একটি টেন্ডার কেলেংকারি নিয়ে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে (ইইডি) তোলপাড় চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজের নামে ১৪ কোটি টাকা লোপাট ও অপচয়ের আয়োজন করেছিল সংঘবদ্ধ চক্র। তবে একজন কর্মকর্তা অপকর্মে সহযোগী হতে রাজী না হওয়ায় সব আয়োজন ভেস্তে গেছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ইইডির প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার মদদে ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী এ ঘুপচি টেন্ডারের আয়োজন করে। রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কাজের নামে টাকা লোপাটের প্রক্রিয়াও চলে অভিনব কায়দায়। এক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক গভঃ প্রকিউরমেন্ট (ইজিপি) রুলস অমান্য করে অখ্যাত আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পরে গোপন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় ১৫০ গ্রুপের এই কাজ প্রধান প্রকৌশলী হানজালার নিকটাত্মীয় এবং পছন্দের ঠিকাদারদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করা হয়।
কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করায় তা অনুমোদন করেননি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। বরং টেন্ডার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সংক্রান্ত নথি তলব করে গত ১২ জুন ঢাকা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আকতারুজ্জামানকে চিঠি দেন। তবে অদ্যাবধি চিঠির কোনো জবাব দেননি নির্বাহী প্রকেশৗলী। বরং টেন্ডার অনুমোদন না করায় সংঘবদ্ধ চক্রের টার্গেট হন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। প্রধান প্রকৌশলী হানজালা, নির্বাহী প্রকৌশলী আকতারুজ্জামানসহ সুবিধাভোগী ঠিকাদাররা দফায় দফায় বৈঠক করে। সর্বশেষ গত ১৮ জুন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেনকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠান হানজালা। ওইদিন প্রধান প্রকৌশলীর কক্ষে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও সুবিধাভোগী ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে বিতর্কিত টেন্ডার অনুমোদনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে নানামুখী চাপ দেওয়া হয়। এমনকি কয়েকজন ঠিকাদার হুমকিমূলক বক্তব্য রাখেন। তবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অন্যায়ে সায় না দেবার ব্যাপারে অনড় থাকায় সেদিন কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। এর পর থেকে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা ভবনে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। উল্লেখ্য, প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানজালার চাকুরির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট। পরে বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার সনদ বলে মেয়াদ বাড়ে এক বছর। অতকবে মেয়াদ শেষ হবার আগেই ২০১৬ সালের ২০ জুন তিনি দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। সে হিসেবে চলমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ আগস্ট ২০১৮। এদিকে জনৈক সাহেব আলীর রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে ( রীট নং ৪৯৩৪/২০১৭) বিচারপতি মাহমুদ হোসাইন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি হোসাইন হায়দারকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ গত ৩০ জুন ২০১৭ প্রধান প্রকৌশলীর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ স্থগিত করেন। বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টের ফুল বেঞ্চে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।