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে আনেননি। এ কারণে তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়। এর কিছুদিন পরই এক ধাপ নিচে অতিরিক্ত এমডি হিসেবে ন্যাশনাল ব্যাংকে যোগ দিয়েছিলেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen − eight =