জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের তুলশীগঙ্গা ইউনিয়নে বিধবা ও বয়স্ক ভাতা বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুস্থদের পরিবর্তে সরকারি বরাদ্দের বিভিন্ন ভাতা বিত্তবানদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য নুরবানু খাতুন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই ইউনিয়নের দাশড়া মালিগাড়ি গ্রামের মৃত নওশের আলীর স্ত্রী করিমন নেছাকে বিধবা ভাতা দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু বিধবা হলেও করিমনের পরিবার বিত্তবান। গ্রামে নির্মাণ করা দৃষ্টিনন্দন পাকা দ্বিতল ভবনে বাস করেন করিমন। তাঁর ছেলে-মেয়ে থাকে জয়পুরহাট শহরে। গ্রামের বাড়িতে একাকী বাস করায় শফিকুল নামের একজন কেয়ারটেকারও রেখেছেন তিনি। এবারই তিনি প্রথম বিধবা ভাতা পেয়েছেন। করিমন জানান, এত দিন কেউ খোঁজ না নিলেও এবার নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তাঁর নামে বিধবা ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। আর সেই কার্ডে প্রথম ভাতা তুলে নিজেকে ধন্য মনে করছেন। একইভাবে বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়েছে জিয়াউল হক ও আবুল হোসেন নামের আরো দুজন বিত্তবানকে। যাঁদের বাড়ি দাশড়া কাজীপাড়া ও ফকিরপাড়া গ্রামে। জিয়াউল হকের দুই ছেলে চাকরি করছেন। নিজস্ব জমিতে চাষাবাদ করে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁর পরিবার অত্যন্ত সচ্ছল। আর আবুল হোসেন হজব্রত পালন করেছেন। তাঁর একমাত্র ছেলে আব্দুল কাদের মাদরাসার শিক্ষক। তাঁর নিজস্ব প্রায় ১০ বিঘা জমি আছে। এলাকায় তাঁরা বিত্তবান পরিবার হিসেবে পরিচিত। জিয়াউল হক ও আবুল হোসেন জানান, অভাব-অনটন না থাকলেও এবার চেয়ারম্যান তাঁদের নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন। সেই কার্ডে তাঁরা এবারই প্রথম টাকা পেয়েছেন। এ জন্য তাঁরা চেয়ারম্যানের কাছে কৃতজ্ঞ। অভিযোগকারী ওই ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য নুরবানু খাতুন বলেন, প্রকৃত উপকারভোগীদের বঞ্চিত করে বিত্তবানদের নামে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বিতরণ করা হয়েছে, যা নীতিমালা পরিপন্থী।এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা অফিস ও জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তবে তুলশীগঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাইকুল ইসলাম ওরফে লেবু মোল্লা অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, নীতিমালা মেনেই প্রকৃত দুস্থদের নামের তালিকা করে ভাতা বিতরণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কিছুটা ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতেই পারে। তবে অনিয়ম করা হয়নি। ক্ষেতলাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা গওসুল আজম বলেন, ভাতা প্রণয়নে প্রথমে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করে ইউনিয়ন কমিটি। সেই তালিকা বাস্তবায়নে আমরা কাজ করি। তবে নীতিমালাবহির্ভূত তালিকা হলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।