সারা দেশে কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতে ১০ জন নিহত

0
639

দেশের বিভিন্ন জেলায় গতকালও কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বজ্রপাতে ৫, শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে ৫ জন রয়েছেন।এছাড়া শিলাবৃষ্টিতে আহত হয়েছে কয়েক শতাধিক মানুষ। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসল।

 

পাবনার সুজানগরে মাঠে পিয়াজ তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে ৩ কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন-উপজেলার মানিকহাট ইউনিয়নের বিক্রমাদিত্য গ্রামের মুক্তার শেখের ছেলে দুলাল হোসেন (৪০), আবদুুল আজিজ মোল্লার ছেলে আবদুুল আলিম (৩২) ও মোতাহার আলীর ছেলে লইম উদ্দিন (৫০)। শুক্রবার রাতে কোনো এক সময় তাদের ওপর বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। তারা মাঠে পিয়াজের জমি পাহারা দিতে গিয়ে প্রাণ হারান। শনিবার  বেলা ১২টার দিকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সুজানগর সার্কেল) মো. ফরহাদ হোসেন এ ঘটনার সতত্যা নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার বিকেলে মানিকহাট ইউনিয়নের হাটখালী মৌজার একটি মাঠে নিজের জমিতে পিয়াজ তুলতে যান ওই তিন কৃষক। ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে তারা বাড়িতে ফিরে যান। পরে রাতে পুনরায় মাঠ থেকে তোলা পিয়াজ পাহারা দিতে যান তারা। এ সময় আবারও ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। একপর্যায়ে তাদের ওপর বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

ফরহাদ হোসেন আরো জানান, রাতে বাড়ি না ফেরায় স্বজনরা তাদের খোঁজাখুঁজি করেও তাদের সন্ধান পায়নি। শনিবার বেলা ১২টার দিকে ওই মাঠে পিয়াজ তুলতে গিয়ে স্থানীয়রা তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।

পীরগঞ্জের ৬টি ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আঘাতে শিশুসহ অন্তত ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। মাত্র দেড় মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে কয়েক হাজার টিনের ঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। প্রায় সহস্রাধিক হেক্টর জমির উঠতি ফসল তছনছ হয়ে গেছে।

একেকটি শিলা পাথরের ওজন প্রায় ২ থেকে সাড়ে ৪শ’ গ্রাম। কোথাও কোথাও ১ কেজি ওজনের শিলাও পড়েছে। ক্ষেতে কাজ করতে থাকা অধিকাংশ কৃষকই শিলা-বৃষ্টির শিকার হয়েছেন। মারা গেছে ৫টি গরুও। গুরুতর আহতদের পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের প্রথম ও স্মরণকালের ভয়াবহ এ শিলা-বৃষ্টির আঘাতে ঘরের টিনগুলো অজস্র ফুটো হওয়ায় ঘরে থাকা আর খোলা আকাশের নিচে থাকা সমান হয়ে গেছে। কেউ কেউ নতুন টিন এনে ঘর নির্মাণ করলেও দরিদ্র শ্রেণির মানুষ পড়েছে বিপাকে। ওইসব অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে আকস্মিক টিনের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি বান্ডেল টিনে এক হাজার টাকা বৃদ্ধি করা হলেও টিনের সংকট চরমে।

এদিকে ফসলের ক্ষেতে শিলা-বৃষ্টির ধ্বংসলীলা দেখে অনেক কুষক কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার চৈত্রকোল, টুকুরিয়া, মদনখালী, বড়দরগাহ্‌, কাবিলপুর ও চতরা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে শিলাবৃষ্টি আঘাত হানে। উঠতি ফসলের মধ্যে ধান, ভুট্টা, গম, মরিচ,  বেগুন, পটল ইত্যাদি। বিশেষ করে আম, লিচু ও কলা বাগানের অবস্থা ভয়াবহ। শিলা-বৃষ্টির শিকার অঞ্চলগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

 

