লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত নয়

0
439

বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করা হবে আজকের বাজেট প্রস্তাবে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। প্রধান খাত হিসেবে বরাবরের মতো ভ্যাট আদায়ে জোর দেওয়া হবে। সামান্য কমিয়ে দ্বিতীয় খাত আয়কর, সবচেয়ে কম নির্ধারণ করা হয়েছে শুল্কের পরিমাণ।

আজ বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব ঘোষণা করবেন। এতে ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকবে প্রায় এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা, আয়কর প্রায় এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকা এবং শুল্ক প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। গত মে মাসে এনবিআর দুই লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা সামনে রেখে বাজেট প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। এনবিআর বাজেট প্রস্তুতির কমিটির কর্মকর্তারা জানান, শেষ সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আয়কর আদায়ের পরিমাণ ৯৭ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়। এতে মোট লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দুই লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা হয়। বর্তমান সরকারের শেষ বাজেটে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলেও নতুন করারোপ নেই বললেই চলে। বরং অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বহুদিনের দাবি মেনে কর ছাড়ের প্রস্তাব থাকছে। তবে সম্পদশালীদের ওপর নজরদারি কমছে না। বহুল ব্যবহৃত ক্ষেত্রে চলতিবারে বহাল থাকা কর প্রত্যাহার বা কমানো হচ্ছে না। দেশব্যাপী কর প্রদানে সক্ষম ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে উদ্যোগ আগামীতেও থাকছে। তবে ছাড় দিয়েও আগামীতে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, নির্বাচনকালীন বাজেট হওয়ায় কর আরোপের পরিবর্তে ছাড় দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে, যা যুক্তিসংগত নয়। কোন কৌশলে তা বাড়ানো হবে সে বিষয়টিও স্পষ্ট নয়। ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনা করে ক্ষেত্রবিশেষে করপোরেট করের হার কমানো হচ্ছে। সমন্বয় করা হতে পারে ন্যূনতম করের হার। পুঁজিবাজারের গতিশীলতা আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই খাত বা ক্ষেত্র থেকে আইনি জটিলতায় বারবার কর আদায় থেকে এনবিআর সরে আসতে কৌশল নিচ্ছে। জরিমানা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বহাল থাকছে। অর্থপাচার রোধে কঠোর আইন প্রয়োগে কৌশল থাকছে। সম্পদশালীদের ওপর ধার্যকৃত সারচার্জ বহাল থাকছে। কর প্রদানে সক্ষম অথচ কর দিচ্ছে না এমন ব্যক্তিকে করজালের আওতায় আনতে প্রতিটি উপজেলায় কর কার্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ আগামী অর্থবছরেও চলমান থাকছে। আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে প্রযুক্তিনির্ভরতায় কর আরোপের চেষ্টা থাকছে। ই-পেমেন্ট, ই-রিটার্ন, ইটিআইএন পদ্ধতি ব্যবহারে আরো জোর চেষ্টা হচ্ছে। করদাতাদের এসব পদ্ধতি ব্যবহারে অভ্যস্ত করতে কৌশল নেওয়া হচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে এফবিসিসিআইর প্রস্তাব না মেনে কয়েক অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে করপোরেট কর গ্রহণযোগ্য হারে কমিয়ে আনতে যুক্তি তুলে ধরা হবে। করপোরেট করের সব হারে পরিবর্তন আনা হচ্ছে না। ৩৭.৫ শতাংশের নিচে হারে পরিবর্তন আনা হবে না। এ সীমার ওপর থাকা হারে কিছুটা সংশোধন করা হবে। বিশেষভাবে মোবাইল ও সিগারেট কম্পানির করহারে কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। করপোরেট করহার কমানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘কিছু কিছু কর আছে, যা কমালে রাজস্ব আদায় কমে না, বরং বাড়ে। করপোরেট করহার এমন এক পদক্ষেপ, যা আগামী অর্থবছরে কমানো হলে অর্থনীতির অনেক খাতে গতিশীলতা আসবে। ফলে নিশ্চিত রাজস্ব আদায় বাড়বে।’নতুন নতুন কর আরোপ করেও চলতি অর্থবছরে আয়কর খাতে রয়েছে ঘাটতি। এমন প্রেক্ষাপটেও আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরুতে আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৪৪ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ৩৭ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ঘাটতি আছে ছয় হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। এ সময় পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ১৫.৮৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২.৭২ শতাংশ। এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, ‘নতুন অর্থবছরে নির্বাচনকালীন বাজেট হওয়ায় নতুন কর আরোপ করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব না হওয়ারই কথা। অথচ লক্ষ্যমাত্রা চলতিবারের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে। চলতিবারে অনেক খাতে নতুন কর আরোপ করেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে না বলেই জানা যায়। এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত যুক্তিসংগত নয়।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − one =