দুর্নীতির কারণে বন্ধ হয়ে গেল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র

0
840

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির  ও খামখেয়ালিপনার কারণে অবশেষে বন্ধ হলো দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গতকাল সকাল থেকে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। কয়লা দিয়ে এ কেন্দ্রে উৎপাদন হতো ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের আটটি জেলা বিদ্যুৎ সঙ্কটের মধ্যে পড়বে। বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল হাকিম বলেন, কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড কয়লা সরবরাহ করতে না পারায়, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে উত্তোলনকৃত কয়লার মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার মে. টন কয়লা ঘাটতি রয়েছে। কাগজে কলমে এই কয়লা থাকার কথা থাকলেও দৃশ্যমান নয়, যা ডিজিটাল দুর্নীতির নামান্তর। কয়লার হিসাব মেলাতে না পারার কারণে গত ১৯ জুলাই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কোম্পানির সচিব (জিএম প্রশাসন)কে প্রত্যাহার করেছে, একই কারণে মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন ও উপ মহাব্যবস্থাপক (স্টোর)কে সাময়িক বহিষ্কার করেছে। তবে খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, গত ১১ বছরে এক কোটি ১০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে সিস্টেম লসের পরিমাণ এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা। এ দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নর্দান ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড নেসকো-এর প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার বলেন, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রতিদিন ৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন, এর মধ্যে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে, কিন্তু কয়লা সঙ্কটের কারণে গত এক মাস থেকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দু’টি ইউনিট বন্ধ থাকায়, সেখান থেকে মাত্র ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আসত। এই কারণে গত এক মাস থেকে বিদ্যুতের কিছু ঘাটতি দেখা দিয়েছে, এখন পুরোপুরি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ায় এই ঘাটতি আরো বাড়ল। তিনি আরো বলেন, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হলেও বাইরে থেকে বিদ্যুৎ এনে চাহিদা পূরণ করা হবে, তবে এতে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, সেই সাথে লোডশেডিং হতে পারে। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান বলেন, আগামী আগস্ট মাসের মধ্যে নতুন ফেজ থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু হবে, কয়লা উত্তোলন শুরু হলেই কয়লার এই সঙ্কট থাকবে না বলে তিনি আশা রাখেন।

তদন্তে নেমেছে দুদক

পার্বতীপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তোলিত ‘কয়লার মজুদ কেলেঙ্কারি’র ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বেলা ২টা ৩০ মিনিটে দুদক দিনাজপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক বেনজির আহমেদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্তদল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি পরিদর্শন করে। তদন্তদলের অন্যরা হলেন : দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো: কামরুজ্জামান, সহকারী পরিদর্শক ওবায়দুর রহমান ও শাহজাহান আলী। তদন্তদলের প্রধান বেনজির আহমেদ বলেন, দুদক ঢাকা অফিসের নির্দেশে তিনি খনির কয়লা কেলেঙ্কারি তদন্তে এসেছেন। সরেজমিন প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, কয়লা মজুদের নথিপত্র অনুযায়ী খনির কোল ইয়ার্ডে যেখানে এক লাখ ৪৬ হাজার টন কয়লা মজুদ থাকার কথা। সে জায়গায় রয়েছে মাত্র এক থেকে দেড় টন কয়লা। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে কয়লা মজুদের নথিপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করা হয়েছে এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট নথিপত্র প্রস্তুত থাকার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ দিকে কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনা তদন্তে দুদকের ঢাকা অফিসের পরিচালক শামসুল আলমের নেতৃত্বে গতকাল বিকেলে তিন সদস্যের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্তদল গঠন করা হয়। তদন্তদলের অন্য সদস্যরা হলেন : দুদকের সহকারী পরিচালক এ এস এম সাজ্জাদ ও সহকারী পরিচালক মো: তাইজুল ইসলাম।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × 1 =