গত ২ দিনে শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলে ঝড়-শিলা বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ও শনিবার ভোর রাতে বয়ে যাওয়া ঝড়-শিলা বৃষ্টিতে চলনবিল এলাকায় রোপণ করা বোরো ধান এবং রবি শস্য রসুন ও ভুট্টাচাষিদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। জানা গেছে, ঝড়-শিলা বৃষ্টিতে সদ্য ফুলে বারানো ও থোর ধানের সব চাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এছারা রসুনের জন্য বিখ্যাত চলনবিলের রসুন চাষিরা পুরোদমে রসুন তোলা শুরু করেছে অসময়ে বৃষ্টির ফলে রসুনে পচন শুরু হয়েছে। চলনবিলে নাদোসৈয়দপুর গ্রামের রসুনচাষি মো. মোহাররম হোসেন বলেন, এ বছরে রসুন আবাদে অন্য বছরের তুলনায় খরচ বেশি হয়েছে। বাজারে আগের যে কোনো সময়ের চাইতে দামও কম, এরপর শিলা-বৃষ্টিতে রসুনের ক্ষতি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বেশি দামের আশায় রসুন ঘরে রেখে দেবো তাও সম্ভব নয় বৃষ্টির কারণে রসুনে পচন ধরে যাচ্ছে। চলনবিলের বিনসাড়া গ্রামের কৃষক মো. ইব্রাহীম হোসেন জানান, ইরি-বোরো ধান ফোলা শুরু হয়েছে আবার অনেক ধান ফোলার উপক্রম এবস্থায় ঝড়-শিলা বৃষ্টিতে ধানের ফলন বিপর্যয় ঘটবে। তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চলনবিল এলাকায় উৎপাদিত ধান দিয়ে কয়েক জেলার খাদ্য ঘাটতি পূরণ হয়। এভাবে ঝড়-শিলা বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হবে এবং দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা  দেবে।

 

ঝড়ের সময় গুরুতর আহত হয়ে সিলেটের যুবলীগ নেতা মোসাদ্দেক হোসেন মুসা মারা গেছেন। শনিবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। গত বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোসাদ্দেক হোসেন মুসা মোটরসাইকেলে করে দক্ষিণ সুরমা থেকে রিকাবীবাজারে আসার পথে কাজিরবাজার সেতুতে দুর্ঘটনার শিকার হন। তখন সিলেটে প্রবল ঝড় বইছিল। মোটরসাইকেলে কাজিরবাজার সেতু পার হওয়ার সময় হঠাৎ করে একটি চটপটির গাড়ি উড়ে এসে তার উপরে পড়ে। এতে তিনি মোটরসাইকেলসহ ছিটকে পড়ে যান। এ সময় তিনি গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং কান দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। পরে ওসমানী হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া শেষে রাতেই তাকে নগরীর ওয়েসিস হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শুক্রবার সকালে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

 

ওসমানীনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার উপর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে কালবৈশাখি ঝড় বয়ে গেছে। ২০ মিনিটের ঝড়ে এক মহিলা ও এক শিশু মারা  গেছে। ঝড়ের সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। ভয়াবহ ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে গোটা ওসমানীনগর উপজেলা। লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, শতাধিক ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এর ফলে বৈদ্যুতিক বিপর্যয় দেখা  দেয়। ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে উপজেলাজুড়ে। অন্ধকারে নিমজ্জিত গোটা উপজেলা। এ সময় উপজেলার তাজপুর ইউপির দশহাল গ্রামে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে নূরুল আলমের নির্মাণাধীন ঘরের টিন উড়ে গিয়ে গলা কেটে সাবিয়া  বেগম (৪৫) নামের এক মহিলা ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত সাবিয়া বেগম বালাগঞ্জ উপজেলার  বোয়ালজুরের সোনাপুর গ্রামের খালিছ মিয়ার স্ত্রী বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর থানার ওসি মোহাম্মদ সহিদ উল্যা। এছাড়া ঝড়ের সময় পানিতে ডুবে হাসান আহমদ নামের ১৬ মাসের এক শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত হাসান উপজেলার উমরপুর ইউপির সিকান্দরপুর রং বরং গ্রামের সুমন আহমদের ছেলে বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য আকলু মিয়া। সন্ধ্যায় পুলিশ নিহতের নিজ বাড়ির পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।

