বেলকুচিতে প্রকল্পের নামে অর্থ আত্মসাৎ, টাকার বিনিময়ে প্রতিবাদ, তিব্র নিন্দা এলাকাবাসীর

0
576

খন্দকার মোহাম্মাদ আলী , সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নে ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দি রুরাল পুয়র (ডরপ) শাখা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের অধীনে যুব প্রশিক্ষণ,বিশেষ চক্ষু ক্যাম্প,রিং কাল্ভার্ট নির্মানে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে  ইউনিয়ন  সমন্বয়কারী মোঃ আবু মুনসুর ফকিরের বিরুদ্ধে । জানা যায় ,গত ২০১৫-১৬-১৭ অর্থ বছরে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ )এর আর্থিক সহায়তায় ডরপ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যামে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ আসে । যার সিংহভাগ অর্থই এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় আত্মসাৎ করেছে মন্সুর ফকির ।

ডরপ প্রতিষ্ঠানের শমেশপুর শাখা অফিসের কর্মচারি সূত্রে জানাযায়, রাজাপুর ইউনিয়নে ৫ ওয়ার্ডে  যুব প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ আসে । যার প্রতিটি ব্যাচে ৩০জন করে প্রশিক্ষনার্থি  অংশ গ্রহণ করে ২দিন করে । মোট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ৫ ব্যাচে  ১৫০জন। মাথা পিছু ব্যায় করার কথা ১৫০ টাকা ।কিন্তু রমজান মাসে প্রশিক্ষণ হওয়ায় শুধু মাত্র ইফতারি বাবদ মাথা পিছু ব্যায় করেছে ৬০ টাকা । এতে করে মোট বরাদ্দকৃত ২২৫০০ টাকার মধ্যে ৯ হাজার টাকা খরচ করে বাকি ১৩৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে । এছাড়া রাজাপুর ইউনিয়নে  ইসলামপুর ঠাকুরপাড়া,আম্বারিয়া প্রাইমারী স্কুলের পাশে ,রাজাপুর লিটনের বাড়ির পাশে ,আগুরিয়া সরকারি প্রাথমিক  বিদ্যালয়ের পাশে ,নাগগাতি কদমতলির মাঝামাঝি স্থানে, তামাই রোড থেকে নাগগাতি রাস্তায় মোট ৬ টি স্থানে রিং কাল্ভার্ট স্থাপন বাবদ ১ লক্ষ২০ হাজার টাকা ব্যায় ধরা থাকলেও সেখানে  অর্ধেক টাকা ব্যায় করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায় ।প্রতিটি বিশেষ চক্ষু ক্যাম্পের অধীনে ২০ জন করে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা যার জন্য রোগীপ্রতি ব্যায় ধরা হয়েছে ২৫০০ টাকা। কিন্তু  সেখানে অর্ধেক টাকা ব্যায় করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করেছে ।  অন্যান্য বছরের ন্যায় ২০১৮ সালে মার্চ  মাসে চক্ষু ক্যাম্পের অধীনে ১৫ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা থাকলেও ১৩ জনকে সেবা দিয়ে ২ জন রোগীর টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে যানাযায়।  অপর দিকে বহুল আলোচিত ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে  প্রকাশিত বেলকুচিতে  প্রকল্পের নামে ভিক্ষুক ও মসজিদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয় তার জন্য অনলাইন পোর্টালে আবু মুনসুর ফকির  টাকার বিনিময়ে কিছু নামধারী সাংবাদিককে ব্যাবহার করে প্রতিবাদ দেয় ।  এই প্রতিবাদের তিব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদকগণ  মুনসুর ফকিরের দুর্নীতি ও অসহায় হত দরিদ্রদের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আবারো সরজমিনে তদন্তে মাঠে নামেন। যার প্রেক্ষিতে এলাকাবাসী মুনসুর ফকিরের বিভিন্ন দুর্নীতি ও অসামাজিক কার্যকলাপের নানাবিধ তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন প্রতিবেদকদের। যা  ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করা হবে । ডরপ প্রতিষ্ঠানের  ইউনিয়ন সমন্বয়কারী আবু মুনসুর ফকিরের বিরুদ্ধে  ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ )এর আর্থিক সহায়তায় রাজাপুর ইউনিয়নে  ১৯টি মসজিদে অগভীর নলকূপ ও স্যানিটেশন ল্যাট্রিন স্থাপন করার জন্য প্রকল্পে কাজ শুরু করে । বিভিন্ন মসজিদ কমিটি সুত্রে জানাযায়, সমৃদ্ধি কর্মসুচী প্রকল্পের কাজের বিবরন দিয়ে