উৎপাদকরা সিন্ডিকেট করে রডের দাম বাড়িয়েছে

0
603

উৎপাদকরা সিন্ডিকেট করে রডের দাম বাড়িয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে অভিযোগ উঠেছে। একজন সংসদ সদস্য চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দেশে হঠাৎ করে রডের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, ঠিকাদাররা অনেক জায়গায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। নির্বাচনী বছরে মালিকরা সিন্ডিকেট করে উন্নয়ন সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি করে সরকারের উন্নয়ন ব্যাহত করার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটির বৈঠক হয়।

কমিটির সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বৈঠকে উপস্থিত না থাকলেও রডের দাম নিয়ে সভাপতি তাজুল ইসলাম চৌধুরী বরাবর চিঠিটি পাঠান। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, গত ২৯ মার্চ ঢাকায় ৬০ গ্রেডের এমএস রড টনপ্রতি ৭১ হাজার টাকা থেকে ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, যার এক সপ্তাহ আগে দর ছিল ৬২ হাজার থেকে ৬৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে ৪০ গ্রেডের এমএস রডের টনপ্রতি দর হচ্ছে ৫৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫২ হাজার থেকে ৫৩ হাজার টাকা। বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সংসদীয় কমিটি আলোচনা করেছে। কমিটির পক্ষ থেকে বাণিজ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি সুরাহার জন্য বলা হয়েছে।’ সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বাণিজ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে রডের দাম কমানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন। দাম বৃদ্ধির জন্য নির্মাণ খাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) নেতারা ব্যবসায়ীদের দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র পরস্পর যোগসাজশ করে রডের দাম বাড়িয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার ও ১২ দফা দাবি : বৃহস্পতিবার রড উৎপাদনকারীদের দুটি সংগঠন বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাদের দাবি, উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় রডের দাম বেড়েছে। সরকার কিছু নীতিগত উদ্যোগ নিলে রডের দাম টনপ্রতি অন্তত পাঁচ হাজার টাকা কমানো সম্ভব।’ এ ব্যাপারে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করে তারা বলেন, এগুলো পূরণ করা হলে দাম কমানো সম্ভব। উৎপাদকদের দাবিগুলোর মধ্যে ৫টি স্বল্পমেয়াদি ও ৭টি দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্পমেয়াদি দাবিগুলো হল- সরকারের এক্সেল লোড আদেশ শিথিল করা। জাহাজ থেকে স্টিল পণ্য অফডকে না পাঠিয়ে সরাসরি বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া, কাঁচামালে স্ক্র্যাপের ওপর আরোপিত সিডি ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা এবং এআইটি ৮০০ থেকে কমিয়ে ৪০০ টাকা নির্ধারণ এবং কেমিক্যাল ফেরো এলয়েসের ওপর আরোপিত এআইটি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ হাজার ২০০ টাকা এবং আরডি ১৫ শতাংশ প্রত্যাহার। ব্যাংক সুদের হার হ্রাস। গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা। দীর্ঘমেয়াদি দাবিগুলো হচ্ছে- এক্সেল লোড আদেশটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্থগিত রাখা। নৌপরিবহন ব্যবস্থাকে গতিশীল করা ও ট্যাক্স বিরতি প্রদান। সরকারি-বেসরকারিভাবে দীর্ঘ দূরত্বের (মেঘনা ঘাট থেকে মাওয়া, দৌলতদিয়া, গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী ফেরি ঘাট পর্যন্ত) ট্রাক ফেরি সার্ভিস চালু করা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও পর্যন্ত নদীপথে পরিবহন খরচ কমিয়ে আনা এবং ৬ মাসের মধ্যে সার্ভিস চালুকরণের শর্তসাপেক্ষে ৫ বছরের জন্য সেবা প্রদানকারীদের আয়কর ও ভ্যাটমুক্ত রাখা। একই সঙ্গে কনটেইনার জাহাজসহ বাল্ক পণ্য বহনকারী ৫ হাজার টনের ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার করা। কমলাপুরের আইসিডি গাজীপুরে স্থানান্তর করা অথবা গাজীপুরে নতুন একটি আইসিডি স্থাপন করা। চট্টগ্রাম বন্দর ও ঢাকার মধ্যে কনটেইনার ট্রেন সার্ভিস বৃদ্ধি করা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালামাল অফডকে না পাঠিয়ে সরাসরি বন্দর থেকে ডেলিভারি দেয়া। বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ রি-রোলিং মিলস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ স্টিল মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আমদানি ব্যয়, উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় রডের দাম বেড়েছে। দাম বৃদ্ধির নেপথ্যে কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব নেই। মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববাজারে রডের কাঁচামালের মূল্য টনপ্রতি ৩১২ ডলার থেকে ৪২৭ ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। টাকার হিসাবে বেড়েছে ৯ হাজার ৮৯২ টাকা। এখানেই বৃদ্ধি ঘটেছে ৩৭ শতাংশ। এছাড়া কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে ডলারের মূল্য ৮০ থেকে বেড়ে ৮৪ টাকা হয়েছে। এতে করে প্রতি টনে খরচ বেড়েছে ১ হাজার ৭০৮ টাকা। অন্যদিকে সরকার কর্তৃক এক্সেল লোড আইন প্রবর্তনের কারণে প্রতি টন রডের পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮০ টাকা। কেমিক্যাল (স্পঞ্জ আয়রন ও ফেরো অ্যালয়েজ) দাম বৃদ্ধির কারণে প্রতি টনে বেড়েছে যথাক্রমে ১৫১৯ ও ৪৭০ টাকা। সে সঙ্গে দফায় দফায় গ্যাস, বিদ্যুতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিল্প বাঁচাতে রডের দাম বাড়ানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × five =