চাঁদপুর শহরে আচমকা ঘূর্ণিঝড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আজ চাঁদপুরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষে দলীয়ভাবে চাঁদপুর শহরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুরো শহরে ব্যানার আর ফেস্টুন লাগিয়ে রাখে। শুক্রবার বিকালে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড করে ফেলে পুরো শহরকে। এতে করে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রচারণার ব্যানার আর ফেস্টুন। এদিকে চাঁদপুর স্টেডিয়ামের জনসভাস্থলের মাঠ ও মঞ্চের কিছুটা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। প্রচণ্ড বাতাসের কারণে মঞ্চের চারপাশের পর্দা ছেড়ে যায়। এছাড়া মঞ্চের আশপাশের বাঁশ হেলে পড়ে। অন্যদিকে শহরের বিভিন্ন মোড়ের বাঁশের ব্যানারগুলো হেলে পড়েছে। আচমকা এমন ঝড়ে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে নেতাকর্মীরা যেভাবে সাজ-সাজ রবে শহরকে সাজিয়ে ছিলেন কিন্তু হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে সব সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। অপরদিকে এসব ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেক নেতাকর্মী সড়কে নেমে পড়েছেন ব্যানার-ফেস্টুন ঠিক করার লক্ষে।

এদিকে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। শহরের একাংশ প্রায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎহীন পড়ে থাকে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরো শহরে আংশিকভাবে স্বাভাবিক হলেও শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ ছিলো না দীর্ঘক্ষণ। অন্যদিকে সদর উপজেলার সফরমালী, খেরুদিয়া, কল্যাণপুরসহ কয়েকটি গ্রামে খবর নিয়ে জানা গেছে ঝড়ে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উঠতি ফল ও ফসলে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আকাশ ছিল রৌদ্রোজ্জ্বল। হঠাৎ সন্ধ্যান কিছুক্ষণ আগে  আকাশ কালো করে ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা চলে এই ঝড় বৃষ্টি। ঝড়ের কবলে পড়ে কাঁচা ছোট-বড় গাছ ভেঙে গেছে। উঠতি ফলমূল গাছ হতে ঝরে পড়ে গেছে।

চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে বজ্রপাতে এক নারী নিহত হয়েছেন। নিহত ওই নারী শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কয়লার দিয়াড় গ্রামের সাইদুল ইসলামের স্ত্রী সখিনা বেগম (৩৭)। শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে ৩ টার দিকে ঝড়-বৃষ্টি দেখে ঘর থেকে বাইরে বের হয়ে খড়ি উঠাচ্ছিলেন এমন সময় বজ্রপাতে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এ ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম জানান, শ্যামপুর ইউনিয়নের কয়লা দিয়াড় গ্রামে বজ্রপাতে এক নারী মারা গেছে আমরা তথ্য পেয়েছি। নিহত নারীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহের পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

 

বরগুনার তালতলীতে বজ্রপাতে মো. সজল (২৮) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার সকাল ৯ টায় উপজেলার সকিনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সজল উপজেলার মরানিদ্রা গ্রামের মো. সুলতানের ছেলে। স্থানীয়রা জানান, শনিবার সকালে নিহত সজল বাড়ি থেকে সকিনা ঘাটে নদীতে জাল ফেলার জন্য রওনা করলে পথে হঠাৎ বৃষ্টিসহ বড় ধরনের বজ্রপাত শুরু হয়। ঘটনাস্থলেই বজ্রপাতের আঘাতে মারা যান তিনি। বিষয়টি নিদ্রা সকিনা কোস্টগার্ড নিশ্চিত করেন।

 

