ডেমরা বিভাগ, সূত্রাপুর বিভাগ ও শ্যামপুর বিভাগে ভ্যাট আদায়ে অনিয়ম-দূর্নিতী, লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

0
955

অপরাধ বিচিত্রা প্রতিবেদন ঃ
কাষ্টমস্, এক্সাইজ ও ভ্যাট ঢাকা(পূর্ব) ডেমরা বিভাগ, সূত্রাপুর বিভাগ ও শ্যামপুর বিভাগের অফিস গুলোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ভ্যাট আদায়ে চরম অবহেলা ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভ্যাট নিবন্ধনধারী ফ্যাক্টোরী ও কারখানার মালিকদের কাছ থেকে এই অভিযোগগুলো পাওয়া যায়। অভিযোগের ভিত্তিতে ডেমরা বিভাগের টিকাটুলী সার্কেল, কোনাপাড়া সার্কেল, রায়েরবাগ সার্কেল, ডেমরা সার্কেল, সূত্রাপুর বিভাগের গেন্ডারীয়া সার্কেল, সূত্রাপুর সার্কেল, মীরহাজিরবাগ সার্কেল, পোস্তগোলা সার্কেল ও শ্যামপুর বিভাগের দনিয়া সার্কেল, শ্যামপুর সার্কেল, ধলেশ^র সার্কেল, কদমতলী সার্কেল গুলোর বিভিন্ন মিল, ফ্যাক্টোরী- কারখানার মালিক, হোটেল-রেস্তোরার মালিক, দোকানদার ও বিউটি পার্লারের পরিচালকদের সাথে আলাপকালে অভিযোগের সত্যতার প্রমান পাওয়া যায়।

 

