জমি অধিগ্রহণে নয়ছয় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিতে হবে

0
700

জমি অধিগ্রহণ, অর্থ পরিশোধে নয়ছয়সহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকা ডিসি অফিসে ওপেন সিক্রেট হলেও দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই বললেই চলে। সম্প্রতি দুদকের অনুসন্ধানে একই জমি দু’বার অধিগ্রহণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের মতো একটি ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জানা যায়, হাতিরঝিল উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ ২০০৭-২০০৮ সালে শুরু হওয়ার পর ২০০৮ সালে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকা মৌজার একখন্ড জমি অধিগ্রহণের ফাইল উপস্থাপনের পর সব প্রক্রিয়া শেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকদের প্রায় সাড়ে ২৬ লাখ টাকা ২০১২ সালের জুলাই মাসে বুঝিয়ে দেয়া হয়।

 

অথচ নথিতে জমির পরিমাণ উল্লেখ না করে সংশ্লিষ্ট স্থানে অবকাঠামো লিখে রাখে অনিয়মে জড়িতরা। পরে একই বছরের ডিসেম্বরে অন্য পাঁচজনকে ওই জমির মালিক সাজিয়ে সমপরিমাণ অর্থ জালিয়াতি করে আত্মসাৎ করে ঢাকা ডিসি অফিসের এলএ শাখার অসাধু সিন্ডিকেট সদস্যরা। এখানেই শেষ নয়, বিষয়টি জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট ফাইলও গায়েব করে দেয়া হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এত বড় অনিয়ম সম্ভব হতে পারে না। খবরেই বলা হয়, দুদক তদন্ত শুরু করলে একই জমি দু’বার অধিগ্রহণের মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত একজন সার্ভেয়ারকে ঢাকা থেকে বদলি করা হয়। প্রশ্ন হল, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে দুদকের তদন্ত শুরু হওয়ার পর কেন তাকে বদলি করা হল? কেন আগে থেকেই ডিসি অফিস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। কারণ ওই সার্ভেয়ার মাদানি এভিনিউয়ে ১০০ ফিট রাস্তার জমি অধিগ্রহণের সঙ্গেও জড়িত ছিল। আমরা মনে করি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার স্বার্থে রাজধানীর সব জমি অধিগ্রহণের নথিগুলো নিরীক্ষা করে দেখা দরকার। জমি অধিগ্রহণে সরকারের অর্থ লুটপাটের পাশাপাশি নিরীহ ভূমি মালিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগও নেহায়েত কম নয়। ফলে এ ক্ষেত্রে আরও অনিয়ম হতে পারে বলে দুদকের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতিকারীরা যে কাউকেই তোয়াক্কা করে না, তার অন্যতম উদাহরণ রামপুরা থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের জমি অধিগ্রহণে বিভ্রান্তি। জনসাধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত ও সরকারকে বির্বত করার লক্ষ্য নিয়ে সাবেক দু’জন রাষ্ট্রপতির অবমুক্ত করা জমি ফের অধিগ্রহণের মতো সিদ্ধান্ত নিতেও চেষ্টা করেছে ঢাকা ডিসি অফিস ও রাজউক। যদিও শেষ পর্যন্ত উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপে সেটার নিষ্পত্তি হয়েছে। ভূমি নিয়ে বিভিন্ন বিরোধ, নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। এতে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে অধিগ্রহণসংক্রান্ত এলএ অফিসের সরকারি কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি। কেবল সরকারি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রেই যে অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটছে তা নয়, উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার বেসরকারি ল্যান্ড ডেভেলপারদেরও নানা ক্ষেত্রে হয়রানি করা হয়। ডিসি অফিস ও অধিগ্রহণ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারাই যে এসবের পেছনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে থাকেন তা বলাই বাহুল্য। ভূমির সুষ্ঠু ব্যবহার, সরকারি অর্থের অপচয়রোধ ও নিরীহ মালিকদের নিঃস্ব হওয়া থেকে রক্ষায়, তদন্তসাপেক্ষে অধিগ্রহণে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine − five =