চামড়াশিল্পের টেকসই উন্নয়ন এবং রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে গবাদি পশু আমদানির অনুমতি

0
653

চামড়াশিল্পের টেকসই উন্নয়ন এবং রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে গবাদি পশু আমদানির অনুমতি ও পশুপালনে নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন চামড়াশিল্প মালিকরা। ঢাকার হাজারীবাগ থেকে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে সব ট্যানারি স্থানান্তর হলে উৎপাদনক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে চার গুণেরও বেশি হবে। তাই এ ব্যাপারে এখনই সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন।

সঠিকভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২১ সাল নাগাদ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশ ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন বর্গফুট চামড়া উৎপাদিত হচ্ছে। সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে সব ট্যানারি স্থানান্তর হলে উৎপাদনক্ষমতা বর্তমানের চেয়ে চার গুণেরও বেশি হবে। চামড়া শিল্প নগরীতে আধুনিক ক্যাপিটাল মেশিনারিজ স্থাপন করা হচ্ছে। এ জন্য যে পরিমাণ কাঁচা চামড়া প্রয়োজন হবে, তা দেশীয় গবাদি পশু থেকে পাওয়া সহজ হবে না। এ অবস্থায় প্রায় ৯০০ মিলিয়ন বর্গফুট কাঁচা চামড়া বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহিন আহমেদ  বলেন, সাভারে ট্যানারি শিল্প নগরী গড়ে ওঠায় উৎপাদনক্ষমতা বেড়েছে তিন গুণ। এখন ট্যানারিশিল্পে কাঁচামাল সংকট দেখা দিচ্ছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়াতে হলে দেশের অভ্যন্তরে গবাদি পশুর উৎপাদন-পালন বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গবাদি পশু এবং কাঁচা চামড়া আমদানি সহজ করতে হবে। অন্যথায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে না। তিনি আরো বলেন, দেশের ট্যানারিগুলো কোরবানির ঈদের ওপর ভিত্তি করে টিকে আছে। সারা বছর তেমন বেশি কাঁচা চামড়া পাওয়া যায় না। ট্যানারিশিল্পের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গবাদি পশু আমদানির প্রয়োজন হবে। এতে দেশে গবাদি পশুর মাংসের চাহিদাও পূরণ হবে। দেশে গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধির কারণে এরই মধ্যে কাঁচামাল (কাঁচা চামড়া) সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এই সংকট থেকে অতি দ্রুত উত্তরণের জন্য প্রয়োজনে গবাদি পশু আমদানির অনুমতি দেওয়ার দাবি উঠেছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি গবাদি পশু পালনের উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ ও সরকারি সহযোগিতা নিশ্চিতকরণে সঠিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। চামড়াশিল্প মালিকরা জানান, দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি আয়ের খাত চামড়া সেক্টর থেকে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে রপ্তানি আয় হয়েছিল প্রায় এক হাজার ২৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী পাঁচ বছরে এই আয় পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে এই সেক্টরের শিল্পদ্যোক্তারা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। এখন চামড়া রপ্তানি কমলেও জুতা ও অন্যান্য চামড়াজাত দ্রব্যের রপ্তানি বেড়ে চলেছে। চামড়াশিল্প মালিকরা আরো জানান, এরই মধ্যে সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে অবকাঠামো ও কারিগরি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই খাতে আরো বিনিয়োগ প্রয়োজন। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব হলে পরিবেশবান্ধব চামড়াশিল্প গড়ে উঠবে বলে আশা করেন শিল্প মালিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিল্প মালিক বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও চামড়াশিল্প টিকে আছে। এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ রপ্তানিমুখী এই শিল্পের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’বাংলাদেশ ফিনিস লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুট ওয়ার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার এম আবু তাহের  বলেন, বিভিন্ন কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। রপ্তানিকারকদের উৎসাহিত করতে এই খাতে ভর্তুকি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। চামড়া রপ্তানিকারকরা জানান, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে মোট রপ্তানির পরিমাণ ২২.০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৮০.১৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seven − 4 =