ইলিশের দামে টের পাওয়া যাচ্ছে বৈশাখি উত্তাপ

0
809

বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। আর মাত্র সাত দিন পরই জাতি মেতে উঠবে এ উৎসবে। এ উপলক্ষে অনেকেই পোশাক-গহনা কিনেছেন। এরইসঙ্গে চলছে ইলিশ কেনার প্রস্তুতিও। বৈশাখে ইলিশ যেন না হলেই নয়। এ সময়ে ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে সপ্তাহ দুয়েক আগেই ইলিশ কিনে ফ্রিজে রেখেছেন। চাহিদা বেশি থাকায় ইলিশের দামে টের পাওয়া যাচ্ছে বৈশাখি উত্তাপ। অপরদিকে বরিশালে হঠাৎ করেই মোকাম থেকে রুপালি ইলিশ যেন উধাও হয়ে গেছে।

এক কেজি ওজনের ইলিশের দাম ২ হাজার ৫০০ টাকা। চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। বাঙালির চিরায়ত বর্ষবরণের ঐতিহ্য পান্তা ইলিশ। ইলিশ ছাড়া বাংলা বর্ষবরণ অনেকের কাছে অকল্পনীয়। তাই বর্ষবরণের দিন ইলিশের চাহিদা থাকে ব্যাপক। মানুষ সব সময় রকমারি খাবার খেতে পছন্দ করে। কিন্তু বৈশাখের দিনে বাঙালির প্রত্যাশা থাকে পান্তা ইলিশ। আর সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরাও। এরইমধ্যে ইলিশের দাম বেড়ে গেছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশাখ আসার আগ পর্যন্ত ইলিশের দাম ও চাহিদা আরও বাড়বে। বিক্রেতারা জানান, বৈশাখ যত এগিয়ে আসছে, ইলিশের দাম তত বাড়ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া গেলেও এ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকা বা তার চেয়েও বেশি দামে। রাজধানীর মাছের আড়ত সোয়ারীঘাট, কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে সব ধরনের ইলিশের কদর বেড়েছে। যদিও এখন ইলিশের মৌসুম নয়। তাই বছরের অন্য সময়ের তুলনায় বর্তমানে ইলিশের দাম কিছুটা বেশি। সংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী অনেক ব্যবসায়ীই এখন ইলিশ মজুতও করেছেন। মজুতের ইলিশ পহেলা বৈশাখের দুই থেকে তিন দিন আগে তারা বাজারে ছাড়বেন। পুরান ঢাকার পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী মো. উজ্জ্বল জানান, ঢাকা শহরের সবচেয়ে পুরানো মাছের আড়ত হচ্ছে সোয়ারীঘাট। তবে বর্তমানে কারওয়ানবাজার, যাত্রাবাড়ী শনির আখড়ায় আড়ত হওয়াতে ভাগ হয়ে গেছে। সোয়ারীঘাটে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে এখনও সাধ্যের মধেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ বাজারে গেল সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের হালি ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৭০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম সাইজের একটি ইলিশ ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও সে ইলিশ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৬০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এক কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, আমরা বর্তমানে নদীতে গিয়ে সরাসরি জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে আনছি। কিন্তু সেখানেও মাছের যথেষ্ট জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে মাছের দামও তারা বেশি রাখছেন। আর ক্রেতার চাহিদা বেশি থাকায় বেশি দাম দিয়ে মাছ আনছি। এ কারণেই খুচরা বাজারে ইলিশের দাম বেশি। এটা হয়তো বৈশাখের আগ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কারওয়ানবাজারে গেল সপ্তাহে ৩০০ গ্রাম সাইজের ইলিশের হালি ছিল ৫০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। ৫০০ গ্রাম সাইজের একটি ইলিশ ৬০০ টাকায় বিক্রি হলেও সে মাছ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া এক কেজি সাইজের ইলিশ ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরিশাল : হঠাৎ করেই মোকাম থেকে রুপালি ইলিশ যেন উধাও হয়ে গেছে। অল্প কিছু পাওয়া গেলেও এর দাম এরই মধ্যে মণপ্রতি ১ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। অথচ গেল সপ্তাহেও দাম ছিল সহনীয়। ইলিশের বাজারে এমন অস্থিরতার জন্য বৈশাখের প্রভাবকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে পাইকারদের মাধ্যমে ধনাঢ্যরা বড় সাইজের ইলিশ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করেছেন। বরিশাল মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজিত দাস জানান, মোকামে ইলিশ নেই। শুক্রবার মাত্র ৫০ মণ ইলিশ উঠেছে। দামও বেড়েছে বেশ। ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা সাইজের প্রতি মণ ইলিশ শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ৭০ হাজার টাকা দরে। ৬০০ গ্রাম থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনের বিক্রি হয়েছে ৫২ হাজার টাকা মণ। আধা কেজি ওজনের ইলিশ মণ প্রতি ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কেজি সাইজের ইলিশ কম। এগুলো ঢাকায় পাইকাররা পাঠাচ্ছেন। তাছাড়া অভিযান থাকায় নদীতে নামতে পাড়ছেন না জেলেরা। এ ব্যাপারে বরিশাল মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, হঠাৎ করে ইলিশের সরবরাহ কমে গেছে। এখন নগরীতে এক কেজির ওপরের ইলিশ প্রতি মণ ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলেন, অভয়াশ্রমগুলোতে মাছ ধরা বন্ধ। বড় ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় পাইকারদের মাধ্যমে তা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তা বিমল পাইকারদের বরাত দিয়ে বলেন, তারা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। তিনি বলেন, এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ইলিশ পাঠাতে বিধিনিষেধ না থাকায় তারাও কিছুই বলতে পারছেন না। চাঁদপুর : পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে জেলেরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কারেন্ট জাল নিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠায় ধরা পড়ছে জাটকা ইলিশ ও বড় আকারের ইলিশ মাছ।  অনেক দাদনদার জেলেদের দিয়ে ইলিশ আহরণ করে সে ইলিশ ফ্রিজিং করে রাখছেন বেশি দামে বিক্রির জন্য। এ উপলক্ষে জেলেরাও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নদীতে নেমে পড়েন। বৈশাখ ছাড়া যে ইলিশ মাছ বিক্রি হয় ১ হাজার টাকায়, সেই ইলিশ বৈশাখ উপলক্ষে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করেন জেলেরা। একাধিক সূত্র জানায়, দেশে মাছের চাহিদা পূরণে সরকার প্রতি বছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জাটকা ধরা, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ করে। কিন্তু হানারচর, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন, পুরানবাজার রনাগোয়াল এলাকাসহ পদ্মা-মেঘনার বিভিন্ন স্থানে কোনো অভিযান না থাকায় এসব জায়গায় চলছে জাটকা নিধনের মহোৎসব।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − one =