মসলার বাজার গেল বছরের চেয়েও অনেকটা চড়া

0
685

ঈদুল আজহা সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের মসলার চাহিদা বাড়তে শুরু করেছে। বিক্রেতারাও ইতিমধ্যে দোকানে বিভিন্ন পদের মসলা তুলেছেন। এক থেকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ছয় ধরনের মসলার দাম কেজিতে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদের বাজার ধরতে খুচরা ব্যবসায়ীরা যখন পাইকারি বাজার থেকে কেনাকাটা শুরুর প্রস্ততি নিচ্ছেন, তখনই এসব মসলার দাম বাড়ানো হয়েছে।

এবারের মসলার বাজার গেল বছরের চেয়েও অনেকটা চড়া। গেল বছর কোরবানির সময় খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে এলাচের দাম ছিলো প্রতি কেজি ১২শ থেকে ১৩শ টাকা। এবার তা মানভেদে এক হাজার ৫শ ৪০ থেকে সাড়ে এক হাজার ৬শ টাকা। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৩০। একই অবস্থা জিরার বাজারেও। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গোলমরিচ, জায়ফল, লবঙ্গের দাম। ঈদ সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ থাকলেও আমদানিকারকেরা বলছেন, মৌসুম শেষ হওয়ায় কিছু মসলার বিশ্ববাজার এখন চড়া। বন্দরে কনটেইনারজটের কারণে সময়মতো আমদানি করা মসলা হাতে আসছে না। এর পাশাপাশি চাহিদাও বেশি। এদিকে দাম বেশি হলেও চাহিদা অনুযায়ী যোগান রয়েছে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। আমদানি নির্ভর হওয়ায় দাম বাড়ার বিষয়ে কিছুই করার নেই বলছেন তারা। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, গত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৪০ লাখ কেজি এলাচ, দুই লাখ ৮০ হাজার কেজি জায়ফল, সোয়া এক কোটি কেজি দারুচিনি এবং দুই কোটি ৭২ লাখ কেজি জিরা আমদানি হয়েছে। কোরবানির ঈদের আগে বেড়ে যায় মাংস রান্নায় ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় সব মসলার চাহিদা। এ কারণে প্রতি বছর এ সময়ে মসলার দামও থাকে বাড়তি। এ বছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি। দেশের মসলার বাজার অনেকটাই আমদানি-নির্ভর। বেনাপোল হয়ে ভারত থেকে এবং চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মসলা আমদানি হয়। ভারত ছাড়াও চীন, পাকিস্তান, সিরিয়া, আফগানিস্তান, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম, গুয়েতেমালা, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মসলা আনেন আমদানিকারকরা। ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের মোট চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ মসলা জাতীয় পণ্যের জোগান দেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জভিত্তিক আমদানিকারকরা। ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু মসলার দাম বেড়েছে। আবার কিছু মসলার দাম রয়েছে স্থিতিশীল। গত সপ্তাহে গুয়েতেমালা থেকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি এলাচ পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫১০ টাকায়। চলতি সপ্তাহে যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৬০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫০ টাকা। গত বছর এ সময়ে এলাচের দাম ছিল প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এলাচ মূলত গুয়েতেমালা থেকে আমদানি হয়। কোরবানির ঈদে এলাচের মতো জিরার চাহিদা থাকে ব্যাপক। সিংহভাগ জিরা আসে ভারত থেকে। গত সপ্তাহে খাতুনগঞ্জে পাইকারী হিসেবে প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয়েছে ৩১৮ টাকায়। চলতি সপ্তাহে ১২ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৩০ টাকা। আগে সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে জিরা আসত। এখন আসে ভারত থেকে। ভারতে জিরার বুকিং মানি বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারে দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এছাড়া লবঙ্গের দামও ২০-৫০ টাকা বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ৯১০ টাকা দরে। