অর্থ আত্মসাৎ ভুয়া উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে

0
618

ঢাকার সাভারের ভাকুর্তা ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) ও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির (ইজিপিপি) আওতায় ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে অন্তত আটটি প্রকল্প সরেজমিনে দেখা হয়। দেখা যায়, ছয়টি প্রকল্পে কোনো কাজ হয়নি। দুটি প্রকল্পে আংশিক কাজ হয়েছে।  নির্দিষ্ট সময়ে তথ্য না পেয়ে তিনটি আবেদনের জন্য একই বছরের ৮ মে, ১০ জুলাই ও ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কাছে আপিল করা হয়।

এরপর একটি আবেদনের তথ্য পাওয়া গেলে ৪ জুন ও ২১ আগস্ট তথ্য কমিশনে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পিআইওর কার্যালয় থেকে ধাপে ধাপে প্রায় সব তথ্য সরবরাহ করা হয়। এসব তথ্য বিশ্লেষণের পর সরেজমিনে জানা গেল, কংক্রিট ও ইট বিছানো সড়কেও মাটির কাজ দেখিয়ে টাকা তোলা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভাকুর্তা ইউনিয়নে কাগজ-কলমে ৪৪টি প্রকল্প দেখিয়েছে সাভার পিআইওর কার্যালয়। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ১ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ২৬৮ টাকা। এর মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইজিপিপি প্রকল্পে দুই দফায় ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ রয়েছে। ইজিপিপির আওতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামলাশী জয়নালের বাড়ি থেকে হাসিমের বাড়ি, স্কুল থেকে বাবুর বাড়ি ও সিরাজের বাড়ি থেকে আলীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়ন বাবদ বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ওই প্রকল্পে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৮০ জন। একই রাস্তায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাবুর ঘাট থেকে শ্যামলাপুর উচ্চবিদ্যালয় ও হাসেমের বাড়ি থেকে জালাল সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় মাটির কাজ দেখিয়ে উত্তোলন করা হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। প্রকল্পটিতে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৪১ জন। অথচ এ দুই প্রকল্পের সিংহভাগ রাস্তাই কংক্রিট ও ইটের তৈরি। শ্যামলাশী মোস্তফার বাড়ি থেকে দুদু মার্কেটের রোড পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়নের জন্য ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। প্রকল্পটিতে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৩০ জন। কিন্তু এ বছর ওই রাস্তায় কোনো মাটি ফেলা হয়নি বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ লাখ ২৪ হাজার টাকায় মোগড়াকান্দা সড়ক থেকে মজিবর রহমানের পোলট্রি ফার্ম পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, পোলট্রি ফার্মের কাছে ১০০ ফুট জায়গায় দুই ফুট প্রশস্ত করে মাটি ফেলা হয়েছে। একই অর্থবছরে চুনারচর সামনহাটি রাস্তা হতে চুনারচর খাল পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রকল্পটিতে শ্রমিক দেখানো হয়েছে ৩৫ জন। কিন্তু রাস্তার দুই প্রান্তে ১০০ ফুট করে মাটি ফেলেই কাজ শেষ করা হয়েছে। কাবিটার আওতায় ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে মোগড়াকান্দা হাজি ইব্রাহীমের বাড়ি থেকে মিয়াচান্দের বাড়ির কাছে কালভার্ট পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ওই টাকায় রাস্তা পুনর্নির্মাণের পরিবর্তে পুরোনো রাস্তার ওপর কয়েক ট্রাক ভাঙা ইট ফেলা হয়। একই রাস্তায় সরকারের অন্য একটি প্রকল্প থেকে মিয়াচান্দের বাড়ির কাছে ইট বিছাতে দেখা যায়। কোনো অস্তিত্বই পাওয়া যায়নি মোগড়াকান্দা-হিন্দুভাকুর্তা-সাভার সড়কের জসিমের বাড়ি থেকে কান্দিভাকুর্তা মোসলেমের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তার। রাস্তাটি পুনর্নির্মাণের জন্য ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৭৮ হাজার ২৫৮ টাকা বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি ডোমড়াকান্দা রমজানের বাড়ি থেকে নলাগারিয়া আলী মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে। স্থানীয় মুদি দোকানি ইস্কান্দার বলেন, তিন মাস ধরে তিনি সেখানে দোকান দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে ওই রাস্তায় কোনো কাজ হয়নি। ভাকুর্তা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে যে বরাদ্দ দেওয়া হয় স্বচ্ছতার সঙ্গে তা খরচ করা হয়। ভুয়া প্রকল্প দিয়ে বা কাজ না করে অর্থ তছরুপ করা হয় না।’ অবশ্য ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মোহাম্মদ আলী ইজিপিপি প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি এসব বিষয়ে গত বছর মে মাসে ঢাকা জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। জানতে চাইলে পিআইও একরামুল হক বলেন, ভুয়া প্রকল্প দিয়ে বা কাজ না করে সরকারি অর্থ আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। ইউএনও শেখ রাসেল হাসান গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে  বলেন, ‘এসব বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখব। অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve − 4 =