ঘর-বাড়ি আছে কিন্তু টিনের চালা ফুটো। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে ফসল ও ঘরবাড়িসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত শুক্রবার সকালে প্রায় ২০ মিনিটের বেশি শিলা-বৃষ্টির তাণ্ডব চলে। প্রায় ৪ হাজার হেক্টর ফসলি জমি সবজি, ভুট্টা, ধান, আম ও লিচু নষ্ট হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩ জন। তারা হলেন- কাশিপুর ইউনিয়নের পশ্চিম কাশিপুর  গ্রামের পরেশ চন্দ্রের ছেলে নিতাই চন্দ্র (৫৫) মধ্যকাশিপুর গ্রামের মৃত হাবিবউল্লার মেয়ে হাফিজা বেগম (৫০) ও অনন্তপুর বালাবারী গ্রামের আবদুর রউফের ছেলে মইনুল হক (৪৫)। শিলা-বৃষ্টির আঘাতে প্রায় ১৫ হাজার  ঘর-বাড়ির টি?নের চাল ফুটো হয়ে গেছে। লণ্ড ভণ্ড হয়েছে  বৈদ্যুতিক লাইন এতে তারা রাত্রী যাপন করেছেন খুব কষ্টে। ঘর-বাড়ি মেরামতের জন্য বাজারে বেড়েছে ঢেউটিনের দাম। তা সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে। ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী তিন উপজেলায় এক সঙ্গে বেড়েছে প্রতি বান্ডিল ঢেউটিনের দাম বেশি হয়ে ৩ শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা পর্যন্ত। ঢেউটিনের দোকানে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও পর্যাপ্ত টিন দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে কাশিপুর ইউপি চেয়ারম্যান গোলজার হোসেন মণ্ডল জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে উপজেলা ত্রাণ অফিসে পাঠিয়েছি। সরকারিভাবে তারা সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলার নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ উরাঁও জানান, প্রাকৃতিক তাণ্ডবে ফসলসহ বাড়ি-ঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত্থ কৃষকের তালিকা করেছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদেরকে ক্ষতিপুরন দেয়া হতে পারে।

 

শুক্রবার বিকেলেমেহেরপুর জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে গাংনীর মটমুড়া, বামন্দি , ষোলটাকা ও কাজিপুর ইউপির অর্ধশত গ্রামের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গাতেই ভেঙ্গে পড়েছে গাছপালা।  শিলাবৃষ্টি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, অনেক ঘরের চাল ফুটো হয়ে গেছে। দেয়াল চাপা পড়ে ও গাছ চাপা পড়ে আহত হয়েছেন ১১ জন। বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়ায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ওই এলায় বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিল। ক্ষতিগ্রস্ত্তরা বলছেন, এত বড় শিলা তারা কখনও দেখেননি। মেহেরপুর সদও ও মুজিবনগর এলাকায় অনেক ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

কুড়িগ্রামে শুক্রবার ঘটে যাওয়া আকস্মিক শিলা-বৃষ্টির কারণে কৃষি জমিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাঠপর্যায়ে চলছে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। শিলঝড়ের কারণে কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ীতে ফসলসহ  ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়ে?ছে। শিলের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক টিনঘরের চাল। দু’দফায় প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে চলে এ তাণ্ডব। এ সময় ঘরে আটকে পড়ে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো। শিলা-বৃষ্টির কারণে শীষ বের হওয়া বোরো ফসলের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজি ক্ষেতসহ কাঁঠাল, আম ও লিচুর বাগান। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আবদুর রশিদ সরকার জানান, শিলা-বৃষ্টির কারণে জেলার ৩টি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫১০ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে বোরো ৯০ হেক্টর, ভুট্টা ও শাক-সবজি ১০ হেক্টর করে, ফুলবাড়ী উপজেলাতে বোরো-১২৫ হেক্টর, ভুট্টা ৫৫ হেক্টর, শাক-সবজি ৭৫ হেক্টর এবং নাগেশ্বরীতে বোরো ৮৩ হেক্টর, ভুট্টা ২৫ হেক্টর ও ৩৫ হেক্টর শাক-সবজি আক্রান্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্ন পরার্মশ প্রদান করছে।

অপরদিকে জেলা ত্রাণ শাখা সূত্র জানিয়েছে, শিলা-বৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির তালিকা ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিকট চাওয়া হয়েছে। তালিকা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

 

প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে ভোলার পূর্ব ইলিশাঘাটে সওজ বিভাগের রাস্তার কাজের জন্য আসা অর্ধ কোটি টাকার পাথরসহ দু’টি কার্গো ডুবি।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট মেঘনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, সিলেট থেকে এমবি রাইফা ও এমবি সাদিয়া নামে কার্গো দু’টি ভোলার সড়ক মেরামতের জন্য পাথর নিয়ে ভোলায় আসেন। সকালে মেঘনা নদীর তীরে ইলিশা ফেরিঘাটে নোঙর করা অবস্থায় ছিলো জাহাজ দু’টি। সকালে দমকা হাওয়া আর প্রবল ঝড়ের মুখে পড়ে কার্গো দু’টি নদীতে পাথরসহ ডুবে যায়।

