রৌমারী ব্রম্মপুত্র নদে ওঠা চরে একই জমিতে ৬ ফসল চাষ কৃষকের মুখে হাঁসি

0
1090

মাজহারুল ইসলাম রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি ঃ
কুড়িগ্রাম জেলার ব্রম্মপুত্র নদের পুর্ব পাড় রৌমারী উপজেলায় ব্রম্মপুত্র নদে শুকিয়ে যাওয়া চরে সকল জমিতে বিভিন্ন রবি ফসল আর ফসলে সবুজ ও গমের পাকা হলুদ রংয়ে ঘেরেছে। রৌমারী ব্রম্মপুত্র নদের চরের মানুষের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে কৃষকের। এদিকে গুয়েমুড়ি, ধনিয়া, মুশুর কালাই, কাচা মরিচ, আখ, চিনা বাদামসহ ৬ টি ফসল ফলিয়েছে এক জমিতে।
চলতি মৌসুমে উজানে উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা থেকে ভাটিতে রাজিবপুরের মহনগঞ্জ পযর্ন্ত বির্স্তিন চরে এবার চাষ হয়েছে নানা ফসল। নদী ভাঙ্গনের শিকার এসব মানুষের চোখে মুখে যেন স্বস্তির পরস দিচ্ছে এসব ফসল। রৌমারীতে ব্রম্মপুত্র নদে পানি শুকিয়ে চর ওঠা প্রায় ৪ হাজার জমি ফসলের উপযোগী হয়েছে।

চরের বিস্তৃতি লাভ করার পাশাপাশি নদী খনন করে তা স্থায়ী চরে পরিনত করার সরকারের উপর দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী। এক সময় চরে পানিতে ভরপুর হয়। বন্যার সময় একচর ভেঙ্গে আরেকচর গড়ে। চরের মানুষেরা ঘরবাড়ী নিয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। গুরু, ছাগল, হাস, মুড়গি, ধান, চাউল সব ফেলে রেখে কোন কিনারায় উঠে তিরপাল বা ছাপড়া দিয়ে রাত কাটিয়ে দিনাতিপাত করে। জেগে ওঠা চরে এসব জমিতে এখন ফসল হচ্ছে নানা অর্থ করি ফসল।
চরে পলি পরা জমিতে ভুট্রা, বাদাম, তিল, চিনা, কাউন, তিশি, ধনিয়া, বোরো ধান, আখ, গুয়েমুড়ি, পেয়াজ, গমসহ নানা ধরনের রবি ফসল ফলনের জন্য খুবই উপযোগী। গত বর্ষা মৌসুমে এই চর গুলোতে অথৈই পানিতে ডুবে ছিল। জনবসতীহীন চরে কেউ কেউ জায়গার অভাবে বসতী গড়ে তুলছে। ব্রম্মপুত্র নদের চরে এখন দেখা যাচ্ছে চোখ ধাধানো বর্ণিল সবুজ ফসল। নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে মৌসুমের শুরুতে কমোর বেধে চরের জমিতে নিরলস ভাবে শ্রম ব্যায় করেন। এখানকার উৎপাদিত ফসল ভাঙ্গন কবলিত মানুষের শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। তারা ক্ষুদা ও দরিদ্র থেকে মুক্তি পাওয়ার আসায় চরে কমোর বেধে নেমেছে। চরের মানুষের সংসারে আসবে সচ্ছলতা।
খেরুয়ারচরের কৃষক ওমর আলী বলেন, এক সময় এই ব্রম্মপুত্র নদে সব ভেঙ্গে চুড়ে শেষ হয়েছে। এবার এক চর ভেঙ্গে আমাগো এই চর জেগে চরের মানুষের ভাগ্য বদলিয়েছে। তিনি আরো বলেন, চর জেগে উঠার পর আমি মনে মনে মন্তব্য করেছি একটি জমিতে ৫-৬ টি ফসল দিবো। সেই ভাবেই জমিতে ৬ টি ফসল বুনেছি। তাতে ফসলের যে সুন্দর চেহারা দেখে আমার মনটা ভরে গেছে। ফলুয়ারচর গ্রামের শাহাআলম বলেন, চর জাগার পরে আমি বোরো ধান, বাদাম, পেয়াজ, বুনেছি, তাতে ফলন খুব ভালো হয়েছে। ৩ বিঘা জমি চাষ করেছি তাতে আমার স্বল্প খরচেই অধিক ফলন পাবো বলে আমার আসা। চর খেদাইমারীর পাশান আালী বলেন, আমি ৫থেকে সাড়ে ৫ বিঘা জমিতে ধান, গম, ডাল, সবজি, চিনা বাদাম, পেয়াজ, রসুন, গুয়েমুড়ি, তিল, ধনিয়া চাষ করেছি। উৎপাদিত ফসল নিজের চাহিদা মেটানোর পর তা রৌমারী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে পারবো। যদিও যাতায়াতে সমস্যা তাও কষ্ট হলেও বাজারে নেবো।
এ ব্যাপারে রৌমারী কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্যাহ আল মামুন বলেন, ব্রম্মপুত্র নদের চরে ধান, কলাই, ভুট্রা, মসলা, সবজিসহ নানান জাতীয় রবি ফসল চাষাবাদ করে কৃষকরা। চরের এই জমি গুলোতে কৃষকের বেশি অর্থ খরচ করতে হয়না। অল্প খরচে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল ফলাচ্ছে এবং বেশি লাভবান হচ্ছে। তবে যদি নদটি খনন করে দু’পাশে বাধঁ নির্মান করা যেত হয়তো নদী ভাঙ্গন রোধ হয়ে ধীরে ধীরে ফসলের আরো পরিধি বারতো এবং বসতিও হতো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × 3 =