চালের বাজারে গিয়ে ক্রেতার স্বস্তি নেই

0
501

গত বছরের তুলনায় চালের মজুদের কমতি নেই। কমতি নেই ঢাকা শহরে ১২৮টি ট্রাকে করে ওএমএস চাল বিক্রি। তবু যেন চালের বাজারে গিয়ে ক্রেতার স্বস্তি নেই। অজানা এক কারসাজিতে চাল নিয়ে চালবাজি চলছেই। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাস থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে খোলা বাজারে (ওএমএস) চাল বিক্রির কারণে দাম কিছুটা হলেও কমতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে হতদরিদ্রদের মাঝে ১০ টাকা মূল্যের চাল বিক্রির প্রভাবও চালের বাজারে পড়তে শুরু করেছে।

বাজারে এখন প্রতি কেজি ইরি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকায়। নাজিরশাইল কেজিতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। তবে বাজার অনুযায়ী এই দামের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। পাইজাম আর লতা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৬ টাকায়। স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৪৩ থেকে ৪৬ টাকায়। সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বলছে, গত এক বছরের তুলনায় বিভিন্ন মানের চালের দাম বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ থেকে ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ খাদ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিদিন যে পরিমাণ খোলাবাজারে চাল বিক্রি হচ্ছে তাতে চালের দামে স্বস্তি ফিরে আসার কথা। কারণ এই খাতে ইতিমধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন বরাদ্দ করা হয়েছে। আর সরকার যে পরিমাণ চাল সংগ্রহ করেছে তার অর্জনের পরিমাণ প্রায় ৯৯ শতাংশ। তাদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকাতে পাইকারি চালের দর (সিদ্ধ) ৪১ টাকা থেকে ৪২ টাকা ৮৩ পয়সা। আর খুচরা দাম ৪২ টাকা ৪৪ পয়সা থেকে ৪৪ টাকা ৩৩ পয়সা। রাজশাহীতে পাইকারি ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। খুচরা ১ টাকা বেশি। রংপুরে পাইকারি ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা আর খুচরা ৩৯ টাকা থেকে ৪০ টাকা। চট্টগ্রামে পাইকারি ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা। আর খুচরা ৩৯ থেকে ৪০ টাকা। সিলেটে পাইকারি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা টাকা। আর খুচরা ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা। খুলনা ও বরিশালে পাইকারি আর খুচরাতে খুব বেশি পার্থক্য নেই। চালের বর্তমান বাজারের অবস্থা শুনে সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক খুব অবাক হয়েছেন। তিনি সম্প্রতি প্রাক-বাজেট আলোচনায় বলেছেন, চালের দাম ৩২ থেকে ৩৪ টাকা হওয়া উচিত। কারণ পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তবে যারা চাল আমদানি করছেন তাদের কথা ভিন্ন। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের বাজার এখন অস্থির। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় রফতানিকারক দেশ। সেখানেই চালের দাম টনপ্রতি বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের চালের চাহিদা থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও তারা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডেও চালের বাজার এখন অস্থির। এসব দেশে গত বছরের তুলনায় চলতি বছর চালের দাম টনপ্রতি ৩ শতাংশ বেড়েছে। সরকারের জিটুজি ক্ষেত্রেও এই দাম প্রযোজ্য বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে চালকলের মালিকদের সুর আবার কিছুটা চড়া। চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম লায়েক আলী বলেন, সরবরাহ নেই। বেশিরভাগ মিল বন্ধ। ডিলারের সাপ্লাই দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন। তবে ওএমএস চালু করার ফলে চালের দাম কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, আমদানি মূল্য বেড়ে গেছে। তাই রফতানিকারকরা এই সুযোগটা নিচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারকে আরো কৌশলী হওয়ার পরামর্শ তার। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কৃষি সংস্থা ফাও সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায় সিদ্ধ চালের বাজার বেশ কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ভিয়েতনাম, ভারত ও থাইল্যান্ড থেকে প্রচুর পরিমাণ চালের রফতানির বাজার সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী তারা সরবরাহ দিতে পারছে না। বিশেষ করে আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে এই রফতানিকারক দেশগুলোতে চালের বাজার এখন তেজীভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আর তার প্রভাব অন্যান্য দেশে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 + six =