তাসমিয়া জেসমিন ঃ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগ গুলোতে ঠিকাদারি, চিকিৎসকদের ইচ্ছানুযায়ী বদলি এবং অপছন্দের চিকিৎসকের বদলি ঠেকানোসহ যাবতীয় অভিযোগ বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে। তবে কেউ তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ করেন না। এর কারণ হিসেবে একাধিক চিকিৎসক এবং হাসপাতাল কর্মচারী কর্মকর্তা রা বলেন, যে এটা করবে তার পরিণতি খুব খারাপ হতে পারে। বদলি হয়ে যেতে পারেন মফস্বল কোনো এলাকায়। তাই সবাই চুপ করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনও ফয়সাল ইকবালের দিকনির্দেশনার বাইরে প্রশাসনিক কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম সিদ্দিকী হেসে এড়িয়ে যান। ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ, তিনি কখনও ককোন রোগী দেখেছেন ববলে কেউ বলতে পারে না। ততার একটা নাম মাত্র চেম্বার রয়েছে চট্টগ্রাম মেহেবাগে কিন্তু রোগী দদেকেন ততার ভাড়াটে ডাক্তার। তিনি সব সময় ভুল চিকিৎসা করা চিকিৎসকদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং উল্টো রোগীর অভিভাবকদের হুমকি দেন দেলোয়ারা বেগম নামের এক অভিভাবক চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে গত সোমবার এক সমাবেশে প্রকাশ্যে এ অভিযোগ জানান। ২০১২ সালের ৩০ মে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আমিনুল ইসলামের মলদ্বারে অস্ত্রোপচার করেছিলেন ডা. সুরমান আলী ও জাকির হোসেন। এর পর আমিনুল সেখানে ব্যথা অনুভব করলে তারা দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে রেডিওলজিস্ট দেবাশীষ দত্ত অস্ত্রোপচার করে সেখান থেকে সুঁই বের করে আনেন। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে ২০১৩ সালের ২৮ জানুয়ারি ডা. সুরমান আলী ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করেন আমিনুলের মা দেলোয়ারা বেগম। মামলাটি সর্বশেষ হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। নিন্ম আদালতে ডা. সুরমান আলী ও জাকির হোসেনকে খালাস দিলেও উচ্চ আদালত তাদের শাস্তি দিতে অভিযোগ গঠনের জন্য নিন্মনি আদালতের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। দেলোয়ারা বেগমের অভিযোগ, সুরমান আলী ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা চলাকালে ডা. ফয়সাল ইকবাল তাকে নিজ চেম্বারে ডেকে পাঠান। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য দেলোয়ারা বেগমকে বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। ওই নারী তাতে অপারগতা প্রকাশ করলে নিজেকে তিনটি হত্যা মামলার আসামি বলে দাবি করেন এর পরিণতিও খুব খারাপ হবে বলে জানিয়ে দেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে রোগীদের খাবার সরবরাহ থেকে শুরু করে ক্যামিকেল,কাগজপত্র,আসবাবপত্র,ক্লিনার সাপলাই,যাবতীয় যন্ত্রপাতি সব কটি ঠিকাদারী নিয়েছেন ফয়সাল ইকবাল। তবে নিজ নামে না নিয়ে আত্মীয়দের সাহায্যে সেই কাজ পরিচালনা করেন তিনি। ডা. ফয়সাল ইকবাল স্বয়ং বলেছেন, ‘আমার নামে কোথাও কিছুই নেই। কেউ প্রমাণ করতে পারবেন না।’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে দরপত্র দেওয়ার সময় এমন কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, যাতে একটি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ অংশ নিতে না পারেন। চমেক হাসপাতালে টেন্ডার সে্কশনে তার খাস নাঈম নাজির,২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে এক্যাউন্ট সেকশনে বহুল আলোচিত অফিস সহকারী অদক্ষ অপরাধী ফোরকান।,এভাবে প্রতিটি হাসপাতাল ক্লিনিকে তার নিজস্ব লোকজন বহাল রয়েছে। বহিরাগত যগ্যেতা সম্পন্ন ঠিকাদারগণ কোন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হাসপাতাল গুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারেনা ঠিকাদার দেলোয়ার এবং নাঈম ছাড়া। তারা দুজনই বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে কাজ করে থাকেন। এদিকে গত ১ জুন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়। সংগঠনের সভাপতি নাজিমুদ্দিন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগে বলা হয়, ডা. ফয়সাল ইকবাল ইতোপূর্বে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করার হুমকি দেওয়ায় তা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। আদালত তাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা সত্ত্বেও আগের মতোই রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের হুমকি দেন এবং তিনি সাংবাদিকদের দুই টাকার টোকাই বলে থাকেন। । তার কাছে টাকা দিলেই জামায়াতের লোক হয়ে যান আওয়ামী লীগ। এমনকি চিকিৎসকের অবহেলায় কোনো হাসপাতালে রোগী মারা গেলে তিনি লাখ লাখ টাকা নিয়ে মধ্যস্থতা করে থাকেন।। শিশু রাইফা খান মারা যাওয়ার পর গত ৩০ জুন রাতে চকবাজার থানায় তিনি পুলিশের সামনে সাংবাদিকদের সারাদেশে চিকিৎসা না দেওয়ার হুমকি দেন। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলাদেশে ৪৪ হাজার চিকিৎসক আছেন। তাদের কেউই বলতে পারেন না, চিকিৎসা বন্ধ করে দেবেন। তবে ডা. ফয়সাল ইকবাল সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে চাকুরি সংক্রান্ত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।’ এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে ডা. ফয়সাল ইকবাল বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগই মনগড়া, কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই। দরপত্রের অভিযোগও কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।’ থানায় গিয়ে সাংবাদিকদের চিকিৎসা না দেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে সেখানে আমার এক সহকর্মী বলেছেন, সাংবাদিকরা যদি এ রকম করতে থাকেন তা হলে তাদের চেম্বার আর ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া যাবে না। তাদের সরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতে হবে।’