অনেক আশঙ্কা ও ভয় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম

0
580

অ্যাকুরিয়ামের জন্য মাছ চাষ করেন শরীয়তপুরের নড়িয়ার বাসু দাস।

প্রতিবছর খামারে ২৫-৩০ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হচ্ছে।

চারজন সার্বক্ষণিক কর্মী রয়েছেন।

প্রতিবছর সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকছে ১০-১২ লাখ টাকা।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামের বাসু দাস মাছের খামারে চাকরি করতেন। খামারে ব্যবহারের জন্য একটি যন্ত্র কিনতে তিনি ঢাকার কাঁটাবনে যান। সেখানে তিনি প্রথম অ্যাকুরিয়ামে মাছ দেখেন। তখন তাঁর ওই রকমের মাছ চাষের আগ্রহ হয়। এ ঘটনা ২০০৫ সালের। বাড়ি ফিরে বাসু ভাবতে থাকেন, কীভাবে অ্যাকুরিয়ামে রাখা মাছের খামার গড়ে তোলা যায়। তাঁর স্বপ্নের কথা অনেক খামারমালিককেও বলেন।

কিন্তু তাতে কেউ রাজি হননি। তবে দমে যাননি বাসু। আবার ছুটে যান কাঁটবনে। সেখানকার ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা শোনেন। ২০০৬ সালে আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বাসু নিজ গ্রামে দুটি চৌবাচ্চা তৈরি করেন। কাঁটাবন থেকে মাছের পোনা কিনে আনেন। দুটি চৌবাচ্চায় ওই পোনা চাষ করে ছয় মাসের মধ্যে সাফল্য পেয়ে যান। তাঁর আগ্রহ বেড়ে যায়। বাড়ির পাশে ২০ শতাংশ জমি ভাড়া নেন। গড়ে তোলেন ৪০টি চৌবাচ্চা। বর্তমানে বাসুর মাছের খামারে গোল্ড ফিশ, ব্ল্যাক-গোল্ড ফিশ, কমেড কার্প, কই কার্প, অ্যাঞ্জেল ফিশ, মলি ফিশ, ছোট্রেল ফিশ ও প্লাটি ফিশের চাষ হচ্ছে। এখান থেকে প্রতিবছর ২৫-৩০ লাখ টাকার মাছ উৎপাদন হচ্ছে। চারজন সার্বক্ষণিক কর্মী রয়েছেন। প্রতিবছর সব খরচ বাদ দিয়ে বাসু দাসের লাভ থাকছে ১০-১২ লাখ টাকা। এ ছাড়া এলাকায় আরও দুটি সাদা মাছের খামার গড়ে তুলেছেন তিনি। বাড়িতে পাকা ঘর নির্মাণ করেছেন। বাসু দাস বলেন, ‘এই কাজে শুরুতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। টাকা ছিল না। সাহস ও ভরসা দেওয়ার কেউ নেই। অনেক আশঙ্কা ও ভয় নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। ভাবতে পারিনি এভাবে সফলতা পাব।’ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামে নিজের খামারে কাজ করছেন বাসু দাস (বাঁয়ে)। অ্যাকুরিয়ামে চাষের জন্য এসব রঙিন মাছ তিনি ঢাকায় কাঁটাবনে বিক্রি করেন।এতে তাঁর আর্থিক সচ্ছলতাও এসেছে। ছবি: প্রথম আলোশরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামে নিজের খামারে কাজ করছেন বাসু দাস (বাঁয়ে)। অ্যাকুরিয়ামে চাষের জন্য এসব রঙিন মাছ তিনি ঢাকায় কাঁটাবনে বিক্রি করেন।এতে তাঁর আর্থিক সচ্ছলতাও এসেছে। ছবি: প্রথম আলোকাঁটাবন থেকে ১৫ দিন থেকে এক মাস বয়সী পোনা আনেন বাসু দাস। ছয় মাস বয়স থেকেই সেই মাছ বিক্রি শুরু হয়। ফের কাঁটাবনে এই মাছ বিক্রি করেন। সপ্তাহে দুই দিন খামার থেকে মাছ পাঠানো হয়। প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে মাছের বড় ঝুড়িতে বসিয়ে নৌপথে মাছ ঢাকায় নেওয়া হয়। কাঁটাবনের অ্যাকোরিয়ামের মাছ বিক্রেতা আয়ুব আলী খান বলেন, ‘বাসু দাস রঙিন মাছের খামার করে সাফল্য পেয়েছেন। তিনি প্রায় ১২ বছর ধরে আমাদের সঙ্গে মাছের ব্যবসা করছেন। এখানে রঙিন মাছের অনেক চাহিদা।’ বাসু দাস বলেন, শীত মৌসুমে খামারের মাছ নানা ধরনের রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়। অনেক সময় মাছে মড়ক লাগে। তখন লোকসান হয়। মৎস্য বিভাগের সহায়তা পাওয়া গেলে উপকার হতো। আন্তর্জাতিক বাজারেও এই মাছের চাহিদা রয়েছে। নড়িয়ার ইউএনও সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ডিঙ্গামানিক গ্রামে ওই মাছের খামারে গিয়েছিলাম। এ রকমভাবে অনেক মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারেন। প্রয়োজনে প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + 8 =