মেসার্স শহীদ ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানান, ভোলার সওজ বিভাগের কাজে সিলেট থেকে ভোলার রাস্তার কাজে দু’টি কার্গোতে ৫০ লাখ টাকার পাথর আনা হয়। এই পাথরসহ কার্গো দু’টি প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে ইলিশা ফেরিঘাট মেঘনা নদীতে ডুবে যায়। কার্গো দু’টির মধ্যে এমবি রাইফা নামে জাহাজটি পাওয়া গেলেও অপরটি এমবি সাদিয়ার সন্ধান সংবাদ লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কার্গো দু’টি উদ্ধারের জন্য তৎপরতা রয়েছে উদ্ধার টিম এবং অপরটি সন্ধানের জন্য ডুবুরী নামিয়ে উদ্ধারের কাজ অব্যাহত আছে বলে নিখোঁজ সূত্রে জানা যায়।

স্থানীয়রা বলেন, গতকাল সকালে ভোলায় বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড ঝড়ো হাওয়ার কারণেই জাহাজ দু’টি তলিয়ে যায়।

 

শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে শুক্র ও শনিবারের শিলা-বৃষ্টিতে শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধাসহ ২টি ইউনিয়নের আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ জনে। অপরদিকে শিলাবৃষ্টির তাণ্ডবে মরিচপুরান ইউনিয়নের গোজাকুড়া নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫টি শ্রেণিকক্ষ, একটি অফিস রুম ও রূপনারায়ণকুড়া ইউনিয়নের একটি মাদ্‌রাসা হাজী হাবিবুল্লাহ মাদ্‌রাসার ঘর তছনছ হয়ে গেছে। এসব ঘরবাড়ি, প্রতিষ্ঠান, ক্ষেত ফসলাদী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।

নালিতাবাড়ী উপজেলায় শিলায় ২টি ইউনিয়ন মরিচপুরান ও রূপনারায়ণকুড়ার কমপক্ষে ১০টি গ্রামের বসতবাড়িতে সর্বোচ্চ ২ কেজি ও সর্বনিম্ন আড়াইশ’ গ্রাম ওজনের শিলা পড়ার প্রমাণ মিলেছে প্রায় প্রতিটি গ্রামে। একইদিনে রূপনারায়ণকুড়া দক্ষিণ কাউয়াকুড়ি গ্রামের আঃ মান্নানের একটি দোচালা টিনের ঘর উড়িয়ে ভেঙে-চুরে তছনছ করে গেছে। এ ঘটনায় এলাকায় মানুষের মাঝে আর্তনাদের রাহাজানি ও ভয়-ভীতি শুরু হয়েছে।

এলাকাবাসী, ইউপি চেয়ারম্যান ও হাসপাতাল সূত্রে, ২ দিনের শিলার তাণ্ডবে নালিতাবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শিলার তাণ্ডবে লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে ২টি ইউনিয়ন মরিচপুরান ও রূপনারায়ণকুড়া। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গুজাকুড়া গ্রাম। শিলার তাণ্ডবে এ গ্রামের ৬ জনের আহতের খবর পাওয়া গেছে এর মধ্যে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন ২জন। তারা নালিতাবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরা হলেন- গুজাকুড়া গ্রামের সুর্বণা (৪০), ফয়েজ উদ্দিন (৬০), মোকছেদুর (৪০), আবু দারদা (২০)। গুরুতর আহত ২ জন আফাজ উদ্দিনের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (৪০) ও বৃদ্ধা বেলাল উদ্দিন (৬০), জবেদা খাতুন (৩৫), কেতু মিয়া মিয়া (৫০), রূপনারায়ণকুড়া কৃঞ্জপুর গ্রামের শিশু পারভেজ (১০) আয়নাতলী গ্রামের ছাহেরা খাতুন (৬৫), আবু দাউদ (২৮)।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × three =