যে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে তাতে প্রতিটি মসজিদের মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার টাকা । কিন্তু  এই  প্রকল্পের কাজের  টাকা ব্যায়ের ব্যাপারে  মসজিদ কমিটিকে কিছু জানানো হয়নি । এছাড়া ১৯টি মসজিদের মধ্যে  অধিকাংশ মসজিদেই প্রকল্পের সাইনবোর্ড  লাগিয়ে কাজ অসমাপ্ত রেখেই অর্থ উত্তোলন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে । অপরদিকে  ভিক্ষুক পুর্নবাসন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দের গোপনীয়তা নিয়ে  প্রকল্পের অধিকাংশ টাকা  আত্মসাত করেছে ইউনিয়ন  সমন্বয়কারী আবু মুনসুর ফকির। এ বিষয়ে মাইঝাইল গ্রামের অসুস্থ্য ভিক্ষুক কাজেম শেখের মেয়ে  ও শমেসপুর গ্রামের ভিক্ষুক বুলবুলি বেগম জানান, তাদের প্রতিজনকে ১ লক্ষ টাকা করে  দেয়ার কথা  থাকলেও তাদের  ১ লক্ষ টাকার হিসেব বুঝিয়ে দেয়া হয়নি । এমনিভাবে  অন্যান্য ভিক্ষুকদের প্রকল্পের টাকা আত্মসাত নিয়ে নানাবিধ  অভিযোগ উঠেছে ডরপ এর ইউনিয়ন সমন্বয়কারী মুনসুর ফকিরের বিরুদ্ধে।এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর  এলাকার কিছু প্রভাবশালীদের দিয়ে অসহায় ভিক্ষুকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে  প্রকল্পের পুরো অর্থ  তারা বুঝে পেয়েছে বলে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে বলার জন্য চাপ দিয়েছে ।  বিষয়টি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ )এর কর্মকর্তা মোঃ নুরুল বাসার অবহিত হওয়ার পর তিনি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন(পিকেএসএফ )এর অডিট অফিসার মোঃ হাবিবুর রহমানকে তদন্ত পুর্বক ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য রাজাপুর ডরপ শাখা অফিসে পাঠিয়ে দেন ।এ বিষয়ে ডরপ রাজাপুর শাখা অফিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, মন্সুর ফকিরের হাত অনেক লম্বা ।সে টাকার বিনিময়য়ে তার সব অপকর্ম ধামাচাপা দিতে পারে ।এছাড়া  প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় চলার কারনে অফিসের অন্যান্য কর্মচারিদের সে পাত্তা দেয় না । তার বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারির  অভিযোগ রয়েছে এলাকাতে । এছাড়া অফিসের উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে মনসুর ফকির ম্যানেজ করে চলে বলেই অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যাবস্থা নেয়া হয়না ।  তিনি আরো জানান , অফিসের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের  সাথে যোগসাজশের কারনে  বিভিন্ন অপকর্ম করেও  চাকুরী চলে যাওয়ার বা বদলী হওয়ার ভয় পান না তিনি ।এজন্য অফিসের অন্যান্য কর্মচারিরা বিষয়গুলো যেনেও কারো কাছে মুখ খুলতে চান না ।  তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন প্রতিনিয়ত দেখি বিভিন্ন সাংবাদিক ও প্রভাবশালীরা  তার কাছে আসে চা নাস্তা খেয়ে পকেট ভারি করে হাসিমুখে চলে যায় । এসব ম্যানেজ করার পদ্ধতি দেখতে দেখতে আমরাও অভ্যস্থ হয়ে গেছি । তাই আর কাওকে কিছু বলতে চাইনা । যানলে  উল্টো আমাদের চাকরি চলে যাবে । বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে প্রতিবেদক বেলকুচি উপজেলা নির্বাহি অফিসার মোঃ ওলিউজ্জামানকে জানালে তিনি এ ব্যাপারে অবহিত নয় বলে জানান।তবে কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে তিনি  জানান। এ বিষয়ে এলাকার সচেতন মহল জানান, ভিক্ষুক, মসজিদ ও বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে যে ব্যাক্তি বহাল তবীয়তে রয়েছে তার বিরুদ্ধে এখনো কোন  ব্যাবস্থা প্রাতিষ্ঠানিক ও  প্রশাসনিক ভাবে নেয়া হয়নি  আর কোন দিন হবে বলেও মনে হয়না । দুর্নীতিবাজরাই কৌশলী  জ্ঞানের আধারে টাকার বিনিময়ে তাদের সব অপকর্ম এভাবেই ধামাচাপা দিয়ে থাকে । আপনারা গণমাধ্যম নীরবে বসে না থেকে দুর্নীতি বাজদের মুখোশ খুলে দিন ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − fifteen =