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৬১ টাকায়। এক মাস আগেও পণ্যটির দাম ছিল ২১২ টাকা। এবার হাতেগোনা কয়েকজন আমদানিকারক দারুচিনি আমদানি করেছেন। এ কারণে সুযোগ বুঝে তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। রসুন ও আদার দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। পাইকারীতে রসুন ৪৫-৫০ টাকা এবং আদা ৫০-৫১ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোলমরিচের দাম গত বছরের চেয়ে কমেছে। গত বছর গোলমরিচ বিক্রি হয়েছিল ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে। এবার বিক্রি হচ্ছে ৬৫০-৭০০ টাকায়। এছাড়া কমেছে মরিচ ও হলুদের দাম। ভারতীয় লাল মরিচ গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ১৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ১৪০ টাকায় নেমে এসেছে। দেশি মরিচ ১৩৫ টাকা থেকে কমে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে হলুদের দাম ছিল প্রতি কেজি ১১০ টাকা। চলতি সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকায়। রাজধানীতে মসলার বাজার পরিস্থিতি: কারওয়ান বাজার মসলার দোকানে গিয়ে দেখা যায়, মসলার দাম বাড়েনি। বেড়েছে পোলাও চাল। সয়াবিন, ডাল, চিনি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। কারওয়ান বাজার সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা বলেন, প্রায় তিন চার মাস ধরে মসলার দাম একই রকম রয়েছে। তিনি বলেন, এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ টাকা কেজি, দারুচিনি ৩৮০ টাকা, জিরা ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ১৪০০ টাকা, গোল মরিচ ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মসলার ব্যবসায়ী জানালেন, আমরা ইতোমধ্যে বর্তমান দামের চেয়ে অনেক দামে মসলা ক্রয় করেছি, যা চলতি সপ্তাহের মধ্যে বাজারে আসছে। তখন দামে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে ইঙ্গিত দেন ওই ব্যবসায়ী। পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে বেড়েছে কেজিতে সাত টাকা পর্যন্ত। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশি পেঁয়াজের দামও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সব ধরণের পোলাও চালের। ঈদের মাত্র প্রায় দুই সপ্তাহ আগে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। তবে দেশি রসুনের দাম বাড়েনি। সয়াবিন ও আদার দাম রয়েছে আগের মতোই। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা যায়। শ্যামবাজার পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) অর্থাৎ কেজি ৫২ টাকা। চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ টাকা বস্তা (২০ কেজি) অর্থাৎ কেজি ৮০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) অর্থাৎ ৩৫ টাকা কেজি। ইন্দোনেশিয়া আদা বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ টাকা বস্তা (২০ কেজি) অর্থাৎ কেজি ৬৫ টাকা। চায়না ও মিশরীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি সেখানে দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের পেঁয়াজের আড়ত নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ভারতে পেঁয়াজের দামও কিছুটা বাড়তি। এ কারণে দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। তিনি জানান, এক সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩৫-৩৬ টাকা ছিল, যা ৪৬-৪৭ টাকা হয়ে গেছে। শ্যামবাজারের পাশেই সুত্রাপুর খুচরা বাজার। সেখানে দেশি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ভারতীয় পেয়াজ ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি। চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি, ইন্দোনেশিয়া আদা বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা আর চায়না ও মিশরীয় রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি। এদিকে রাজধানীতে প্রচুর পরিমাণে দেশি মাছের সরবরাহ বেড়েছে। দামও আগের চেয়ে কিছুটা কম। গত সপ্তাহে টেংরা মাছ (জীবিত) ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল তা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। বোয়াল মাছ (বড়) বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে। কোরাল ৪০০ টাকা, শোল ৩০০ টাকা, বাইম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা তারা বাইম ৪০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। পুটি, মলা ও কাচকি মাছ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায়। মাছ ব্যবসায়ী ফরিদ বলেন, ঈদে মাছের দাম বৃদ্ধি পাবে। আর সরবরাহ বেশি থাকলে দাম স্থিতিশীল থাকার কথা বলেন তিনি। তবে কাঁচা বাজারে তেমন দাম বাড়েনি। কাঁচা মরিচের দাম কমে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ছিল ১২০ টাকা কেজি। শসার দাম কমে ৮০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) হয়েছে। তিন দিন আগেও যা ছিল ১২০ টাকা পাল্লা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গরুর মাংস ৪৮০ টাকা, খাসি সাড়ে ৭০০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী ১৫০ টাকা, কর্ক ২৫০ টাকা, দেশি মুরগী ৪৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পোলাও চাল গত সপ্তাহে ৭৬ থেকে ৭৮ টাকা বিক্রি হলেও ৭ দিনের ব্যবধানে তা বেড়ে ৮৬ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − 14 =