প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে দীর্ঘ চিঠি বিএনপিপন্থি নির্যাতক স্বামী ডা. আলীমের সাজা চান স্ত্রী রিয়া

0
819

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। বয়স ৪৭, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন তিনি। সিলেট পপুলারে শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিনই রোগী দেখেন। পাশ্ববর্তী মাউন্ট এডোরা ক্লিনিকে নিয়মিত করেন রোগীর দেহে অপারেশন। পেশাগতভাবে এই ব্যস্ত চিকিৎসকের নাম আবদুল আলীম। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ১৮তম বিসিএসের মাধ্যমে যোগ দেন সরকারি চাকরিতে।

 

তবে চারিত্রিকভাবে তিনি নিকটজনদের কাছ থেকে বিশেষত স্ত্রীদের কাছ থেকে পেয়েছেন লম্পট উপাধি। নিজের লেখা ডায়েরিতেও নিজের লাম্পট্যের অনেক গল্প তিনি লিখে রেখেছেন। এসব নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা এড়াতে তিনি প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার পর কম বয়সী কম শিক্ষিত গ্রাম্য মেয়ে বিয়ে করে তাকেও দিয়েছেন ডিভোর্স।

জানা যায়, কম বয়স হওয়ায় রিয়া নামের একটি মেয়েকে দেখতে গিয়েই ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিয়ে করে ফেলেন ডা. আলীম। সন্ধ্যায় পাত্রী দেখা অনুষ্ঠান শেষে বিয়ে সারতে রাত হয়ে গেলে তিনি বনানীর মেপল লিভ নামের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেন নতুন বউ নিয়ে। হোটেলে বাসর রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে বউকে নিয়ে রওনা হন নিজের কর্মস্থল সিলেটের উদ্দেশ্যে। নিজের প্রাইভেট কার তিনি নিজে ড্রাইভ করায় হবিগঞ্জ পৌঁছতেই রাত হয়ে যায় নয়া দম্পতির। ডা. আলীম বউ নিয়ে উঠেন স্থানীয় প্যালেস রিসোর্টে। না চাইতেই প্রতিষ্ঠিত এক ডাক্তারের স্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে ভাসতে থাকেন গ্রাম্য কম বয়সী মেয়ে রিয়া। হোটেল বা রিসোর্টে বাসর কাটানো নিয়ে তাই তার মনে দেখা দেয় না কোনো প্রশ্ন। তবে পথে যেতে যেতে ডা. আলীম স্ত্রী রিয়াকে জানান, বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলায় তিনি এক মাস আগেই সিলেট কর্মস্থলে ভাড়া নিয়ে রেখেছেন একটি বাসা। তাই হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ডর্মেন্টরিতে নতুন বউকে উঠতে হবে না! ভাড়া বাসায় গিয়ে রিয়া চমকে উঠেন। সাজানো-গোছানো বাসা। বেডরুমের বিছানাও পরিপাটি করে সাজানো। কার হাতের ছোঁয়ায় বাসা-বিছানা এমন জীবন্ত? উত্তর পেতে বেশিক্ষণ দেরি করতে হয় না তার। গৃহে প্রবেশের পরপরই হাজির হন শিউলি নামের একটি মেয়ে। চেহারা-ছবি কাজের মেয়ে সদৃশ্য নয়Ñশিক্ষিত এবং যথেষ্ট স্মার্ট।

এই মেয়ের সম্পর্কে প্রশ্ন করে রিয়া জানতে পারেন, মেয়েটি নাকি ডা. আলীমের দূরসম্পর্কের আত্মীয়! যদিও রিয়ার চোখে দু’জনের চলাফেলায় নিবিড় সম্পর্কের আভাস মিলতে থাকে প্রথম দিন থেকেই। দু’ চারদিনের মধ্যেই রিয়া আবিষ্কার করে ডা. আলীমের হাতে লেখা একটি ডায়েরি। ডায়েরি পড়ে রিয়া জানতে পারেন ডা. আলীমের যৌন-জীবন সম্পর্কে। মেডিকেলের ছাত্রী মুক্তি, মিলি, ফেরদৌসীÑএরকম নানা নামের মেয়েদের অস্তিÍত্ব মিলতে শুরু করে। এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে ডা. আলীম স্ত্রীকে জানায়, একজন তার প্রথম প্রেম। একজন তার সাবেক স্ত্রী। আরেকজন তার নিয়মিত রোগী। এভাবে স্বামীর লাম্পট্যের একের পর এক কাহিনি জেনে কম বয়সী আবেগী স্ত্রী রিয়ার মন বিষিয়ে উঠতে থাকে।

