সোনাইমুড়ীর চাঞ্চল্যকর প্রবাসী শাহ আলম আরজু হত্যা: পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বাদীর নারাজি

0
564

ইয়াকুব নবী ইমন:
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার জুনদপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর প্রবাসী শাহ আলম আরজু ওরফে আজমি হত্যা কান্ডের ঘটনায় পুলিশের চুড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দিয়েছেন মামলার দাবী বাবলুৃ আহমদ। মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালীর ৩ নং সিনিয়র বিচারিক ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে এই নারাজি দেন। আদালত নারাজিপত্রটি গ্রহন করে শুনানীর জন্য আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর তারিখ ধার্য করেছেন।

জানা গেছে, জুনদপুর গ্রামের শাহ আলম আরজু দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার সুবাধে তারই ভাগিনা রনির সাথে স্ত্রী সিমা আক্তার পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি আরজু জানতে পেরে দেশে চলে আসেন। তিনি দেশে এসে স্ত্রীকে নানা ভাবে বুঝিয়েও পরকিয়া থেকে ফেরাতে পারেননি। এদিকে মামা আরজু হঠাৎ দেশে আসায় ভাগিনা রনিও তার উপর চরম ক্ষুব্দ হয়। তাই পথের কাটা সরাতে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারী রাতে স্ত্রী সিমা আক্তার, ভাগিনা রনি ও তার কয়েক জন সহপার্টি আরজুকে হত্যা করে অসুস্থ হয়ে মারা গেছে বলে প্রচার চালায়। এর পর দিনই নিহতের হত্যাকারীরা এলাকাবাসীকে না জানিয়ে কৌশলে ভাড়াটে লোকজন নিয়ে তড়িঘড়ি করে আরজুর লাশ বাড়ির সামনের দাপন করে। বিষয়টি এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা সোনাইমুড়ী থানা পুলিশকে জানায়। থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার বা অভিযুক্তদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের কোন উদ্যেগ না নেয়ায় এলাকাবাসী হতাশ হয়। তারা আরজু হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলন ও ফেসবুকে ব্যাপক লেখালেখি করে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসীর পক্ষে ইউপি সদস্য বাবলু আহমেদ বাদী হয়ে নিহতের স্ত্রী সিমা আক্তার ও পরকিয়া প্রেমিক ভাগিনা রনিসহ ৩ জনকে আসামী করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সোনাইমুড়ী থানা পুলিশকে এফআইআর হিসেবে গ্রহনের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে থানা পুলিশ ১৭ ফেব্রুয়ারী মামলাটি গ্রহন করে। মামলার তদন্তের দায়ীত্ দেয়া হয় থানার ওসি(তদন্ত) ইমদাদুল হককে। তিনি মামলার সঠিক তদন্ত ও আসামীদের গ্রেফতারে গড়িমসি করলে গত ২২ ফেব্রুয়ারী বাদী নোয়াখালী পুলিশ বরাবরে একটি দরখাস্ত দেন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তা ওসি(তদন্ত) ইমদাদুল হককে সৎসনা করেন এবং পিবিআইকে তদন্তের দায়ীত্ব দেন। পিবিআই এর পরিদর্শক আসাদুজ্জামান মামলাটি দায়ীত্ব পাওয়ার পর আদালতের নির্দেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারী আরজুর লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেন। এদিকে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও ভিসেরা রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি এমন অজুহাত দেখিয়ে আসামীদের গ্রেফতারে অনিহা প্রকাশ করে। একপর্যায়ে বাদীকে কোন কিছু না জানিয়ে, সরেজমিন মামলার তদন্ত না করে এবং বিবাদীদের সাথে আতাত করে গোপনে মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি তদন্ত প্রতিবেদনে আসামীদের অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করেন। এতে এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন মামলার বাদি ও এলাকাবাসী।
মামলার বাদি ও ইউপি সদস্য বাবলু আহমদ বলেন, পুলিশের এমন আচরনে আমরা হতাশ। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পুলিশ এমন একটি মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তাই আমরা আদালতকে বিষয়টি জানিয়ে নারাজি দিয়েছি।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই এর পরিদর্শন আসাদুজ্জামান আসাদ।
অপরদিকে আরজু হত্যাকান্ডের পর থেকে পালাতক স্ত্রী সিমা আক্তার ও ভাগিনা রনি পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের পর বেরিয়ে এসেছে। বর্তমানে তারা নির্ভয়ে এলাকায় ঘুরাফেরা করছে। তারা ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে মামলার বাদি ও এলাকার প্রতিবাদকারীদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্থানীয়দের ভাষ্য, যদি তারা আরজুকে হত্যা না করতে তাহলে পালিত ছিলো কেন?
এমতাবস্থায় আরজু হত্যা রহস্য উদঘাটন ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছে স্থানীয়রা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × 2 =