ব্যাংকাররা ২০ হাজার কোটি টাকা চান মূলধন ঘাটতি পূরণে

0
8431

সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা বলেছেন, কোনো ধরনের ফি বা চার্জ ছাড়া ব্যাংকগুলো অনেক সেবা দিয়ে আসছে। এসব কাজে অনেক জনবল নিয়োজিত থাকায় ব্যাংকের দৈনন্দিন অন্য সব কাজ সঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে করে ব্যাংকগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এটাই মূলধন ঘাটতি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানান ব্যাংকাররা। এ ঘাটতি কমাতে সরকারি সেবার বিনিময়ে নূ্যনতম চার্জ আরোপের প্রস্তাব করেন তারা।

গতকাল বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ প্রস্তাব করা হয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালীসহ বিশেষায়িত সাত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোর সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জানা যায়, বৈঠকে কৃষি ব্যাংকের এমডি জানান, তারা তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম সুদে ঋণ দেন। ফলে লোকসান হচ্ছে। বাড়ছে মূলধন ঘাটতি।

যোগাযোগ করা হলে আর্থিক বিভাগের সিনিয়র সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো সরকারের কাছে মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তা চেয়েছে। এ ঘাটতির কারণ জানতে চাওয়া হয়। সরকারি খাতের সেবার ওপর নূ্যনতম চার্জ নির্ধারণের কথা বলেছেন ব্যাংকাররা। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অবস্থান কী- জানতে চাইলে ইউনুসুর রহমান জানান, প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হবে। তার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মূলধন ঘাটতি পূরণে সাত ব্যাংকের জন্য মোট ২০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন ব্যাংকাররা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। কীভাবে ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থা উন্নীত করা যায়, সে বিষয়ে প্রতিটি ব্যাংককে আলাদা কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। মূলধন ঘাটতি পূরণে চলতি অর্থবছরে দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওই অর্থ দ্রুত ছাড়ের অনুরোধ করা হয়। জবাবে আর্থিক বিভাগ থেকে জানানো হয়, মে মাসে ওই অর্থ ছাড় করা হবে।

সূত্র জানায়, এমডিরা বৈঠকে জানান, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের পেনশনের টাকা, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক-ভাতা, বিধবা-ভাতা, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল গ্রহণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের মাসিক বেতনসহ কমপক্ষে ৪৪ ধরনের সরকারি সেবা রয়েছে। সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এসব সেবা কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়ে থাকলেও বিনিময়ে কোনো চার্জ নেওয়া হয় না। সরকার চাইলে এসব সেবার বিনিময়ে সামান্য পরিমাণ চার্জ ধার্য করতে পারে। এ পদক্ষেপ নিলে ব্যাংকগুলোর আয় বাড়বে। এতে করে প্রতিটি ব্যাংকের বিদ্যমান মূলধন ঘাটতি কমে আসবে।

জানা যায়, এ প্রস্তাবের জবাবে আর্থিক বিভাগ থেকে বলা হয়, প্রস্তাবটি বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যালোচনা করে দেখতে পারে। কোন কোন খাতে সেবার বিনিময়ে নূ্যনতম চার্জ নির্ধারণ করা যেতে পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সংশ্নিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করবে। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে নূ্যনতম চার্জ আরোপের প্রস্তাবটি বিবেচনা করা হবে।

যোগাযোগ করা হলে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস-উল ইসলাম  বলেন, সরকারি খাতের অনেক সেবাই বিনা চার্জে দেওয়া হয়। অথচ একই সেবা বেসরকারি ব্যাংক থেকে নিলে চার্জ দিতে হয়। আমরা চাই, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা (লেভেল প্লেয়িং) হোক। সরকারি সেবায় চার্জ আরোপ করলে ব্যাংকগুলোর ওপর চাপ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার বাণিজ্যিক ও দুই বিশেষায়িত ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে জনতা ব্যাংকের ঘাটতি দেখা দিয়েছে এক হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। তিন মাস আগে ব্যাংকটিতে ১৭ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত ছিল। বরাবরের মতো সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সাত হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। হলমার্কসহ বিভিন্ন ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে আলোচিত সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি রয়েছে তিন হাজার ১৪০ কোটি টাকা। গত দুই বছরে বেসিক ব্যাংককে আড়াই হাজার কোটি টাকার মূলধন জোগান দেওয়ার পরও দুই হাজার ৫২৩ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ৭৪৩ কোটি টাকা। আর রূপালী ব্যাংকের ৬৯০ কোটি টাকা।

অপরাধ বিচিত্রা/১৫.০২.২০১৮

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × 3 =