ভিকটিম খাদিজা ইয়াসমিন রিয়া জানান, এক সময়ে আস্তে আস্তে নিজের লোভী চেহারা মেলতে থাকে ডা. আলীম। গাড়ি কিনতে গিয়ে লোন করে ফেলেছেন, লাখ দশেক টাকা যদি জোগাড় করে দিতে! পেশাগত কাজে একটা লেজার মেশিন কেনা প্রয়োজনÑলাখ ১৫ টাকা হলে হেল্প হতোÑএরকম টেকনিক্যাল সহায়তা চাইতে শুরু করেন ডা. আলীম। এসবে উত্তরে স্ত্রী রিয়া বলতে থাকে, তুমি তো জানোই আমরা সাধারণ ফ্যামেলিÑএতো টাকা চাও কিভাবে! স্ত্রীর এমন জবাবে ডা. আলীম শুরু করেন খারাপ আচরণ। স্ত্রীকে বলেন, ঠিক আছে। টাকা জোগাড় করে না দাও, আমাকে অন্যভাবে একটু উঠিয়ে দাও। কিভাবে? স্ত্রীর প্রশ্নে ডা. আলীম বলেন, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ। বিএনপির বড় নেতাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালো। বড় নেতাদের খুশি করতে পারলে দল ক্ষমতায় গেলে আমি মন্ত্রী পর্যন্ত হতো পারবো। আমার এক বন্ধু ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি। আরেক বন্ধুর খালু হচ্ছেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদের খুশি করা গেলে সরকারের বাকি মেয়াদে আমার প্রমোশন হওয়াও সম্ভব। তুমি আমার সঙ্গে যখন ঢাকা যাবে, ওদের সঙ্গে একটু-আধটু মিশবে! জবাবে স্ত্রী রিয়া সাফ জানিয়ে দেন, তার পক্ষে এসব নোংরা প্রস্তাব মানা সম্ভব নয়! এরপরই শারীরিক অত্যাচারের পাশাপাশি শুরু হয় তীব্র মানসিক অত্যাচার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে লেখা এক আবেদনে রিয়া লিখেছেন, ‘শুরুতে ভাল চললেও বিয়ের কিছুদিন পর আমার স্বামী আমার কাছ থেকে যৌতুক দাবি করে। যৌতুকের দাবিতে মানসিক নির্যাতনের সাথে সে তার রাজনৈতিক অনেক অনৈতিক কার্যকলাপেও আমাকে জড়িত করতে চায়। একসময় সে জানায়, ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে আমাকে বিয়ে করার তার অনেক গোপন উদ্দেশ্য রয়েছে। সে আমাকে তার রাজনৈতিক নাশকতামূলক কাজ করতে বাধ্য করতে চায়। প্রথমে ভয় পেলেও এসব নাশকতা করার কিছু পরিকল্পনার কথা আমি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করি। কিন্তু বিষয়টি বুঝতে পেরে সে মোবাইল ফোনটি ভেঙে ফেলে। আমি তার রাজনৈতিক নাশকতা করার পরিকল্পনার কথা ফাঁস করে দিতে পারি এ আশঙ্কায় সে আমাকে মানসিক রোগী সাজানোর ভয় দেখায়।’

রিয়া ওই আবেদনপত্রে আরও লিখেছেন, অনৈতিক প্রস্তাব আর যৌতুকের টাকা না এনে দেয়ায় আমার ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। টাকা না পেয়ে আমার স্বামী বেপরোয়া আচরণ শুরু করে। আমাকে সামনে রেখেই অন্যান্য নারীর সাথে অনৈতিক আলাপ করে এবং তাদের সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। আমি প্রতিবাদ করলে ডা. আলীম আমাকে মারধর করে মানসিক রোগী সাজানোর চেষ্টা করে। পেশায় ডাক্তার হওয়ায় আমার স্বামী আমাকে জোর করে বিভিন্ন ওষুধ খেতে বাধ্য করে। আমি ঘুমিয়ে গেলে ঘুমন্ত অবস্থায় সে আমার শরীরে বিভিন্ন ইনজেকশন পুশ করে। এরকম চিহ্ন আমার শরীরে এখনও আছে।’

একপর্যায়ে কৌশলে রিয়াকে ঢাকায় নিয়ে আসে ডা. আলীম। উঠেন এক আত্মীয়ের বাসায়। এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর মারধর করে এ বাসা থেকে বের করে দেয়া হয় রিয়াকে। ১৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি থানায় জিডি করেন রিয়া। ২৪ অক্টোবর ডা. আলীমের বিরুদ্ধে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-৩ এ দায়ের করেন মামলা। আদালত মামলা গ্রহণ করে জারি করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। যা গত ৩ ডিসেম্বর সিলেটে পৌঁছে। তবে ডা. আলীম অফিসিয়াল কাগজপত্রে সিলেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হাজির থাকলেও রহস্যজনক কারণে পুলিশ ডা. আলীমকে গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়।

এসব বিষয়ে ডা. আবদুল আলীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রাকে তিনি বলেন, দ্বিতীয় স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মামলা করলেও আমি বর্তমানে জামিনে আছি। আইনগতভাবেই আমি আমার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা মোকাবিলা করবো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

eleven − eight =