বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে

0
1421

সোনালি আঁশ হিসেবে খ্যাত পাট নিয়ে যাঁরা ভাবেন, তাঁদের জন্য সুখবর আছে। এ বছরের শুরুতে বিশ্ববাজারে প্রতি টন পাটের দাম ১০ থেকে ২৫ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। বৃহৎ বিলাসবহুল মোটরগাড়ি উৎপাদনকারী পাঁচটি কোম্পানি তাদের গাড়ির অভ্যন্তরীণ কাঠামোর একটি বড় অংশ পাটজাত পণ্য দিয়ে তৈরির ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্বের পাটের বাজার পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ন্যাচারাল ফাইবার ওয়ার্ল্ড ওয়াইড-এর গত ফেব্রুয়ারি মাসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তবে এ কারণে বাংলাদেশ থেকে পাট রপ্তানি কতটুকু বাড়বে, সে প্রশ্ন অনেকেই তুলতে পারেন।

কারণ পাটের মূল ব্যবহার পণ্যের মোড়ক, দড়ি ও ব্যাগ হিসেবে। সেখানে তো এখনো কৃত্রিম পণ্যের জয়জয়কার। পাটের বিশ্ববাজারের সাম্প্রতিক প্রবণতা অবশ্য এই পরিস্থিতি বদলের আভাস দিচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে, ২০১৯ সালের মধ্যে তাদের সদস্যভুক্ত সব দেশ পণ্যের মোড়ক ও বহনের জন্য প্লাস্টিক এবং কৃত্রিম আঁশজাত পণ্যের ব্যবহার বন্ধ করবে। জার্মানি, পর্তুগাল, ফ্রান্সসহ বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যে প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, আফ্রিকা ও এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোও টেকসই পণ্য হিসেবে পাট ও কৃত্রিম তন্তুর ব্যবহার বাড়িয়েছে। এইচএনএম, জারার মতো বড় বড় ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে বহুমুখী পাটপণ্য কেনার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে। তিন-চার বছর ধরে পাটের শোলা বা কাঠি আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন পাটপণ্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাটকাঠি থেকে জ্বালানি হিসেবে চারকোল ও এর গুঁড়া থেকে ফটোকপি মেশিনের কালি তৈরি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানিতে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছে ৬৬ কোটি ১৮ লাখ মার্কিন ডলার, যা এই সময়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বেশি। এ তথ্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর। পাটের বিশ্ববাজারে যখন এমন অগ্রযাত্রা, তখনো দেশের সরকারি পাটকলগুলো আগের মতোই মুখ থুবড়ে আছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের হিসাবে সরকারি পাটকলগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় দ্বিগুণ শ্রমিক কাজ করছেন। আর বেসরকারি খাতের পাটকলগুলোর তুলনায় এগুলোর উৎপাদনক্ষমতা অর্ধেক। ফলে সব মিলিয়ে জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) বছরে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা লোকসান গুনছে। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, সরকারি পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি ৫০-৬০ বছরের পুরোনো। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় এগুলো আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুতার কাপড়ের বিকল্প হিসেবে কোরিয়া ও চীনের সহায়তায় ভিসকস (পাটজাত সুতার তৈরি কাপড়) তৈরির একটি কারখানা তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনের জন্য তিনটি বিশেষায়িত পাটকল স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো শেষ হলে বিশ্ববাজারের সম্ভাবনা ধরে রাখা যাবে। গত পাঁচ বছরে বহুমুখী পাটপণ্যের রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে উল্লেখ করে বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদনকারী সমিতির সভাপতি রাশেদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ইউরোপ এখনো এ দেশ থেকে কাঁচামাল নিয়ে নিজেরা প্রক্রিয়াজাত করে। বাংলাদেশ যাতে প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারে, সে জন্য গবেষণার সুযোগ তৈরি করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × two =