তাদের প্রধান অভিযোগ, ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে কর্মকর্তারা অন্যায্য অর্থ দাবী করে, অন্যথায় ভ্যাট আইনে মামলার ভয় দেখানো হয়। অনুসন্ধানে নেমে তার চেয়ে ভয়াবহ দূর্নিতীর চিত্র আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। তা হলো ভ্যাট নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সাথে কিছু অসাধু মাঠ ইনেসপেক্টর ও সার্কেল সুপারদের সক্ষতা গড়ে উঠা। আর তাতে মাস শেষে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের যত টাকা ভ্যাট সরকারী কোষাগাড়ে জমা দেয়ার কথা তা পার্সেন্টেজ হিসেবে ভাগ বন্টন করা। যেমন, একটি প্যাকেজিং ফেক্টোরী অথবা ফ্যান ফেক্টোরীর মাসিক উৎপাদিত পন্যের (কার্টনের/ফ্যানের) বিক্রয়মূল্য ৫ লক্ষ টাকা হলে বিক্রয় মূল্যের ১৫% হিসেবে ভ্যাট আসে ৭৫ হাজার টাকা। সে ক্ষেত্রে ফেক্টোরী মালিক মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা (কর্মকর্তাদের সাথে যোগশাযোশ করে) সরকারী কোষাগাড়ে জমা দেয় আর ফেক্টোরী মালিকের দেয়া ৫-৬ হাজার টাকা উপঢৌকন (আসলে ঘুষ) হিসেবে ঐ কর্মকর্তারা খুশিমনে নিজেদের পকেটে ঢোকায় আর এতেই ফেক্টোরীর মালিক মাফ পেয়ে যাচ্ছে ৫৫-৬০ হাজার টাকা। আর এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে ৬০-৬৫ হাজার টাকা। এখানে উল্লেখ্য মাত্র ৫ লক্ষ টাকার পন্য মাসিক উৎপাদন করলে কোন প্রতিষ্ঠানই বিদ্যুৎ বিল, ফেক্টোরীর ভাড়া, শ্রমিকের বেতন, দিয়ে এই বাজারে টিকে থাকতে পারবে না। ৫ লক্ষ টাকার হিসাবটা শুধু উদাহরন দেওয়ার জন্য কিন্তু বাস্তবতা হলো সবচেয়ে ছোট ফেক্টোরীও (যার ভ্যাট নিবন্ধন আছে) নূন্যতম ১৫-২০ লক্ষ টাকার পন্য মাসিক উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন আছে এমন একটি ফেক্টোরীর উদাহরন দেই, ফেক্টোরীর মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল আসে ১০ হাজার টাকা, ১২ জন শ্রমিক-কর্মচারী, ফোরম্যানের বেতন ১০ হাজার টাকা আর অন্যান্য কর্মচারীর বেতন গড়ে ৭ হাজার টাকা। মাস শেষে ফেক্টোরীর খরচ দাড়ায় ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। দিন হিসেবে প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ। কত টাকার পন্য উৎপাদন করলে সে ফেক্টোরীর ১ লাখ ২২ হাজার টাকার খরচ মিটিয়ে নিজে মুনাফা করবে? তাকে কমপক্ষে ১৫-২০ লক্ষ টাকার পন্য উৎপাদন করতেই হবে। আর ১৫ লক্ষ টাকার ভ্যাট আসে ২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। অথচ ১০-১২ জন শ্রমিক-কর্মচারীর ফেক্টোরীগুলো নাম মাত্র কিছু ভ্যাট প্রদান করে আর বড় বড় ফেক্টোরীগুলোতে তো ভ্যাট ফাকির মহাউৎসব চলছে (ভ্যাট কর্মকর্তাদের সাথে যোগশাযোশ করে)। একটি বড় রোলিং- ষ্টীল মিলের উৎপাদিত পন্য ভর্তি প্রতিদিন কয়টি ট্রাক মিল থেকে বের হয়, মালের ওজন, বাজার দর হিসেব করলে মাসে প্রায় কোটি টাকা ভ্যাট আসে। দুদকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি, ঐ সকল কর্মকর্তাদের সাথে আতাত করে মিল ফেক্টোরীর মালিকরা কোটি কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে আর অসাধু কর্মকর্তারা তাদের এই ভ্যাট ফাকিতে সাহায্য করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা যায় ব্যাপারটা অনেকটা “ওপেন সিক্রেট”। আর মূল্য ঘোষনার সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক পন্যের বাজার মূল্যের চেয়ে প্রায় অর্ধেক মূল্য ঘোষনা করে, যে মূল্যের উপর সে ভ্যাট প্রদান করবে। পণ্যের মূল্য ঘোষনার সময়ও ভ্যাট কর্মকর্তার চাহিদা মাফিক ছালামি প্রতিষ্ঠানের মালিককে প্রদান করতে হয়। যদিও কর্মকর্তারা বলে প্রতিষ্ঠােেনর মালিকরা খুশি হয়ে এটা তাদের দেয়। ভ্যাট আদায়ের ব্যাপক অনিয়ম, পাসেন্টটিজ এ ভাগবন্টন, ব্যাক্তিগত জীবন যাত্রার হিসাব এবং অবৈধ্য সম্পদের পরিমান, সহকারী কমিশনার, সার্কেল সুপার ও মাঠ ইনেস্পক্টরদের মাসিক টার্গেট পুরনে তাদের সক্রিয়তার উপর সচিত্র প্রতিবেদন প্র¯ুÍতে “অপরাধ বিচিত্রার” একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে এবং পরবর্তী সংখ্যাগুলোতে ধারাবাহিক ভাবে প্রতিটি সার্কেলের ভ্যাট আদায়ের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কর্মকর্তাদের গাফলতির সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি লক্ষনীয় তাহলো নতুন ভ্যাট নিবন্ধনকারী বানানোতে অনাগ্রহ। অলিগলিতে ছোট ছোট ফ্যাক্টরী অগনিত, যেগুলো ভ্যাটের আওতায় আনতে পারলে সরকারের রাজস্ব বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। এই অনাগ্রহের কারন অনুসন্ধানে জানা যায়, পুরাতন গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে ভ্যাটের টাকা আদায়, মাঠে মূশক চালান বিহীন পন্যভর্তি গাড়ী আটক করা আর হিসাব নিকাশ ফাইল পত্র তৈরী করতে করতেই কর্মকর্তাদের প্রতিটি দিন কেটে যায়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 3 =