এই হতদরিদ্র মানুষগুলোর দিকেই দৃষ্টি পড়ে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের

0
568

পরনে আধ ময়লা শার্ট, লুঙ্গি। সঙ্গে পুরনো ব্যাগ। জীর্ণশীর্ণ চেহারা। প্রায় একই রকম পাঁচ জন। তারা শ্রমজীবী। এই হতদরিদ্র মানুষগুলোর দিকেই দৃষ্টি পড়ে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের। তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে চক্রের সদস্যরা। এখানেই শেষ না, তাদের ঠেলে দিয়েছে মৃত্যুর দিকে। তাৎক্ষণিকভাবে আশপাশের লোকজন ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ঘটনাটি ঘটেছিল রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে। এরকম ঘটনা ঘটছে প্রায় প্রতিদিনই। কিছু দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে মৌসুম অনুসারে অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা বেড়ে যায়। মৌসুম শেষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে ঢাকার বাইরে অবস্থান নেয় তারা। মৌসুমে ঢাকায় অজ্ঞান পার্টির শতাধিক চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। এসব চক্রে সহস্রাধিক সদস্য রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রায়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হচ্ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা। গত সোমবার বিকালে মতিঝিলের আরামবাগের শতাব্দি বাস কাউন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে অজ্ঞান অবস্থায় এক যুবককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক ফিরোজ জানান, আনুমানিক ত্রিশ বছর বয়সী যুবকটি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়েছিল। তার পরনে ছিল শার্ট-প্যান্ট। পকেটে একটি মানিব্যাগ পাওয়া গেলেও এতে কোনো টাকা বা অন্য কোনো কাগজপত্র পরিচয় পাওয়া যায়নি। পুলিশের ধারণা কোনো একটি গাড়িতে করেই তিনি এখানে এসেছিলেন। পথিমধ্যে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। অজ্ঞান অবস্থায় ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। তার আগের দিন রোববারে অজ্ঞান অবস্থায় পাঁচ জনকে উদ্ধার করা হয়। ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্কের সামনের রাস্তায় পড়েছিল তারা। তেজগাঁও থানার এএসআই মাহবুব জানান, খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে পরদিন সোমবার তারা বাড়ি ফিরে যান। অজ্ঞান পার্টির শিকার আশরাফ, আবুল ফজল, আবুল হাসান, আবুল হাশেম, চান মিয়া এই পাঁচ জনের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার গোবিন্দপুরে। আবুল হাসানের স্বজন মুন্নি বেগম জানান, সাত-আট দিন আগে কাজের খোঁজে বরিশালে গিয়েছিল তারা। তারা মূলত শ্রমজীবী মানুষ। সেখানে ক্ষেতে-খামারে কাজ করেন। তবে সুবিধাজনক কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। লঞ্চে করে ঢাকার সদরঘাটে পৌঁছেন, পরে সদরঘাট থেকে বাসে উঠেন। এর মধ্যেই পাউরুটি কিনে খেয়েছিলেন তারা। তারপরই ঘটে ঘটনা। কিছুই মনে নেই তাদের। তাদের উদ্ধারকারী পুলিশ জানিয়েছেন, তাদের কাছে কিছুই পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে অজ্ঞান করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মুন্নি বলেন, অজ্ঞান পার্টির লোকজন গরিব মানুষের দিকে নজর দিয়ে দিলো। তারা দিনে আনে দিনে খায়। তাদের কাছে ১৬ হাজার টাকা, ব্যাগ ছিল। এর সবই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা লুটে নিয়েছে বলে জানান তিনি। মুন্নি বলেন, বাড়িতে ফিরলেও পুরোদমে স্বাভাবিক হতে পারেননি তারা। তার আগে গত মাসেও বিভিন্ন স্থানে এরকম ঘটনা ঘটেছে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় সম্প্রতি তা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মে মাসের শেষের দিকে অভিযান চালিয়ে ঢাকা থেকে অজ্ঞান পার্টির ৬১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছিল ডিবি। তাদের কাছ থেকে বিপুল লেক্সোটোনিল ও লুজিকাম নামের চেতনানাশক ট্যাবলেট, একাধিক মলম জব্দ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, নানা কৌশলে অজ্ঞান করা হচ্ছে। ডাবের মধ্যে সিরিজ দিয়ে চেতনানাশক ওষুধ ঢুকিয়ে তা নির্দিষ্ট ডাব বিক্রেতার কাছে রাখা হয়। টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে কৌশলে ওই দোকান থেকে ডাব খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়। একইভাবে চা, কফি, জুস, চটপটি, ক্রিম জাতীয় বিস্কুট, চকলেট ইত্যাদি খাবারের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে চেতনানাশক। অনেকক্ষেত্রে যাত্রী সেজে পাশে বসে গন্ধ শুঁকিয়ে বা নাকে মুখে মলম লাগিয়ে অজ্ঞান করার ঘটনাও ঘটছে। প্রায়ই অজ্ঞান পার্টির শিকার হচ্ছেন সিএনজি অটোরিকশা চালকরা। ঈদকে মৌসুম মনে করেই বাড়ে তাদের তৎপরতা। ঢাকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এলাকায় অবস্থান করে যাত্রী-পথচারীদের টার্গেট করে এই চক্র। এ বিষয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ওবায়দুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। প্রায়ই অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা গ্রেপ্তার হচ্ছে বলে জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

13 + eleven =